২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৩:১৫:৪৮ অপরাহ্ন
রাজশাহীতে এইচএসসির আগেই ঝরে গেছে ৩০ হাজার শিক্ষার্থী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-১০-২০২২
রাজশাহীতে এইচএসসির আগেই ঝরে গেছে ৩০ হাজার শিক্ষার্থী

আগামী ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা। এবার রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে এসএসসি উত্তীর্ণ হয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় ৩০ হাজার ২৫৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে না।

অর্থাৎ, ১৯ দশমিক ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে গেছেন। এসব শিক্ষার্থী এইচএসসি প্রথমবর্ষে নিবন্ধন করলেও পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেনি।

শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রায় ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে না। তারা নিবন্ধনও করেছে। কিন্তু পরীক্ষার ফরম পূরণ করেনি। করোনা পরিস্থিতি ও কর্মক্ষেত্রে ঢুকে পড়ার কারণে এমনটি ঘটতে পারে। তবে প্রকৃত কারণ উদঘাটনে অনুসন্ধান দরকার। এজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে খোঁজ নিতে হবে।

রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আরিফুল ইসলাম জানান, রাজশাহী বোর্ডের অধীনে বিভাগের আট জেলায় এবছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে ১ লাখ ২৯ হাজার ২৫ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র ৬৮ হাজার ৩৬ এবং ছাত্রী ৬০ হাজার ৯৮৯ জন। এবার বিজ্ঞান শাখায় ৩৪ হাজার ছয় জন, মানবিকে ৮০ হাজার ৯৬৪ এবং ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ১৩ হাজার ৩৮৭ শিক্ষার্থী অংশ নেবে।

তিনি বলেন, এর আগে এইচএসসি প্রথমবর্ষে নিবন্ধিত মোট শিক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৬৮ জন। এর মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেছে ১ লাখ ২৪ হাজার ৯০৯ জন। বাকি ৩০ হাজার ২৫৯ জন ফরম পূরণ করেনি। এদের মধ্যে ছাত্র ১২ হাজার ৫৪৪ জন ও ছাত্রী ১৭ হাজার ৭১৫।

অর্থাৎ, মোট শিক্ষার্থীর ১৯ দশমিক ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী ফরম পূরণই করেনি। তারা ঝরে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজশাহী বিভাগের আট জেলার ৭৫২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ২০১টি কেন্দ্রে পরীক্ষা দেবে।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আরিফুল ইসলাম বলেন, এর আগে এসএসসি পরীক্ষায় ২৯ হাজার ৮৮০ শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেনি। তাদের ঝরে পড়া শিক্ষার্থী হিসেবে গণনা করা হচ্ছে।

শিক্ষার্থী হ্রাস পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আসলে বিভিন্ন ধরনের কাজের মধ্যে ঢুকে গেছে অনেকেই। কিছু শিক্ষার্থী আবার এমনিতেও অনিয়মিত থাকে। আসলে এ বিষয়ে বোর্ডের তো কোনো গবেষণার ব্যবস্থা নেই। প্রতিবারই কমে, এবার হয়তো বেশি কমেছে। করোনারও প্রভাব আছে। একারণেই একটু বেশি কমেছে।

পরীক্ষার্থী কমে যাওয়া নিয়ে বঙ্গবন্ধু কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) কামরুজ্জামান জানান, ‘গত বছরের তুলনায় এবছর প্রায় ৫০জন পরীক্ষার্থী কম এইচএসসিতে। করোনাভাইরাসের প্রভাব; সেই সময় শিক্ষার্থীরা অনেক ঝরে পড়েছে।

`এছাড়া বাল্য বিয়ে। ইন্টার লেভেলের শিক্ষার্থীদের বিয়ে মানে বাল্য বিয়ে। অনেকের বাল্য বিয়ে হয়েছে। আমাদের অনেক ছাত্রী সন্তান নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসে। আরেকটি কারণ জীবিকার তাগিদে কাজে যুক্ত হওয়া। অনেকেই সাংসারিক চাপে বিভিন্ন কাজে যুক্ত হয়েছে। পড়া-শোনা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে বলে এই শিক্ষক জানান।’

পরীক্ষার্থী কমার বিষয়ে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি রাজশাহী জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা জানান, ‘করোনার সময়ে প্রচুর পরীক্ষার্থীর বাল্য বিয়ে হয়েছে। জন্মনিবন্ধন পরিবর্তন করে এই বিয়েগুলো হয়েছে। এরমধ্যে কিছু বিয়ের রেজিস্ট্রি হয়নি।’

রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান বলেন, এতো শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ে যাওয়ার বিষয়টি ভাবনার। কী কারণে এসব শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে না তাও বের করা দরকার। আমরা কলেজগুলোতে নির্দেশনা দেব। ধারণা করা হচ্ছে করোনার জন্য এমন হতে পারে। আবার অনেক শিক্ষার্থীর বিয়েও হয়ে গেছে। আমরা এগুলো নিয়ে অনুসন্ধান করব।

শেয়ার করুন