বাসে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন চালক মো. বাবু। পরিচয় দিয়ে একটু কথা বলতে চাইলেই বললেন, ‘প্যাট চলে না, কী কথা বুলব! কথা বুইলতে আর ভাল্লাগছে না ভাই।’ বৃহস্পতিবার থেকে রাজশাহী বিভাগে শুরু হওয়া অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের কারণে অলস সময় কাটছে বাবুর।
আজ শুক্রবার সকালে রাজশাহী নগরীর শিরোইলে শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান বাস টার্মিনালে কথা হয় আল-রাফি নামের বাসের চালক বাবুর সাথে। বাবু জানান, তার বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায়। যাওয়া-আসা করতে খরচ হবে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এই টাকাটিই খরচ করতে পারবেন না বলে বাস বন্ধ থাকলেও বাড়ি যাননি। এক শ্রমিক নেতা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ভোটে দাঁড়াবেন। তিনি একবেলা খিচুড়ি রান্না করে খাওয়াচ্ছেন। বাবু ওই খিচুড়ি খাচ্ছেন। বাকি দুবেলা কিনে খাচ্ছেন হোটেলে। ঘুমাচ্ছেন বাসেই।
টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকেরা এখানে-ওখানে বসে সময় কাটাচ্ছেন। কেউ গাড়ি ধোয়ামোছা করছেন। আবার কোনো কোনো বাসের ভেতর বসে কেউ ঘুমাচ্ছেন। কেউ কেউ তাস খেলছেন। হায়দার নামের একটি বাসে বসেছিলেন শ্রমিক রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা শ্রমিকেরা তো হরতাল চাই না। এখুন মালিক বুল্যাছে হরতাল, হরতাল। মালিক চাহিলে চাকা ঘুইরবে, না চাহিলে ঘুইরবে না। আমরাও সরকারের পক্ষে, অন্য কুনু কথা নাই।’
টার্মিনালের প্রধান ফটকের সামনে বসে রোদ পোহাচ্ছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। এদের একজন মো. লিটন। কী দাবিতে ধর্মঘট হচ্ছে জানতে চাইলে লিটন বলেন, ‘দাবি-টাবির কথা বুইলতে পারব না। কাইল বিএনপির মিটিং শ্যাষ হবে, তারপর বাস চলবে। ৪ তারিখে একটা দিন গাড়ি চালাতে পারব। ৫ তারিখে শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সভা। সেদিনও বাস বন্ধ থাকবে। ৬ তারিখ থাইক্যা বাস স্বাভাবিক চলতে পারে। এখুন তো সমিস্যার মধ্যে আছি।’
গত ২৬ নভেম্বর নাটোরে এক সভা করে মহাসড়ক থেকে নছিমন, করিমন, ভটভটিসহ অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করাসহ ১১টি দাবি জানায় পরিবহন মালিক সমিতি। দাবি আদায় না হলে ১ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। পরিবহন মালিকদের এসব দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে প্রশাসনের কোন পর্যায় থেকে আলোচনা করা হয়নি। তাই আলটিমেটাম অনুযায়ী ১ ডিসেম্বর থেকে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে।
এই পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যেই শনিবার (৩ ডিসেম্বর) রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিএনপি ইতিমধ্যে যেসব বিভাগীয় সমাবেশ করেছে সেই বিভাগগুলোতেও পরিবহন ধর্মঘট হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই পরিবহন ধর্মঘটের সঙ্গে মালিক-শ্রমিকের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সমাবেশে নেতাকর্মীদের আগমন ঠেকাতে এই ধর্মঘট সরকারই চাপিয়ে দিয়েছে। এর ফলে হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে।
বিএনপির এমন দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগীয় পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি সাফকাত মঞ্জুর বলেন, ‘এগুলো রাজনৈতিক কথা বিএনপি বলছে। কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে আমাদের সম্পর্ক নাই। বিএনপির সমাবেশ হচ্ছে রাজশাহীতে। জয়পুরহাট থেকেও আজ কোনো বাস ঢাকা যায়নি, বগুড়া থেকেও যায়নি। আসা তো দূরের কথা, ঢাকা যায়নি কোনো বাস। যেতে তো সমস্যা নেই। তাহলে ঢাকা যাচ্ছে না কেন?’
তাদের দাবির বিষয়ে প্রশাসন কোনো আলোচনা করছে কি না জানতে চাইলে সাফকাত মঞ্জুর বলেন, ‘দুদিন হয়ে গেল, এখনো কেউ কোনো আলোচনা করেনি। বিভাগীয় কমিশনার যদি এখনই আমাদের সাথে বসে দাবি মেনে নেন, তাহলে এখনই ধর্মঘট তুলে নেব। কিন্তু কেউ যোগাযোগ করেনি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ধর্মঘট চলবেই।’
বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে তিনি ব্যস্ততার কথা জানিয়েছেন। তাই তার মন্তব্য জানা যায়নি।