নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদের পিটুনিতে আহত ছাত্রলীগ নেতা জামিউল ইসলাম জীবন মারা যাওয়ার গুজব ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় ছাত্রলীগসহ পরিবারের সদস্যরা প্রচার করছেন জীবন মারা গেছেন। এমনকি তার মৃত্যুর খবর জানিয়ে সংগঠনের প্যাডে শোকবার্তা দিয়েছেন নলডাঙ্গা উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খন্দকার নয়ন। আর পরিবারের সদস্যদের কেউ কেউ দাবি করছেন জীবন মারা গেছেন কিন্তু চিকিৎসকরা ঘোষণা দিচ্ছেন না।
এ নিয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, জীবনের চিকিৎসা চলছে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। যারা মৃত্যুর খবর ছড়াচ্ছে তারা কেউ হাসপাতালে আসেননি দাবি করে তিনি বলেন, জীবন মারা গেলে সঙ্গে সঙ্গে জানানো হবে।
জীবনের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, বুধবার জীবনের মাথায় অস্ত্রোপচার করার কথা থাকলেও শারীরিক অবস্থা নাজুক হওয়ায় তা করা যায়নি। তাকে লাইভ সাপর্টে রাখা হয়েছে।
রামেক হাসপাতালে জীবনের দেখাশোনার জন্য আছেন তার দুলাভাই আল আমিন। তিনি বলেন, জীবন এখনও বেঁচে আছেন। তবে গতকালের তুলনায় পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
নাটোরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান এবং সদর আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের দুটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। আহত ছাত্রলীগ নেতা জীবন শিমুলের সমর্থক আর আসাদুজ্জামান আসাদ রমজানের সমর্থক হিসেবে পরিচিত।
জীবনের চাচা এস এম ফিরোজ বলেন, ‘জীবন আগেই মারা গেছে। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক চাপে হয়তো চিকিৎসকরা ঘোষণা দিচ্ছেন না। বুধবার সকালে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা তার অপারেশন করেনি। বের হওয়ার সময় চিকিৎসকরা বলেছেন জীবন মারা গেছেন।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের রাজপাড়া থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জীবন এখনও বেঁচে আছেন। রামেক হাসপাতালে সার্বক্ষণিক পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুর খবর পেলেই তারা সেটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন।
নাটোর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, জীবন এখনও জীবিত আছেন। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে একটা পক্ষ ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করছেন। জীবনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে নলডাঙ্গায় নাশকতার চেষ্টা করছেন কিছু লোক।
নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, জীবনের পরিবারের কেউ কেউ দাবি করছে সে মারা গেছে। এটা তদন্ত করে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদকে বাঁচাতে কেউ রাজনৈতিক খেলা খেলছে কিনা খতিয়ে দেখতে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
নাটোর পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান বলেন, জীবন মারা যায়নি এটা আমরা নিশ্চিত।
কেন তার মৃত্যুর গুজব ছড়ানো হচ্ছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যারা খবরটি ছড়াচ্ছে তারাই বলতে পারবেন কেন তারা এটা করছেন।
উল্লেখ্য, ফেসবুক লাইভে মসজিদের মাইক চুরির সালিশে পক্ষপাতিত্ব এবং দুর্নীতির অভিযোগ তোলায় নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক জামিউল ইসলাম জীবন এবং তার বাবা ফরহাদ হোসেনকে পিটিয়ে জখম করেন নলডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ।
গত সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নলডাঙ্গা উপজেলার রামশাকাজিপুর আমতলী বাজারে জীবনকে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে পেটান আসাদুজ্জামান আসাদ, ও তার দুইভাইসহ ৪/৫ জন। এ সময় বাধা দেওয়ায় জীবনের বাবা ফরহাদ হোসেনকেও পেটানো হয়। আহতদের উদ্ধার করে রাতেই প্রথমে নাটোর সদর হাসপাতাল ও পরে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরের পরদিন ফরহাদ হোসেনকে ছাড়পত্র দেন চিকিৎসকরা। তবে জীবনকে পাঠানো হয় আইসিউতে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবারই জীবনের মা জাহানারা বেগম বাদী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদসহ তার ২ ভাইসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।