রাজশাহীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে চোখওঠা রোগ। শিশু, কিশোর, যুবক বৃদ্ধসহ সকল বয়সী নারী-পুরুষের মাঝে এই রোগ দেখা যাচ্ছে। ছোঁয়াচে রোগ হওয়ায় এক পরিবারে একজনের হলে পর্যায়ক্রমে অন্যদেরও হচ্ছে।
রোগটি এখন রাজশাহী জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ায় এক রকম উদ্বিগ্ন দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন কেউ না কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন।
শিশুদের মাঝে এই রোগ বেশী ছড়িয়ে পড়ায় তারা স্কুলে যেতেও পারছে না। আবার কারো স্কুলে মাসিক পরীক্ষা থাকায় কালো চশমা পড়ে স্কুলে যেতে চাইলে শিক্ষকরা স্কুলে যেতে নিষেধ করছে।
গোদাগাড়ী উপজেলার তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী সিদরাতুল মুনতাহা বলেন, আমার মাসিক পরীক্ষা চলছে। আমার চোখ উঠায় শিক্ষকরা আমাকে স্কুলে যেতে নিষেধ করছে। তবে ওই শিক্ষার্থী স্কুলে যেতে শিক্ষকদের বাঁধা প্রদান হওয়ায় খুব মন খারাপ করতে দেখা গেছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, গরমে আর বর্ষায় চোখ ওঠার প্রকোপ বাড়ে। রোগটি ছোঁয়াচে। ফলে দ্রুত অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগে আক্রান্ত হওয়ায় অনেকে কালো চোশমা পরে আবার অনেকে খালি চোখেই ঘুরাফেরা করছেন। এতে ওই রোগের সংক্রমন আরো বেড়ে যেতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।তাই সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরা।
তানোর উপজেলার তালন্দ ইউপির ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড মোহর গ্রামের সুমন আলী ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হযরত আলী, মাদ্রাসার ক্লার্ক মুরাদসহ অনেকেই চোখ ওটা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
তানোর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের পরিবারের অনেকে রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। প্রথম অবস্থায় চোখ চুলকায় এবং পরবর্তীতে চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে ও পানি ঝরছে।
এছাড়াও বাইরের আলোতে চোখ দিয়ে দেখা যাচ্ছে না। চোখ দিয়ে পেস্টি বের হচ্ছে বলেও তারা জানান। তবে চোখ ওঠার ৪-৫ দিনের মধ্যে ভাল হয়ে যাচ্ছে বললেন তারা। এ রোগে আক্রান্তের কারণে বড় ধরনের কোন সমস্যা না হলেও পূর্ব সতর্ক থাকা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।
এবিষয়ে জানতে চাইলে তানোর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল হাকিম বলেন, এটি ভীষণ ছোঁয়াচে রোগ। পরিবারের এক জনের হলে, ওই পরিবারের অন্য সদস্যরা আক্রান্ত হতে পারেন। গরম কালে এরোগের প্রকোপ বাড়ে বলে তিনি জানান।
কনজাংটিভাইটিস বৈজ্ঞানিক নামের এরোগটি স্থানীয়ভাবে চোখ ওঠা নামে পরিচিত। অপরিস্কার ও নোংরা জীবন যাপন চোখ ওঠার অন্যতম কারণ। তিনি আরো জানান, এই রোগের ক্ষেত্রে অগ্রিম পদক্ষেপ নেয়ার কিছু নেই। রোগিরা হাসপাতালে আসলে তারা চিকিৎসা প্রদান করছেন এবং করবেন বলে তিনি জানান। তবে রোগটি যেন অন্যদের মাঝে না ছড়ায়, আক্রান্ত ব্যক্তিকে সেদিকে সচেতন থাকতে হবে বলে তিনি জানান।
এ রোগে সাধারণত কোন রোগিকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়না। অবস্থা ভেদে আক্রান্ত রোগিকে তিনি অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ক্লোরামফেনিকল ব্যবহার ও এন্টিহিস্টামিন সেবনের জন্য এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার কথা বলেন।
এদিকে রাজশাহী সদর সহ বিভিন্ন উপজেলায় বাজারের ফর্মেসিগুলোতে চোখের ড্রপের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে করে চাহিদা মতো ড্রপ না পেয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে রোগীরা। আবার কোন কোন ফার্মেসীতে বেশী দামে চোখের ড্রপ বিক্রি করছে।ে চিকিৎসকরা বলছেন, ভাইরাসজনিত চোখ ওঠা রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। তবে আতঙ্কিত না হয়ে এ রোগে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।