ময়মনসিংহের বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগযোগ অঘোষিতভাবে বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এমতাবস্থায় বিএনপি নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে জড়ো হচ্ছেন পায়ে হেঁটেই। অনেকে গতকাল থেকেই সমাবেশস্থলের আশপাশের এলাকায় গিয়ে অবস্থান করছেন।
nagad-300-250
নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, নেতাকর্মীদের হত্যা ও মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে এ গণসমাবেশ ডেকেছে বিএনপি।
এই সমাবেশ করতে বিএনপি ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বৃহস্পতিবার সকাল থেকে হেঁটে সমাবেশস্থলে আসতে দেখা যায়। অনেকে শুক্রবার থেকেই ময়মনসিংহ শহরের আশপাশে হোটেলে অবস্থান করছেন।
সমাবেশের আগে অভ্যন্তরীণ রুটসহ ময়মনসিংহ থেকে আন্তজেলা রুটে বাস চলাচল করছে না। এতে সাধারণ যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক ও শম্ভুগঞ্জ মোড় এলাকায় ময়মনসিংহের অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলছে না। নগরের পাটগুদাম আন্তজেলা বাস টার্মিনালেও কিশোরগঞ্জ, শেরপুর ও নেত্রকোনাগামী কোনো বাস ছাড়তে দেখা যায়নি। ওই তিন জেলা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকাগামী যেসব বাস চলাচল করে, সেগুলোও চলছে না।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ বেলা দুইটার দিকে ময়মনসিংহ নগরের পলিটেকনিক ইনস্টিটিটিউট মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এ সমাবেশে ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলা এবং আশপাশের জেলাগুলো থেকে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী যোগ দেবেন। বিএনপির নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, বিএনপির সমাবেশে জনসমাগম ঠেকাতে ক্ষমতাসীন দলের নির্দেশে পরিবহনমালিকেরা আন্তজেলা ও ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকাগামী বাস বন্ধ করে দিয়েছেন।
এদিকে বাস বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সমাবেশস্থলে আসেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
তিনি বলেন, সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হবে। গতরাত থেকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ভয়ভীতি দেখালেও মানুষ ভীত নয়। গণপরিবহণ বন্ধ থাকার পরেও মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে এ সরকারকে মানুষ আর ক্ষমতায় চায় না।
বিএনপির ময়মনসিংহের সমাবেশে যাতে দলীয় নেতা-কর্মীরা না আসতে পারে, সেজন্য 'অঘোষিত পরিবহণ ধর্মঘট' চলছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটি বিভাগীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স।
সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, আজকে ময়মনসিংহের এ সমাবেশে জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জ— এ ৪ জেলা থেকেও নেতা-কর্মীরা আসার কথা। কিন্তু, সেসব জেলা থেকে ময়মনসিংহে আসার যে রুট, এসব রুটে অঘোষিত পরিবহণ ধর্মঘট চলছে। যাতে করে নেতা-কর্মীরা সমাবেশে আসতে না পারে। যেসব নেতা-কর্মীরা ভোরে ময়মনসিংহ চলে এসেছেন, তারা কিছু পরিবহণ পেয়েছেন। কিন্তু, এখন আর কোনো যানবাহনই পাওয়া যাচ্ছে না। নেতা-কর্মীরা কিছু পথ হেঁটে, আবার মোটরসাইকেল বা প্রাইভেটকারে করে ভেঙে ভেঙে সমাবেশে আসার চেষ্টা করছেন। আবার আমাদের নেতা-কর্মীরা ময়মনসিংহে আসার জন্য যেসব গাড়ি ভাড়া করেছেন, শুক্রবার হঠাৎ করেই সেসব গাড়িও আসবে না বলে জানিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের যেসব নেতা-কর্মীরা ময়মনসিংহে হোটেলে অবস্থান করছেন, শুক্রবার রাতেও সেসব হোটেলের সামনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা মহড়া দিয়েছেন ভয়-ভীতি সৃষ্টির জন্য। প্রত্যন্ত গ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা টহল দিয়েছে। মূলত তারা ভয়-ভীতি সৃষ্টি করতেই এসব কাজ করেছে।
তবে ময়মনসিংহ জেলা মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা কোনো ধরনের ধর্মঘট করিনি। মালিক ও শ্রমিকরা মিলে এটা করছে।
যানবাহন বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষও। বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে সাধারণ যাত্রীদের বাসের অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে।
এক কলেজছাত্র বলেন, ঢাকায় যেতে সকাল থেকেই বাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় ছিলাম। পড়ে ভেঙে কিছু পথ এগিয়ে একটি প্রাইভেটকার পাই। এরপর সেটিতে করে ঢাকার জন্য রওনা দেই।
ঢাকা থেকে আসা এক দম্পতি জানান, রাজধানী থেকে তারা নেত্রকোণার উদ্দেশে রওনা দেন। এখন পর্যন্ত তারা ময়মনসিংহের সৌম্যগঞ্জ ব্রিজ এলাকা পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছেন। অন্য সময়ে এ পর্যন্ত আসতে তাদের সর্বোচ্চ ৫৫০ টাকা খরচ হয়। আজ ইতোমধ্যে এক হাজার ৭০০ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখনো তারা আবার যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করছেন।