২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ০৪:৫২:২৫ অপরাহ্ন
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে চেয়ার ভাংচুর, অভিযুক্তদের রক্ষা করলেন ছাত্রলীগ সভাপতি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০২-২০২৩
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে চেয়ার ভাংচুর, অভিযুক্তদের রক্ষা করলেন ছাত্রলীগ সভাপতি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফোকলোর বিভাগের নবীনবরণ ও বিদায় অনুষ্ঠান চলাকালে বিশৃংখলা ও চেয়ার ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আভিযুক্তদের রক্ষা করে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছেন রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া। এতে ছাত্রলীগের সভাপতির প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওই বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ফোকলোর বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, শনিবার বিকেলে ফোকলোর বিভাগের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বিদায় এবং নবাগত ২৪ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বরণ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিলো। ওই বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন অধ্যাপক ইলিয়াছ হোসেন। সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত আয়োজনের প্রথম পর্ব শেষ করে সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় অতিথিরা মঞ্চে আসনগ্রহন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার সময় ছাত্রলীগের কিছু কর্মী আসনের মাঝখানে হট্টগোল, চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও ভাঙতে শুরু করেন।

একপর্যায়ে ছাত্রীদের লাঞ্ছিত করার পরিস্থিতি তৈরি হলে ফোকলোর বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের ধাওয়া করেন। এসময় মূল বিশৃংখলাকারীকে ধাওয়া করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি দল টুকিটাকি চত্বরের দিকে এগিয়ে গেলে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাসহ আরও কয়েকজন তাকে ধরতে বাঁধা দেয়। সেখানে পাল্টা ফোকলোর বিভাগের শিক্ষার্থীদের মারতে যায় তারা। পরে ফোকলোর বিভাগের শিক্ষার্থীরা বাকি দুইজনকে আটক করে বিভাগের অফিস কক্ষে রেখে শিক্ষকদের মাধ্যমে পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে খবর দেয়।

পরে প্রক্টরিয়াল বডির দুইজন সদস্য, মতিহার থানার দুইজন সাব-ইন্সপেক্টর, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন, ফোকলোর বিভাগের সভাপতি এবং শিক্ষকবৃন্দের উপস্থিতিতে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাহির থেকে জোরপূর্বক শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ আচরণ করে ছাত্রলীগের সভাপতি ওই দুইজনকে নিয়ে যায়। এভাবে কাউকে তোয়াক্কা না করে বিশৃংখলাকারীদের নিয়ে যাওয়ায় ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত এবং অপরাধীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ফোকলোর বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা প্রক্টরিয়াল বডির কোনো সদস্য কোনো শিক্ষার্থীর গায়ে হাত তোলার অধিকার নেই। আমি ফোকলোর বিভাগে গেলে ওইখানে আমাকে অপদস্ত করা হয়। পরে বিভাগের শিক্ষকদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমি ওই দুই শিক্ষার্থীকে নিয়ে আসি। যদি এ ঘটনায় তারা কোনো দোষত্রুটি করে থাকে তাহলে আমি তাদেরকে প্রক্টরিয়াল বডির কাছে নিয়ে যাবো।

ফোকলোর বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মিলে দুই বিশৃংখলাকারীকে বিভাগের অফিস কক্ষে নিয়ে আসেন। পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও গোলাম কিবরিয়াসহ আরও কয়েকজন তাদেরকে ছাড়িয়ে নিতে অফিস কক্ষে প্রবেশ করতে চাই। তখন আমাদের বিভাগের এক শিক্ষিকা তাদেরকে ভিতরে প্রবেশ করতে দিতে না চাইলে ওই শিক্ষিকার সঙ্গে অসদাচরণ করেন তারা।

বিশৃংখলাকারীদের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা দুইজনের পরিচয় জানতে পেরেছি। তারা হলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সৌমিক রহমান ও ইসলাম শিক্ষা বিভাগের আতিক হোসেন।

বিভাগের সভাপতি আরও বলেন, ‘নাট্যকলা বিভাগের একজন শিক্ষক গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমাদের সহকর্মী ও ফোকলোর বিভাগের হাবিবুর রহমান স্যারকে এখানে অনুষ্ঠান করা যাবে না বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু নাট্যকলা বিভাগের সভাপতির সঙ্গে কথা বললে তিনি সেই স্থানে অনুষ্ঠান আয়োজন করতে নিষেধ করেননি। এছাড়াও প্রক্টর অফিস থেকে এই স্থানে অনুষ্ঠান করতে অনুমতি নেওয়া ছিলো। এ ঘটনায় তিনিও জড়িত থাকতে পারেন।’

অভিযুক্তদের প্রক্টর দপ্তরে না নিয়ে কেনো ছাত্রলীগের সভাপতির কাছে ছেড়ে দেওয়া হলো এমন প্রশ্নে সহকারী প্রক্টর আবুল বাশার মোহাম্মদ সারওয়ার আলম বলেন, গোলাম কিবরিয়া আমাদের বলছিলো বিষয়টা ফয়সালা করে দেবে। আজকে দুপুরে প্রক্টর দপ্তরে কিবরিয়াসহ অভিযুক্তদের সঙ্গে এ বিষয়ে ফয়সালা হবে।

শেয়ার করুন