২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ০৯:০৯:২৬ পূর্বাহ্ন
ভোরে ল্যান্ডফল করবে সিত্রাং
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-১০-২০২২
ভোরে ল্যান্ডফল করবে সিত্রাং

এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। অনেক বছর পর এই প্রথম কোন ঘূর্ণিঝড় সরাসরি বাংলাদেশের উপকূল লক্ষ্য করে ছুটে আসছে। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) ভোর নাগাদ সিত্রাং বরিশালের খেপুপাড়া দিয়ে উঠে আসতে পারে উপকূলে।

তবে আরও কয়েকটি আবহাওয়ার মডেল বলছে, বরিশালের কাছে তিনকোনা ও সন্দ্বীপের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করবে এই ঘূর্ণিঝড়।

সিত্রাং উপকূলের দিকে যতোই এগিয়ে আসছে, ততোই ক্রমশ বাড়ছে হাওয়ার বেগ। ঘনাচ্ছে দুর্যোগ-শঙ্কা। সমুদ্রের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার বেগে এগোচ্ছে উপকূলের দিকে। আগামী ১২ ঘণ্টায় সিত্রাং অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। বেশ বড় এলাকা নিয়ে ধাবিত হচ্ছে রাক্ষসী ঘূর্ণিটি।

সোমবার (২৩ অক্টোবর) সকাল নয়টার দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া সবশেষ আট নম্বর বিশেষ বার্তায় বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি সোমবার সকাল আটটায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৫৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে; কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৫৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে; মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিলো।

ঘূর্ণিঝড় আরও ঘনীভূত এবং উত্তর ও উত্তর-পূর্বে অগ্রসর হয়ে মঙ্গলবার ভোররাত থেকে সকাল নাগাদ খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সিত্রাং এখনও মাঝারি আকারের ঘূর্ণিঝড় হিসাবেই আছে। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার হতে পারে। তবে উপকূলের কাছে আসার আগে সিত্রাং বড় আকারের ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। সেই সঙ্গে অমাবস্যার কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ থেকে আট ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ, অমাবস্যা ও বায়ুচাপ পার্থক্য এ তিনের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী,ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, নোয়াখালী, , চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের কাছের দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পাঁচ থেকে আট ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং অনেক বড় এলাকা জুড়ে তৈরি হবার কারণে, এটিরে প্রভাবও ব্যাপক ও বিস্তৃত। এ কারণে উপকূলের ১৯ জেলায় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে পারে। বিশেষ করে বরিশাল-পটুয়াখালী এলাকায় তাণ্ডব দেখাতে পারে সিত্রাং। সন্দ্বীপ ও আশপাশের চরও ব্যাপক আঘাত হানতে পারে। সিত্রাংয়ের প্রভাবে সোমবার ভোর থেকেই সারাদেশজুড়ে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝোড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে।

এক সতর্কবার্তায় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে দেশের সাত বিভাগে অতিভারি বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রামে হতে পারে পাহাড়ধস। এরইমধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে। বইছে ঝোড়ো হওয়া। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় বিক্ষুব্ধ রয়েছে সাগর।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং বাংলাদেশের উপকূলের কাছাকাছি আসায় এরইমধ্যে মোংলা ও পায়রা বন্দরকে সাত নম্বর বিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ছয় নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এর আগেই মাছ ধরার ট্রলারগুলোকে উপকূলে ফেরানো হয়েছে। সেসঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলে জেলাগুলোতে নৌ চলাচল বন্ধ করা হয়েছে।

শেয়ার করুন