০৫ অক্টোবর ২০২৫, রবিবার, ০৪:১৭:১৩ পূর্বাহ্ন
পুলিশ হেফাজতে যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ, ফাঁড়ির ইনচার্জ গ্রেপ্তার
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৯-২০২৫
পুলিশ হেফাজতে যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ, ফাঁড়ির ইনচার্জ গ্রেপ্তার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার ছলিমগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে চুরির অভিযোগে চারদিন আটক থাকার পর পুলিশের হেফাজতে আব্দুল্লাহ (২৭) নামে এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। 


গত রোববার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।


এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ঘটনায় ওই পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।


নিহত আব্দুল্লাহ বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তেজখালী ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের বাসিন্দা আবুল মিয়ার ছেলে। 


জানা গেছে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর ছলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড়াইল গ্রামে ইকবাল হোসেনের বাড়িতে নগদ অর্থ চুরির অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনার জেরে ২৩ সেপ্টেম্বর সকালে সলিমগঞ্জ বাজারের সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে মুখে মাস্ক পরা অবস্থায় আব্দুল্লাহকে আটক করে স্থানীয় কয়েকজন। পরে তাকে মারধর করে গুরুতর আহত অবস্থায় ছলিমগঞ্জ অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়িতে সোপর্দ করা হয়।


পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগ, ফাঁড়িতে নেওয়ার পর আব্দুল্লাহর ওপর চলে অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। একপর্যায়ে তার শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে প্রথমে তাকে স্থানীয় অলিউর রহমান জেনারেল হাসপাতালে এবং পরে সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।


থানা সূত্র জানায়, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই ফাঁড়িতে আব্দুল্লাহকে চারদিন ধরে আটক রাখা হয়। এ সময় এলাকায় বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বাবু (রাব্বি) ও মাসুদ রানা নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে জেলা হাজতে পাঠানো হলেও, আব্দুল্লাহকে গোপনে ফাঁড়িতে আটকে রাখা হয়।


নিহতের ছোট ভাই শাকিল মিয়া বাদী হয়ে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) নবীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। 


মামলায় ছলিমগঞ্জ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মহিউদ্দিনসহ তবি মিয়া, আলামিন, আয়নাল হক এবং অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়, অভিযুক্তরা সম্মিলিতভাবে পরিকল্পিতভাবে আব্দুল্লাহকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেন।


ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ওবায়দুর রহমান জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মহিউদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় এবং পরে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলেও তিনি জানান।


এদিকে আব্দুল্লাহর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সোমবার সকালে স্থানীয় জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে ছলিমগঞ্জ ফাঁড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ প্রশাসন ফাঁড়িটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয় এবং এলাকায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়।


পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আব্দুল্লাহর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।


শেয়ার করুন