১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, বুধবার, ০৯:৩১:৫২ অপরাহ্ন
রাজশাহীর ঐতিহাসিক স্থাপনা রক্ষায় স্মারকলিপি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-১২-২০২৫
রাজশাহীর ঐতিহাসিক স্থাপনা রক্ষায় স্মারকলিপি

রাজশাহী নগরীর দরগাপাড়া মৌজায় অবস্থিত দিঘাপতিয়ার রাজা হেমেন্দ্র কুমার রায়ের ছেলে সন্দীপ কুমার রায়ের নির্মিত ঐতিহাসিক রাজবাড়ি এবং নগরের অন্যান্য heritage স্থাপনা সংরক্ষণের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারের সাথে সাক্ষাৎ করে রাজশাহীর নাগরিক সমাজ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনকর্মী এবং ইতিহাস–ঐতিহ্য গবেষকরা এ স্মারকলিপি দেন।


স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, রাজশাহী বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন নগরী। প্রাচীন বাংলার পুন্ড্র সাম্রাজ্যের অংশ হিসেবে এ অঞ্চল বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। বিখ্যাত সেন বংশের রাজা বিজয় সেনের রাজধানী বিজয়পুর ছিল বর্তমান রাজশাহীর অদূরে অবস্থিত। মধ্যযুগে রাজশাহী ‘রামপুর বোয়ালিয়া’ নামে পরিচিত ছিল, যার স্মৃতি এখনো বোয়ালিয়া থানার নামে বহমান।


স্মারকলিপিতে বলা হয়, দরগাপাড়ার ঐতিহাসিক বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন দিঘাপতিয়ার রাজা হেমেন্দ্র কুমার রায়ের ছেলে সন্দীপ কুমার রায়। জনশ্রুতিতে আছে, মহারানি হেমন্তকুমারী (১৮৬৯–১৯৪২) রাজশাহী শহরে এলে এই বাড়িতেই অবস্থান করতেন। বাড়িটির সামনে রয়েছে একটি নাগলিঙ্গম ফলের গাছ, যা এলাকার ঐতিহ্যের অংশ। প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য যাচাই না করেই বাড়িটি ভাঙার জন্য নিলামে তোলা হয়েছে—যা মোটেই যথার্থ সিদ্ধান্ত নয় বলে মনে করে নাগরিক সমাজ।


এ সময় বক্তারা বলেন, রাজশাহীর বহু ঐতিহাসিক স্থাপনা আজ অবহেলা, দখল ও ধ্বংসের শিকার। দরগাপাড়ার ঐ বাড়ির মতো কান্ত কবি রজনীকান্ত সেনের বসতভিটা, মিঞাপাড়ায় অবস্থিত রাজা হেমেন্দ্র কুমারের বসতভিটা—যা বর্তমানে একটি বিশেষ বাহিনীর দখলে—এবং তালন্দ ভবনসহ নানা heritage স্থাপনা রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তারা বলেন, এসব স্থাপনা শুধু রাজশাহীর নয়, বাংলাদেশের ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা সংরক্ষণ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।


স্মারকলিপিতে দরগাপাড়ার বাড়িটি ভাঙার সিদ্ধান্তের সাথে জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনা, বাড়ি ও নাগলিঙ্গম গাছ সংরক্ষণ, বাড়িটিকে heritage সাইট হিসেবে ঘোষণা করা, এবং রাজশাহী বিভাগজুড়ে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ পরিচালনার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন দখলকৃত ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা প্রশাসনের উদ্যোগে উদ্ধার ও সংরক্ষণ করার আহ্বান জানান তারা।


একই দাবিসম্বলিত স্মারকলিপির অনুলিপি রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার বরাবরও পাঠানো হয়েছে। স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি লেখক ও গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী, গবেষক ও নৃবিজ্ঞানী শহিদুল ইসলাম, বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান আতিক, ইয়ুথ অ্যাকশন ফর সোশ্যাল চেঞ্জ–ইয়্যাসের সভাপতি শামীউল আলীম শাওন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনকর্মী নাদিম সিনা, হাসিবুল হাসনাত রিজভিসহ আরও অনেকে।


নাগরিক সমাজ আশা প্রকাশ করেছে যে, রাজশাহীর ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষায় প্রশাসন দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

শেয়ার করুন