২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১২:১৭:০০ অপরাহ্ন
প্রস্তুত কর্ণফুলী বঙ্গবন্ধু টানেল, যেকোনো সময় গাড়ি চলা শুরু
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০১-২০২৩
প্রস্তুত কর্ণফুলী বঙ্গবন্ধু টানেল, যেকোনো সময় গাড়ি চলা শুরু

গাড়ি চলাচলের জন্য প্রস্তুত দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশে নির্মিত প্রথম সুড়ঙ্গ সড়ক কর্ণফুলী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে তৈরি হওয়া টানেলটির একটি টিউব সদ্য বিদায়ি বছরের ২৬ নভেম্বর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে টিউবটি পুরোপুরি প্রস্তুত না হওয়ায় ওই সময় গাড়ি চলাচল করতে পারেনি। বর্তমানে ওই টিউবটি পুরোপুরি প্রস্তুত হওয়ায় নতুন বছরের জানুয়ারি মাসের যেকোনো সময় গাড়ি চলাচল শুরু করতে পারে বলে জানিয়েছেন টানেলের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ। 

 

তিনি বলেন, প্রকল্পের ভৌতকাজ শেষ হলেও বিশেষায়িত প্রকল্প হওয়ায় নিরাপত্তাসহ আনুষঙ্গিক কিছু কাজ বাকি ছিল, যা ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এখন দিন-ক্ষণ ঠিক করে গাড়ি চলাচলের জন্য টানেল খুলে দেওয়া হবে। 

 

তবে টানেলের ভেতর দিয়ে মোটরসাইকেল বা তিন চাকার গাড়ি চলাচল করতে পারবে না। সেতু মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত টোলের তালিকায় মোটরসাইকেল ও তিন চাকার গাড়ি টোল আদায়ের কোনো উল্লেখ নেই। তা থেকে মোটরসাইকেল ও তিন চাকার গাড়ি চলাচলের সুযোগ না রাখার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রস্তাবিত টোল হার ২০ ডিসেম্বর অনুমোদন দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এখন তা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

 

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা বলেন, টানেলের ভেতরে মোটরসাইকেল ও তিন চাকার গাড়ি চলাচলের বিষয়টি আপাতত বিবেচনায় নেই। তাই টোলের হার নির্ধারণের তালিকায় এই দুই ধরনের গাড়ির জন্য টোল আদায়ের বিষয়টি রাখা হয়নি। মূলত টানেলের নিরাপত্তার জন্য এ ধরনের গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।

 

প্রকল্প পরিচালকের তথ্য মতে, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দুটি টিউবের পূর্তকাজ শেষ হয়েছে। এই সুড়ঙ্গ চট্টগ্রামের আনোয়ারা প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে নগরের পতেঙ্গা প্রান্ত পর্যন্ত। এটি এখন গাড়ি চলাচলের জন্য প্রস্তুত। 

 

কর্ণফুলী নদীর ওপর চট্টগ্রাম নগর অংশে বর্তমানে দুটি সেতু রয়েছে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় কালুরঘাট রেল সেতুর ওপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। আর শাহ আমানত সেতুর ওপর দিয়ে কক্সবাজার, বান্দরবান ও দক্ষিণ চট্টগ্রামমুখী গাড়ি চলাচল করে। টানেলটি শাহ আমানত সেতু থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে পতেঙ্গা এলাকায় অবস্থিত। এ জন্য গাড়ি ভেদে টোলের হার আলাদা। 

 

তবে সেতু কর্তৃপক্ষের নির্ধারণ করা টোলের হার শাহ আমানত সেতুর চেয়ে দুই থেকে আড়াইগুণ বেশি। শাহ আমানত সেতুর চেয়ে টোল বেশি হলে টানেলের ভেতর দিয়ে প্রত্যাশিত গাড়ি চলাচল নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে মত দেন বিশিষ্টজনেরা। 

 

