২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ০৮:১০:৩৬ অপরাহ্ন
থার্টি ফাস্ট ঘিরে রাজশাহীতে চলছে ব্যাপক চাঁদাবাজি
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-১২-২০২২
থার্টি ফাস্ট ঘিরে রাজশাহীতে চলছে ব্যাপক চাঁদাবাজি

রাজশাহী নগরীর দরিখরোবনা এলাকায় একটি স্যালুনে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে গিয়ে স্থানীয় কয়েকজন যুবক দাবি করেন, তারা থার্টি ফাস্ট রাতে পিকনিক করবেন। তাই তাঁদের কিছু টাকা দিতে হবে। স্যালুন মালিকও নাছোড় বান্দা তিনি চাঁদা দিবেন না। প্রয়োজনে পিকনেকের জিনিসপত্র কিছু কিনে দিবেন। যুবকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অগত্য পিকনিকের জন্য স্যালুন মালিক ১১শ টাকা ব্যয়ে তিনটি মুরগি কিনে দিয়েছেন গতকাল।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, থার্টি ফাস্টের নাম করে রাজশাহী নগরীর স্যালুন থেকে শুরু করে চিকিৎসকের চেম¦ার, হোটেল, গ্যারেজ, সরকার দলীয় নেতা, নতুন নতুন নির্মাণাধীন ভবন মালিক, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সবখানে গিয়ে স্থানীয় যুবক থেকে শুরু করে সরকার দলীয় ও বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের কর্মী-সমর্থকরা গিয়ে গত কয়েকদিন ধরে ব্যাপক চাঁদাবাজি করে চলেছেন। একের পর এক গ্রুপকে চাঁদা দিতে গিয়ে অনেকেই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।

রাজশাহীর একজন যুবলীগ নেতা কালের কণ্ঠকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে স্থানীয় ছেলে-মেয়েরাও আসছেন থার্টি ফাস্ট নাইটে পিকনিকের চাঁদা নিতে। কতজনকে এভাবে টাকা দেওয়া যায়? পিকনিক করলে নিজেরা করবে, তা না করে এখন মানুষের নিকট থেকে চাঁদা তুলতে শুরু করেছে এরা। এ কেমন কালচারে পরিণত হচ্ছে দেশটি।

রাজশাহীর লক্ষীপুর এলাকার পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘যে কোনো দিবস আসলেই হলো। স্থানীয় একাধিক গ্রুপকে চাঁদা দিতে দিতে অতিষ্ঠ হয়ে যেতে হয়। তবে এবার থার্টি ফাস্টের নামে বেশি চাঁদাবাজি হচ্ছে। এতো লোজকজন আসছে অফিসে যে মাঝে মাঝে অফিস বন্ধ করে বাসায় বসে থাকছি। ভাবছি একেবারে থার্টি ফাস্ট নাইট শেষ করেই অফিসে যাবো।’

তিনি আরও জানান, তাঁদের ওই প্রতিষ্ঠানটিতে চেম্বার খুলে চিকিৎসাসেবা দেন শতাধিক চিকিৎসক। ওই চিকিৎসকদের চেম্বারে গিয়েও টাকা আদায় করছে একাধিক গ্রুপ।
একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে আমি যে পরিমাণ রোগী দেখেছি, তার চেয়ে বেশি মানুষ এসেছে থার্টি ফাস্টের চাঁদা নিতে। চাঁদাবাজদের কারণে ঠিকমতো রোগীর চিকিৎসাসেবাও দিতে পারেননি তিনি। শুক্রবার চেম্বার বন্ধ থাকবে-সে কারণে বৃহস্পতিবারেই ভিড় জমাতে থাকে থার্টি ফাস্টের টাকবা নিতে স্থানীয় কয়েকটি গ্রুপ।’

রাজশাহীর দরিখরোবানা এলাকার ব্যবসায়ী পিন্টু বলেন, ‘গত চার-পাঁচ দিন ধরে একাধিক গ্রুপ আসছে থার্টি ফাস্টের পিকনিকের চাঁদা নিতে।’ কতজনকে টাকা দেওয়া যায়-প্রশ্ন করেন তিনি। কয়েকজনকে সবমিলিয়ে অন্তত ৬ হাজার টাকা দিয়েছেন। আরাও একাধিক গ্রুপ আসছে। কিন্তু বাধ্য হয়ে তিনি আর চাঁদা দিচ্ছেন না। আবার চাঁদা দিতে না চাইলেও চোখ রাঙ্গানী দেখতে হচ্ছে কারও কারও।

রাজশাহীর তেরোখাদিয়া এলাকার একটি মোটর গ্যারেজ থেকে গত বৃহস্পতিবার সালে দুই হাজার টাকা নিয়ে গেছে একটি গ্রুপ। আরেকটি গ্রুপ গিয়ে দাবি করে তিন হাজার টাকা। সেই গ্রুপকেই চাঁদা দেন ওই গ্যারেজ মালিক। পরে সন্ধ্যায় যায় আরও দুটি গ্রুপ। এর মধ্যে একটি গ্রুপের সঙ্গে চাঁদা দিতে না চাওয়ায় প্রায় হাতাহাতি হতে গিয়েও হয়নি ওই গ্যারেজ মালিকের।

লক্ষীপুর এলাকার একটি নির্মাণাধীণ ভবনের একজন মালিক বলেন, ‘কয়দিন আগে স্থানীয় দুটি গ্রুপকে আমরা টাকা দিয়েছি। এখন থার্টি ফাস্ট ঘিরে প্রায় দিনই কোনো না কোনো গ্রুপ আসছে টাকা নিতে। নতুন বড় ভবন যেখানেই হচ্ছে, সেখানেই গিয়ে চাঁদা আদায় করছে এই গ্রুপগুলো।’

থার্টি ফাস্ট ঘিরে নগরজুড়ে এমন চাঁদাবাজির বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, ‘থার্টি ফাস্টকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজির কেউ কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে করেনি। হয়তো ভয়ে বা লজ্জায় এসব অভিযোগ করেও না সাধারণত। একেবারে সহ্যের সীমা লঙ্ঘন হলে মাঝে মাঝে কেউ কেউ অভিযোগ করেন। তবে থার্টি ফাস্ট ঘিরে কোথাও কোনো ধরেনর যেন বিশৃঙ্খলা কেউ করতে না পারে, সেদিকে আমরা কঠোর নজরদারি রেখেছি। চাঁদাবাজি ঠেকাতেও পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া আছে।’

শেয়ার করুন