২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০২:৫৯:০৩ পূর্বাহ্ন
সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার নেতৃত্বে ভুয়া নিয়োগ চক্র
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৯-২০২২
সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার নেতৃত্বে ভুয়া নিয়োগ চক্র

সাবেক এক ব্যাংক কর্মকর্তার নেতৃত্বে রাজধানীতে ভুয়া নিয়োগ সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। চাকরি দেওয়ার কথা বলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সিন্ডিকেটের সদস্যরা কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। গোয়েন্দা জালে মূলহোতাসহ চক্রের আট সদস্য ধরার পর চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।



উত্তরা ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিন্ডিকেটে মূলহোতা সেলিম আহমদ নিজেকে কখনো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, কখনো ব্যাংক কর্মকর্তা, আবার কখনো জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো পরিচালক হিসাবে পরিচয় দেন। এমন সব পরিচয়ে তিনি মানুষের বিশ্বাস অর্জন করেন। সিন্ডিকেটের অন্য সহযোগীদের সহায়তায় ব্যাংক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লোক নিয়োগের নামে তিনি প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।


গোয়েন্দা জালে ধরা পড়া অন্যরা হলেন-এনায়েত খান, কাওসার আলী, কাজী হাবিব, জালাল উদ্দিন তালুকদার, মো. সাগর, সুলতাল মাহমুদ এবং ফয়েজ উল্লাহ। তাদের হোয়াটস অ্যাপ চ্যাটিং হিস্ট্রি পর্যালোচনা করে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকসহ বিভিন্ন নিয়োগ এবং বদলি-পদোন্নতিসহ নানা বিষয়ে প্রতারণার অনেক তথ্য পেয়েছে ডিবি।


এ সিন্ডিকেটের হাতে প্রতারিত ১১ জনের নামের তালিকা পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে শওকত আলী ৯ লাখ টাকা, জাহিদ ৭ লাখ, সজিব খান ৬ লাখ, রবি ২ লাখ, শাহীন ৯০ হাজার, কনক মাস্টার ৭৪ হাজার, টুটুল ৭০ হাজার, লিটন ফিরোজ ৫০ হাজার, মতিন ৪৮ হাজার, খালেক ৪০ হাজার, হারুন ১০ হাজার টাকা খুইয়েছেন।


প্রতারিত শওকত আলী যুগান্তরকে বলেন, এনায়েত খান ও আমি একই ভবনে পাশাপাশি থাকি। এ সুবাদে তার সঙ্গে আমার পরিচয়। সাউথইস্ট ব্যাংকে আমার ছেলে এনামুল হোসেন এবং আমার ভায়রার ছেলে জাবেদ হোসেনকে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখান এনায়েত। বলেন, চাকরি পেতে হলে সাউথইস্ট ব্যাংকে গিয়ে শুধু ভাইভা (মৌখিক পরীক্ষ) দিতে হবে। লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে না। সে অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১৭ আগস্ট মতিঝিলের সাউথইস্ট ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে এনামুল ও জাবেদ যায়। এ সময় কাজী হাবিব নিজেকে সাউথইস্ট ব্যাংকের পিওন এবং কাওসার আলীকে সাউথইস্ট ব্যাংক কর্মকর্তা হিসাবে পরিচয় দিয়ে তাদের (এনামুল ও জাবেদ) ব্যাংকের ভেতর নিয়ে যান। এরপর একটি রুমে নিয়ে দু-তিনজন মিলে তাদের ভাইভা নেন।


শওকত আলী আরও বলেন, ভাইভা নেওয়ার কিছুদিন পর এনায়েত খান জানান, দুজনের নিয়োগপত্র পেতে সাউথইস্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ১০ লাখ টাকা ডোনেশন দিতে হবে। সে অনুযায়ী ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর এনায়েতকে ৯ লাখ টাকা দেই। নিয়োগপত্র পাওয়ার পর আরেক লাখ টাকা দিতে রাজি হই। কিন্তু টাকা নেওয়ার পর তারা নিয়োগপত্র দিচ্ছিল না। টাকা ফেরত চাইলে তারা নানা টালবাহানা শুরু করেন। বিষয়টি ডিবি পুলিশকে জানালে শুক্রবার রাজধানীর মতিঝিল, মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকা থেকে প্রতারক চক্রের আট সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।


ডিবি সূত্র জানায়, সিন্ডিকেটের মূলহোতা সেলিম তিনটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ও তিন মামলায় ওয়ারেন্টপ্রাপ্ত আসামি। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা মাস্টার্স। কাওসার এনজিওকর্মীর আড়ালে প্রতারণায় লিপ্ত। তার নামে দুটি প্রতারণার মামলা আছে। তিনিও মাস্টার্স পাশ। ব্যবসায়ী হিসাবে পরিচিত হাবিবের শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি। ফয়েজ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার অপারেটর হিসাবে কাজ করেন। তিনি আলিম পাশ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জালাল বিএ পাশ। সাগর কাপড়ের ব্যবসার আড়ালে প্রতারণা করে আসচ্ছিলেন। সুলতান বিদেশ থাকতেন। সম্প্রতি দেশে ফিরে প্রতারক চক্রের সঙ্গে তিনি যোগ দিয়েছেন।


জানতে চাইলে ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার জুনায়েদ আলম সরকার যুগান্তরকে বলেন, এনায়েত, হাবিব, জালাল, সাগর ও সুলতান বিভিন্ন এলাকা থেকে চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহ করে কাওসারের কাছে নিয়ে যেতেন। এরপর সেলিমের সঙ্গে কাওসার প্রতারণার নানা কৌশল ঠিক করতেন। তিনি বলেন, এ চক্রের আরও কোনো সদস্য আছে কি-না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

শেয়ার করুন