সেতু কর্তৃপক্ষের নির্ধারণ করা টোল অনুযায়ী টানেলের মধ্য দিয়ে যেতে হলে ব্যক্তিগত গাড়ি (প্রাইভেট কার), জিপ ও পিকআপকে দিতে হবে ২০০ টাকা করে। শাহ আমানত সেতুতে প্রাইভেট কারের জন্য ৭৫ টাকা এবং জিপের জন্য ১০০ টাকা দিতে হয়। আর মাইক্রোবাসের জন্য দিতে হবে ২৫০ টাকা। শাহ আমানত সেতুতে এই হার ১০০ টাকা।

 

৩১ বা এর চেয়ে কম আসনের বাসের জন্য ৩০০ এবং ৩২ বা তার চেয়ে বেশি আসনের জন্য ৪০০ টাকা টোল দিতে হবে। যদিও শাহ আমানত সেতুতে নেওয়া হয় যথাক্রমে ৫০ ও ১৫৫ টাকা। টানেলে দিয়ে যেতে হলে ৫ টনের ট্রাককে ৪০০ টাকা, ৫ থেকে ৮ টনের ট্রাককে ৫০০, ৮ থেকে ১১ টনের ট্রাককে ৬০০ টাকা টোল দিতে হবে। তবে শাহ আমানত সেতুতে টোল নেওয়া হয় যথাক্রমে ১৩০, ২০০ ও ৩০০ টাকা। ট্রেইলরের টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার টাকা। শাহ আমানত সেতুতে এ হার ৭৫০ টাকা।

 

সেতু কর্তৃপক্ষের সূত্র জানায়, টানেলের টোল হার নির্ধারণে চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি একটি কমিটি গঠন করা হয়। গত ১২ মে সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের (সেতু বিভাগ) উপসচিব মো. আবুল হাসান দ্রুত সময়ের মধ্যে টোল হার নির্ধারণের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশনা দেন। পরে টোলের হার নির্ধারণ করা হয়।

 

এই টানেল নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারামুখী প্রথম বা উত্তর সুড়ঙ্গের খননকাজের উদ্বোধন করেন। ২ হাজার ৪৪৬ মিটার দীর্ঘ এই সুড়ঙ্গের খননকাজ শেষ হয় ২০২০ সালের ২ আগস্ট। দ্বিতীয় বা দক্ষিণ সুড়ঙ্গের খননকাজ শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর। গত বছরের ৭ অক্টোবর এই খননকাজ শেষ হয়।

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী টানেল চালু হওয়ার পর ২০২৫ সালে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। এ ছাড়া ২০৩০ সালে যানবাহন চলাচলের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সালে যানবাহনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ ৬২ হাজার। তবে টানেলের টোল হার সহনীয় পর্যায়ে রাখা না হলে, তা ব্যবহারে চালকরা অনাগ্রহী হবেন বলে মন্তব্য করেছেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের (আইইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার মজুমদার।

 

তিনি বলেন, ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে যাওয়ার জন্য বিকল্প হিসেবে শাহ আমানত সেতু রয়েছে। তাই টানেলের টোল নির্ধারণে এই সেতুর টোল হারের বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে। যদি টোল হার বেশি হয়ে যায়, তাহলে এই বিপুল বিনিয়োগে করা টানেল প্রত্যাশিত যান চলাচল করবে না।

 

প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দাবি, বঙ্গবন্ধু টানেল হতে যাচ্ছে দেশে অর্থনীতির গেম চেঞ্জার। এ টানেলের মাধ্যমে দেশের যোগাযোগব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। নতুন মাত্রা যোগ হবে পর্যটন শিল্পে। টানেলের অপর প্রান্তে গড়ে উঠবে ভারী শিল্প এলাকা। ওই এলাকা অর্থনৈতিক হাব হিসেবে পরিণত হবে। চীনের সাংহাই নগরীর আদলে চট্টগ্রাম শহর ও আনোয়ারা উপজেলাকে ওয়ান সিটি টু টাউন-এর আদলে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে তৈরি হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেল। এ টানেলের এক প্রান্তে রয়েছে আনোয়ারার ভারী শিল্প এলাকা। অন্য প্রান্তে চট্টগ্রাম নগরী, বিমান ও সমুদ্রবন্দর। এ টানেল শহর এবং গ্রামকে এক সুতায় সংযুক্ত করবে।

শেয়ার করুন