ইউক্রেনে নিজেদের দখলে থাকা চারটি অঞ্চলে গণভোটের আয়োজন করেছে রাশিয়া। মস্কোর সঙ্গে যোগ দিতে শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এই ভোট চলবে আগামী পাঁচ দিন।
শুক্রবার প্রথম দিনেই ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন রুশ সেনারা। খবর বিবিসির।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ায় যোগ দেওয়ার বিষয়ে স্বঘোষিত গণভোটে নিজেদের অবস্থান ভারি করতে নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকার বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন রুশ সেনারা। এমনটি দাবি করছে ইউক্রেন।
রাশিয়ার দখলে থাকা এনেরহোদারের এক নারী বিবিসিকে বলেছেন, আমাদের কাছে আসা রুশ সেনাদের মৌখিকভাবে হ্যাঁ বা না উত্তর দিতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট সেনারা জবাব শিটে লিখে নিচ্ছেন।
দক্ষিণ খেরসনে ভোট সংগ্রহের জন্য শহরের মাঝখানে একটি ব্যালট বাক্স নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন রুশ সেনারা।
নিরাপত্তার জন্যই ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চাওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।
রুশ বার্তা সংস্থা তাস জানায়, সশরীরে ভোটদান করা যাবে শুধু ২৭ সেপ্টেম্বর। অন্য দিনগুলোতে কমিউনিটিগুলোতে ঘরে ঘরে ভোটের আয়োজন করা হবে।
রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা জাপোরোজিয়ার মেলিটোপোল শহরের এক নারী বিবিসিকে বলেন, ‘স্থানীয় দুই সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে আমার বাবা-মায়ের ফ্ল্যাটে দুজন রুশ সেনা এসেছিলেন। তারা স্বাক্ষর করার জন্য একটি ব্যালট দিয়েছেন।’
‘ওই ব্যালটে আমার বাবা রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থাৎ ‘না’ লেখেন। তখন আমার মা পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ও তিনি জিজ্ঞাসা করেন, না ভোট দিলে কি হবে। এর উত্তরে তারা বলেছিল কিছুই হবে না। তবে আমার মা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। কারণ রুশ বাহিনী তাদের অত্যাচার করতে পারে,’ যোগ করেন ওই নারী।
জনপ্রতি এক ব্যক্তির বদলে পুরো ফ্ল্যাটের বাসিন্দার জন্য একটি মাত্র ব্যালট বরাদ্দ ছিল বলে জানান ওই নারী।
ভোট পরিচালনার কাজে সশস্ত্র সেনার উপস্থিতি মস্কোর এ বক্তব্যের পরিপন্থী যে এটি একটি অবাধ বা সুষ্ঠু প্রক্রিয়া।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়ার নিজের স্টাইলের এ গণভোট ইউক্রেনে মস্কো নিয়ন্ত্রিত চারটি অঞ্চলকে তাদের নিজস্ব বলে দাবি করার সুযোগ দেবে।
ইউক্রেনের এই চারটি অঞ্চল রাশিয়ার সঙ্গে যোগ দেওয়া আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হবে না বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি। তারা বলছে, ভোটাভুটির মাধ্যমে এসব অঞ্চল রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর সেখানে হামলার ঘটনা ঘটলে মস্কো দাবি করতে পারবে, পশ্চিমাদের কাছ থেকে পাওয়া অস্ত্র দিয়ে তাদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে, যা যুদ্ধকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
খেরসনের একটি সূত্র বিবিসিকে বলেছে, রাশিয়ান বার্তা সংস্থা ব্যতীত ভোটদানকে উত্সাহিত করার জন্য জনসাধারণের কোনো প্রচেষ্টা নেই।
খেরসনের এক নারী বিবিসিকে বলেন, ‘যে বিল্ডিংয়ে ভোট নেওয়া হচ্ছে, সেখানে আমি সশস্ত্র রুশ সেনাদের দেখেছি। আমি ভুলে পাসপোর্ট আনিনি এমনটি দেখিয়েছি। তাই তারা আমাকে ভোট দিতে দেয়নি।’
আমি, আমার পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবরা গণভোটের বিপক্ষে জানিয়ে ওই নারী বলেন, ‘আমরা জানি না— এই গণভোটের পর আমাদের জীবন কেমন হবে। তারা কি করতে চায় তা বোঝা খুব কঠিন।’