রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে ইট-ভাটার মধ্যে পাষবিক নির্যাতন ও শরীরের বিভিন্ন অংশে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে নির্যাতন করেছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।
নির্যাতনের শিকার এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী হলো গোদাগাড়ী পৌর এলাকার গড়েরমাঠ গ্রামের জাহাঙ্গীরের ছেলে সামিউল আলম।
কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের পাষবিক নির্যাতনে আহত হয়ে সামিউল আলম বর্তমানে গোদাগাড়ী ৩১ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই ঘটনায় নির্যাতিত সামিউলের মা হালিমা বেগম বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর ) গোদাগাড়ী মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযুক্তরা হলেন, উপজেলার লস্করহাটি গ্রামের আনসার আলীর ছেলে মেহেদী পলাশ (২৫), মহিশালবাড়ী আলীপুর গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে আব্দুল আওয়াল (২৫) গড়ের মাঠের আব্দুল মালেকের ছেলে জাহিদ (১৪) মাদারপুর গ্রামের মৃত মতিউরের ছেলে শাহরিয়ার জয় (১৮)সহ আরো তাদের সঙ্গে থাকা ৫/৬ জন।
অভিযোগ সূত্রে ও সামিউলের চাচা আব্দুল হামিদ জানান, নির্যাতিত সামিউল অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া তার চাচাতো বোনের সাথে লস্করহাটি গ্রামের মেহেদী পালশের সাথে প্রেমের সম্পর্কের কথা জানতে পেরে তাকে বাড়ীতে শাসন করে। এই কথা মেহেদী পলাশ ক্ষিপ্ত হয় সামিউল আলমের উপর।
পরে মেহেদী পলাশ কিশোর গ্যাংয়ের অন্যান্য সদস্যদের মাঝে আলাপ করে সামিউল আলমকে উঠিয়ে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করে। বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯ টার দিকে সামিউল আলম তার নানীর বাসা থেকে নিজের বাসা যাওয়ার সময় হলের মোড় থেকে রবিউল আওয়াল ভালোকথা বলে মোটরসাইকেলে তুলে গোদাগাড়ী সদর জেনারেল হাসপাতালের সামনের একটি হোটেলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। পরে তারা একটি রিকশা ভাড়া করে পুনরায় লস্কহাটি গ্রামের নির্জনা মাঠের ভিতর একটি ইট-ভাটায় নিয়ে গিয়ে লোহার রড, লাঠিসহ কিল ঘুষি মেরে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছিলা,ফোলা, কালসিরাসহ রক্তাক্ত করে। নির্যাতনের এক পর্যায়ে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে আমরা জানতে পেরে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি।
নির্যাতিত সামিউল আলম জানান, আমি নানীর বাসা থেকে নিজের বাসা যাওয়ার সময় রাস্তায় আমাকে দেখে রবিউল আওয়াল বলে মোটরসাইকেলে উঠ কথা আছে তোর কিছু হবে না। তার সাথে গেলে সে প্রথমে জেনারেল হাসপাতালের সামনে অন্যান্যদের সামনে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। আমি সেখানে চিৎকার চেচামেচি করলে কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে তারা জোর করে আমাকে রিকশায় উঠিয়ে নিয়ে একটি ইট-ভাটায় নিয়ে গিয়ে তারা লোহার রড,লাঠিসহ বিভিন্ন অস্ত্র দ্বারা আমাকে নির্যাতন শুরু করে। তারা আমাকে নির্যাতনের পূর্বে মেহেদী পলাশ তার বাড়ী থেকে ফেনসিডিল নিয়ে এনে তারা সকলেই সেগুলো সেবন করে আমাকে মারধর শুরু করে।
এদের মধ্যে একজন আমি যাতে বেশী চিৎকার চেচামেচি না করতে পারি এজন্য ধারালো খুর নিয়ে ভয় দিখাচ্ছিলো। তারা মারধর করার মধ্যে আমার হাত ও পায়ে সিগারেটের ছ্যাঁকাও দেয়েছে। নির্যাতনে অংশ নেওয়া জাহিদ গোদাগাড়ী মাদক সম্রাট আব্দুল মালেকের ছেলে ও শাহরিয়ার জয় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া মাদক সম্রাট ও জাহিদ মতিউরের ছেলে। আব্দুল আওয়াল সে কিশোর গ্যাং সহ মাদকবহন ও বিভিন্ন অপরাধ মূলক কাজের সাথে জড়িত মারধরের সময় সে লিডারের ভূমিকায় ছিলো বলে জানান। তাদের এমন নির্যাতনের এক পর্যায়ে সামিউল জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে তারা সামিউলের এক বন্ধুকে মোবাইল করে জানালে সে ঘটনা স্থলে এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় এবং বাড়ীর লোকজনদের অবগত করে।
এই বিষয়ে গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি কামরুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়ে এক এসআইকে দিয়ে তদন্ত করতে দিয়েছি। অভিযুক্তরা কিশোর গ্যাংয়ের সাথে যুক্ত। অভিযোগকারী আর থানায় আসেনি। অভিযোগকারীর সাথে যোগাযোগ করে পরবর্তি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।