২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৫:৫৮:৪৮ অপরাহ্ন
সড়কজুড়ে স্ট্যান্ড রাজধানীতে প্রবেশে লাগে কয়েক ঘণ্টা
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-১১-২০২২
সড়কজুড়ে স্ট্যান্ড রাজধানীতে প্রবেশে লাগে কয়েক ঘণ্টা

রাজধানীর জিপিওর মোড়ের জিরো পয়েন্ট থেকে বাবুবাজার ও সদরঘাটমুখী সড়কজুড়ে বাস-ট্রাক স্ট্যান্ড এবং মালামাল লোড-আনলোডের স্থান গড়ে তুলে চরম যানজট সৃষ্টি করা হচ্ছে। ওই সড়কটিতে অন্তত ২০টি বাস ও লেগুনা স্ট্যান্ড রয়েছে। সিটি করপোরেশন বছরের পর বছর ফুলবাড়িয়া টার্মিনাল ইজারা দিলেও স্থায়ী টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প হিমাগারে চলে গেছে।

ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও পুলিশের নামে এসব স্ট্যান্ড থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজি হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ সড়কে যানজটের কারণে রাজধানীতে প্রবেশে যানবাহনগুলোর সময় লেগে যাচ্ছে কয়েক ঘণ্টা। কখনো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, কেরানীগঞ্জের কদমতলী ও পদ্মা সেতুগামী সড়ক পর্যন্ত যানজট লেগে থাকছে।

নগরবিদরা বলছেন, জিপিও থেকে বাবুবাজার সড়ক এবং মেয়র হানিফ উড়ালসড়ক মুখের স্ট্যান্ড ও সড়কে ট্রাফিক সিস্টেম ঢেলে সাজানো দরকার। পরিকল্পিত গণপরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর জোর দেন তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জিপিও মোড় থেকে গুলিস্তান বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত হকারদের দখলে রয়েছে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি হয়ে নয়াবাজার পর্যন্ত সড়কের দু’পাশের মার্কেটগুলোর মালামাল লোড-আনলোড পয়েন্ট হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া স্ট্যান্ডগুলোর মধ্যে গুলিস্তান, ভিক্টোরিয়া পার্ক, বাংলাবাজার, বাবুবাজার, রায় সাহেব বাজার, দোলাইখাল, চকবাজার, চাঁনখার পুল ও মিটফোর্ডে প্রধান সড়কের ওপর বাস ও লেগুনা স্ট্যান্ড অন্যতম। ওইসব স্থানে সড়কের ওপর এলোপাতাড়ি গাড়ি রেখে যাত্রী ওঠানামা করা হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ওইসব সড়কে চলাচলকারীরা। এসব সড়কের মধ্যে গুলিস্তান অন্যতম।

ফুলবাড়িয়া বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ডের সামনে রাস্তার পূর্বপাশে ইলিশসহ কয়েকটি পরিবহণ কোম্পানি ও সদরঘাট-কদমতলীগামী লেগুনা স্ট্যান্ড বানানো হয়েছে। এছাড়া মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজা থেকে বঙ্গবাজার পর্যন্ত ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তার দুই পাশে অসংখ্য বাস পার্কিং করে রাখা হয়েছে। রাস্তাটি সরু ও দুই পাশে বাস রাখায় রিকশা চলাও দায় হয়ে পড়ছে।

এছাড়া টিএন্ডটির রমনা ভবনের সামনের রাস্তা থেকে বায়তুল মোকাররম হয়ে জাতীয় স্টেডিয়াম পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশ স্ট্যান্ড বানিয়ে বাস দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। ফুলবাড়িয়ায় বনশ্রী পরিবহণ, গাজীপুর পরিবহণ, কালশী রুট ও চিড়িয়াখানা রুটের গাড়ি ও রাস্তার পূর্বপাশে এন মল্লিক ও বান্দুরা পরিবহণের স্ট্যান্ড বানানো হয়েছে। গোলাপ শাহ মাজারের সামনে থেকে পুলিশ সদর দপ্তর ও নগর ভবনমুখী রাস্তাটির দুপাশে অসংখ্য লেগুনা গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।

বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে উৎসব, বন্ধন, শীতল পরিবহণ, জাতীয় স্টেডিয়ামের ১ ও ২ নম্বর গেটের সামনে রাস্তার দুপাশে বোরাক, দোয়েলসহ বিভিন্ন পরিবহণের কাউন্টার, বঙ্গবন্ধু স্কয়ার পাতাল মার্কেটের সামনে থেকে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে ওঠার রাস্তা পর্যন্ত স্ট্যান্ড বানিয়ে রাস্তা দখল করে রাখা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দিয়ে চলাচলরত লাখ লাখ যাত্রী প্রতিদিন যানজটে পড়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বেশি বিপাকে পড়ছে রোগী ও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা।

ফুলবাড়িয়া টার্মিনালটি বিআরটিসির মালিকানাধীন। ফুলবাড়িয়া এলাকায় সিটি করপোরেশনের কোনো বাস টার্মিনালের জায়গা নেই। এজন্য গুলিস্তান ফুলবাড়িয়ার রাস্তাজুড়ে স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। এছাড়া ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় অবৈধভাবে স্ট্যান্ড গড়ে ওঠায় গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে। এতে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালগামী যাত্রী ও ঢাকা জজ আদালতে আসা লোকজন চরম হয়রানির শিকার হচ্ছে।

মিটফোর্ড হাসপাতালের চারপাশে বাস ও লেগুনা স্ট্যান্ড গড়ে ওঠায় রোগীরা বিপাকে পড়েছেন। কখনো রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালে প্রবেশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। অনেক সময় অ্যাম্বুলেন্সেই রোগী মারা যাচ্ছে।

এদিকে পুরান ঢাকায় রাতে যানজটের তীব্রতা বেশি দেখা দিচ্ছে। গুলিস্তানের সৈয়দ নজরুল ইসলাম সড়ক, আরমানিটোলা, চাঁনখারপুল ও সোয়ারিঘাট বেড়িবাঁধের ওপর রাতের গভীরতার সঙ্গে যানজটও বাড়তে থাকে। পণ্য পরিবহণ ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ীরা সড়কজুড়ে ট্র্যাক ও কাভার্ডভ্যানে মালামাল লোড-আনলোড করায় যানজট বাড়ছে।

ডিএসসিসির একাধিক সূত্র জানায়, ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ডিএসসিসির ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে ২০১৬ সালে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় বঙ্গবাজার থেকে আনন্দবাজার পর্যন্ত এলাকার অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে ওই স্থানে আধুনিক সুবিধার বাস টার্মিনাল নির্মাণ করার প্রস্তাব করা হয়। সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন বিভাগের টানাটানিতে প্রকল্পটি বর্তমানে হিমাগারে চলে গেছে।

স্ট্যান্ড ঘিরে মাসে কোটি টাকা চাঁদাবাজি : পুরান ঢাকার ব্যস্ততম সড়কগুলোয় বসানো স্ট্যান্ড ঘিরে মাসে কোটি টাকার চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কয়েকজন পরিবহণ নেতা ও ট্রাফিক পুলিশকে গাড়িপ্রতি নির্ধারিত হারে চাঁদা দিতে হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পরিবহণ মালিক যুগান্তরকে বলেন, চাঁদা না দিলেই গাড়িকে মামলা দেওয়া হয়। এসব বিষয়ে একাধিকবার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলেও কার্যকর কোনো ফল হয়নি।

ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ট্রাফিক) মেহেদী হাসান বলেন, স্ট্যান্ডের জন্য সিটি করপোরেশন থেকে কোনো জায়গা বরাদ্দ না থাকায় সড়কের উপর গাড়ি রাখা হচ্ছে। এতে যানবাহনের শৃঙ্খলা রক্ষায় ট্রাফিক সদস্যদের বেগ পেতে হয়। কোনো ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিবহণ বিভাগের ব্যবস্থাপক হায়দার আলী জানান, সিটি করপোরেশনের ইজারাকৃত সব সিটি টোল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তারপরও কেউ কেউ অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলন করছেন।

শেয়ার করুন