মহারাণী হেমন্তকুমারী দেবীর বাসভবন। যা বর্তমানে পুঠিয়া রাজবাড়ী নামে পরিচিত। রাজশাহী শহর থেকে ৩২ কি.মি. উত্তর-পূর্বে নাটোর মহাসড়ক অভিমুখে বাঘা-পুঠিয়া জেলা সড়কের পাশে অবস্থিত এই রাজবাড়ী।
১৮৯৫ সালে মহারাণী হেমন্তকুমারী দেবী আকর্ষনীয় ইন্দো ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতিতে আয়তাকার দ্বিতল এই রাজবাড়ীটি নির্মাণ করেন।
ঐতিহ্যের এই রাজবাড়ীতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদ্যোগে চালু হয়েছে জাদুঘর। ২০২১ সালে চালু হওয়া জাদুঘরটি ইতিমধ্যেই দর্শনার্থীদের পদচারণায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে প্রাচীন ইতিহাস ও সভ্যতার এ জায়গাটি।
রাজবাড়ীতে জাদুঘর চালুর দীর্ঘ দিনের দাবি ছিলো স্থানীয়দের। আর সেই দাবি পূরণ হওয়ায় খুশি এলাকাবাসী।
জানা গেছে, রাজশাহী অঞ্চলের প্রত্নতত্ত্ব নির্দশনের ঐতিহ্যাবাহী স্থান পুঠিয়া রাজবাড়ি। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে মুঘল আমলের প্রাচীন এ স্থাপত্য। দীর্ঘ প্রস্তুতির পরও করোনা পরিস্থতিতে জাদুঘর চালু করতে দেরি হলেও সম্প্রতি দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে ঐতিহাসিক এ স্থাপত্যটি। সকাল থেকেই দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে প্রাচীন ইতিহাস ও সভ্যতার এ জায়গাটি। পুঠিয়া রাজবাড়ি জাদুঘরে গ্রীষ্মকালীন সকাল ১০ থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকছে।
শীতকালীন সময়ে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিদর্শন করতে পারবেন দর্শনার্থীরা। তবে সাপ্তাহিক ছুটি রোববার সারাদিন এবং সোমবার অর্ধ দিবস এটি বন্ধ থাকে। আর এখানে প্রবেশ মূল্য রাখা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য ২০ টাকা, শিক্ষার্থীদের জন্য ৫ টাকা, বিদেশি সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য একশত টাকা এবং অন্যান্য বিদেশিদের জন্য দুইশত টাকা।
জাদুঘরটি ঘুরতে এসেছিলেন দর্শনার্থী তারেক রহমান। তিনি বলেন, আমি এখানে প্রায়ই আসি বন্ধুদের সাথে ঘুরতে। এখানকার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো আমার কাছে খুব ভালো লাগে। এমন আরো অনেক নিদর্শন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এই রাজবাড়ির আশেপাশে। এগুলোকে ঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হলে দর্শনার্থীদের আনাগোনা আরও বাড়বে বলে আমি মনে করি।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পুঠিয়া রাজবাড়ি জাদুঘর অ্যাসিসট্যান্ট কাস্টোডিয়াল শাওলী তালুকদার জানান, পুঠিয়া রাজবাড়ি ইতিহাস ও ঐতিহ্যগতভাবে অনেক আগে থেকে সমৃদ্ধশালী ছিল। আর সেই প্রচেষ্টাকে সামনে রেখে আমাদের একটা পরিকল্পনা ছিল পুঠিয়া রাজবাড়িতে একটি জাদুঘর চালু করব। ২০১৭ সাল থেকে এই পরিকল্পনা, কিন্তু নিরাপত্তার কারণে আমরা এটা করে উঠতে পারিনি। অবশেষে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে এটি চালু করতে পেরেছি। এছাড়াও দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি। উন্মুক্ত করার পর থেকেই দর্শনার্থীর সমাগম দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু এলাকাবাসী ও স্থানীয়রাই নয়, বাইরে থেকে প্রচুর পর্যটক এই জাদুঘর দেখতে আসছে প্রতিনিয়িত।
এ ব্যাপারে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুরুল হাই মোহাম্মাদ আনাছ জানান, পুঠিয়া রাজবাড়ির জাদুঘরটি ইতিমধ্যেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। জাদুঘরটিতে নানান ধরনের পুরাকীর্তি এবং প্রাচীন নিদর্শন রক্ষিত আছে। ইতিহাস-ঐতিহ্য এই জাদুঘরে তুলে ধরা হয়েছে। জাদুঘরকে আরও প্রমোট করার জন্য এই জাদুঘরের উন্নয়নকল্পে আমরা নানা রকমভাবে সহযোগিতা পাচ্ছি এবং সহযোগিতা চলছে।
তিনি আরও বলেন, বিশেষভাবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা এই জাদুঘরকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এবং মানুষকে জানানোর জন্য আমরা কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। একই সাথে এখানে আরও যাতে নতুন নতুন বিষয় যোগ করা যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছি। বিশেষভাবে আমরা চেষ্টা করছি যে রাজবাড়ির এলাকায় যে বিভিন্ন জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সে গুলোকে সংগ্রহ করে জাদুঘরে রাখার জন্য।