২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৭:৫৯:০০ অপরাহ্ন
চার সংস্থার সঙ্গে মতের অমিল পুলিশের
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-১১-২০২৩
চার সংস্থার সঙ্গে মতের অমিল পুলিশের

আনসার ব্যাটালিয়নকে অপরাধী আটক, তল্লাশি ও মালপত্র জব্দ করার ক্ষমতা দিতে সরকার উদ্যোগ নিলে তা পুলিশ বাহিনীর প্রকাশ্য আপত্তির মুখে পড়ে। ‘আটক ও তল্লাশির’ ক্ষমতা না দিয়েই ২ নভেম্বর ‘আনসার ব্যাটালিয়ন বিল, ২০২৩’ পাস করা হয় জাতীয় সংসদে।


আপত্তি টিকে গেলেও পুলিশ মনস্তাত্ত্বিক চাপমুক্ত হয়নি। বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী (ভিডিপি) ছাড়া আরও তিনটি সংস্থার সঙ্গে দায়িত্ব ও দাবি-দাওয়া নিয়ে পুলিশের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব আছে। ওই সংস্থা তিনটি হলো দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) এবং ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। সরকারি এই চার সংস্থার দাবি-দাওয়ার বিষয়ে প্রায়ই আপত্তি জানায় পুলিশ।


অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনে একসময় অর্থ পাচারসংক্রান্ত সব অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্তের একমাত্র ক্ষমতা ছিল দুদকের। ২০১৫ সালে আইনটি সংশোধন করে ২৭টি অপরাধের মধ্যে শুধু ঘুষ ও দুর্নীতিজনিত অর্থ পাচার (একটি অপরাধ) দুদকের আওতায় রেখে বাকিগুলোর অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য পুলিশসহ ছয়টি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পুলিশের দাবি, এ ক্ষেত্রে তাদের সফলতা বেশি। তবে দুদক দীর্ঘদিন ধরে বাকি অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্তের ক্ষমতাও চাইছে।


এ বিষয়ে দুদকের ক‌মিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তদন্ত করার ক্ষমতা দেওয়ার জন‌্য প্রায় দুই বছর আগে আমরা সরকারের কাছে আবেদন ক‌রে‌ছি। কিন্তু আমরা এখনো এ বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে কো‌নো আপ‌ডেট পাইনি। বিষয়টি সংশোধন হলে দুদক তদন্ত কর‌তে পার‌বে।’ তি‌নি আরও ব‌লেন, ‘অর্থ পাচারের অপরাধগুলোর কন‌ভিকশন রেট দুদ‌কের ভা‌লো। সে ক্ষে‌ত্রে আমা‌দের ক্ষমতা দি‌লে ভা‌লো হয়।’


ডিএনসি অস্ত্র ও ইউনিফর্ম পেতে দীর্ঘদিন ধরে সরকারের উচ্চপর্যায়ে তদবির করছে। তবে প্রতিবারই পুলিশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আপত্তি জানানো হয়। ডিএনসি অস্ত্র চাওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়েছিল। তবে সেই কমিটি এ বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন এখনো জমা দেয়নি বলে জানা গেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে লাইসেন্সপ্রাপ্ত অন্য বাহিনীর অভিযানের বিষয়ে নিষেধ থাকলেও পুলিশ দাবি করছে, লাইসেন্স নিয়ে অনেকেই অবৈধ কাজ করে, সেখানে পুলিশের অভিযান চালানোর সুযোগ থাকা উচিত। এ নিয়েও দুই সংস্থার মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব আছে।


পুলিশের দাবি, ডিএনসির পোশাকের রং পুলিশের ইউনিফর্মের রঙের কাছাকাছি। ২০২১ সালের ২৩ মে এক প্রজ্ঞাপনে ডিএনসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ‘টার্কিশ ব্লু’ রঙের পোশাক নির্ধারণ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন পোশাক ব্যবহারের নীতিগত সিদ্ধান্ত জানায়। তবে আপত্তি তোলে পুলিশ। গত ২৯ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে বৈঠক হয়। সেখানে পোশাকের রং নিয়ে পুলিশের আপত্তি টেকেনি। এরপর অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম শেষে ১ নভেম্বর পোশাক পরিধানের লিখিত আদেশ আসে মন্ত্রণালয় থেকে। তবে এখনো আপত্তি আছে পুলিশের।


এ বিষয়ে ডিএনসির অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘পোশাকের রঙের বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আলোচনা চলছে। দেখা যাক, কী হয়।’


দেশের বন্দরগুলোতে ইমিগ্রেশনের দায়িত্ব পালন করতে চায় পুলিশ এবং ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। ১৯৯৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি ‘ভিসা সেল’ স্থাপন করার নির্দেশ দেয়। সেখান থেকে অন অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়। ওই বছরই আদেশটি বাস্তবায়ন করে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। তারা ভিসা সেল স্থাপন করে বিদেশিদের অন অ্যারাইভাল (আগমনী) ভিসা দেওয়া শুরু করে। তবে ২০১১ সালের ১৬ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রে বিদেশিদের আগমনী ভিসা দেওয়ার জন্য পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ইমিগ্রেশন বিভাগকেও পুনরায় নির্দেশ দেওয়া হয়। ফলে বিমানবন্দরে দ্বৈত কর্তৃত্বের সৃষ্টি হয়। পরে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ‘ভিসা সেল’ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পর থেকে এসবিই দায়িত্বটি পালন করে আসছে।


চার সংস্থার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আপত্তির বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএসএ) সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘মাদক নিয়ন্ত্রণ, অর্থ পাচার প্রতিরোধ, অপরাধ দমনে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ ইউনিট আছে। তারপরও কিছু সংস্থা এসব মামলা তদন্ত করছে। কিন্তু পুলিশের সফলতা বেশি। সারা বিশ্বেই এসব অপরাধ নিয়ে পুলিশ কাজ করে। আমরা সব সময় আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ার কথা বলে আসছি। সারা বিশ্বে পুলিশিং কীভাবে হয়, তারা কী কাজ করে, সেভাবে আমরাও করতে চাই। এর বাইরে কিছু নেই।’ তিনি আরও বলেন, ইমিগ্রেশনে সারা বিশ্বেই পুলিশ দায়িত্ব পালন করে, এখানে অন্য সংস্থার দায়িত্ব পালনের সুযোগ কম।


শেয়ার করুন