২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৮:২৭:০৯ অপরাহ্ন
রাজশাহীতে ফুটপাতে উচ্ছেদ অভিযান, কিছুক্ষণ পরে ফের আগের চিত্র
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৩-২০২৩
রাজশাহীতে ফুটপাতে উচ্ছেদ অভিযান, কিছুক্ষণ পরে ফের আগের চিত্র

রাজশাহী নগরের সাহেব বাজার এলাকায় ফুটপাতের দোকানগুলো উচ্ছেদে পুলিশের অভিযান। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী নগরের সাহেব বাজার এলাকায় ফুটপাতের দোকানগুলো উচ্ছেদে পুলিশের অভিযান।

রাজশাহীতে পুলিশের উচ্ছেদ অভিযানের আগেও মাসুদ রানা যেখানে দাঁড়িয়ে শরবত বিক্রি করছিলেন। পরেও সেখানেই তিনি শরবত বিক্রি করছেন। তিনি বলছেন, পুলিশ নাকি অভিযানের সময় বলেছে, রাজশাহীর মানুষ পুলিশ চেনে না। ঢাকার মানুষ পুলিশ চেনে ভালো। পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতা মো. ডলার। তিনি বললেন, সেদিন টিভিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অভিযান দেখলাম। তিনি ঘণ্টা পরেই আবার সব বসে গেছে।

রাজশাহী নগরের সাহেববাজার এলাকায় বৃহস্পতিবার দুপুরের অভিযান নিয়ে বিকেলেই এভাবে গল্প করছিলেন দুই ব্যবসায়ী। রাজশাহীতে অভিযানের পরপরই ব্যবসায়ীরা যে যাঁর জায়গায় বসে গেছেন। শুধু নগরের গণকপাড়ার দোকানগুলো রাস্তা থেকে ফুটপাতে তোলা হয়েছে।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরের গণকপাড়া এলাকা থেকে পুলিশ ফুটপাতের দোকান উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এই অভিযানে রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বিজয় কুমার বসাক, মহানগর ট্রাফিক পুলিশের উপকমিশনার অনির্বাণ চাকমা, বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেনসহ একদল পুলিশ সদস্য ছিলেন। এ সময় এক পুলিশ সদস্য মাইকে বলছিলেন, ফুটপাতে কোনো দোকানপাট থাকবে না। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ীরা দোকান গুটিয়ে নিচ্ছিলেন। তখন ব্যবসায়ীদের বলতে শোনা যায়, প্রতিবছর রমজানের শুরুতে এই ধরনের অভিযান চালানো হয়। এটা দেখে দেখে তাঁদের অভ্যাস হয়ে গেছে।

নগরের সাহেববাজার জিরো পয়েন্ট থেকে মনি চত্বর পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারেই এই অভিযান চালানো হয়। দক্ষিণ পাশে বিরাট তরমুজের স্তূপ নিয়ে বসেছিলেন রাজশাহী নগরের মিজানের মোড় এলাকার ব্যবসায়ী রুবেল। পুলিশের অভিযানের সময় তিনি কিছু তরমুজ সরিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের গলিতে রেখেছিলেন। অভিযানের পর গিয়ে দেখা যায়, দিব্যি তিনি সেখানেই তরমুজের স্তূপ নিয়ে ব্যবসা করছেন। তবে তাঁর স্তূপটা কিছুটা ছোট দেখাচ্ছে। জানতে চাইলে তিনি বললেন, এতগুলো তরমুজ তিনি কোথায় নিয়ে যাবেন। কিছুটা সরিয়ে রেখেছিলেন। সেগুলো এখনো আনা হয়নি। তাই কম লাগছে। উচ্ছেদ অভিযানের কিছুক্ষণের মধ্যেই ফুটপাতে আগের চিত্র ফিরে আসে।

রুবেলের পাশে দাঁড়িয়ে আখ মাড়াই করে রস বিক্রি করছিলেন এক যুবক। অভিযানের সময় মেশিনটা যেন কোথায় লুকিয়ে ফেলেছিলেন। বিকেলে গিয়ে দেখা গেল, তিনি আগের মতোই রস বিক্রি করছেন। অভিযানের সময় কোথায় ছিলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের তো পেট আছে। পেটের জন্যই আছি। আর কোথায় যাব?

আরডিএ মার্কেটের সামনে গুড়ের ঝুড়ি বিক্রি করছিলেন বাবু। এক নামে সবাই তাঁকে ঝুড়ি বিক্রেতা বাবু নামেই চেনেন। তিনি বললেন, ‘কী করব, দোকান ঢাইক্যা থুয়ে পালিয়ে গেছলাম। আবার আইসল্যাম। নগরের বেলদার পাড়া এলাকার টুপি বিক্রেতা মিনহাজ অভিযানের পরে আবার এসে দোকান মেলেছেন। তিনি বললেন, বছরকার দিনে এই ব্যবসাটা কইরে খাই। এটা সিজিনাল ব্যবসা। এই দুই দিন না করতে দিলে কী কইরব বুলেন?

একটি বড় ফলের দোকান ফুটপাত থেকে রাস্তার ওপরে বসানো হয়েছে। অভিযানের আগেও একইভাবে মেলা ছিল। দোকানে কোনো মালিক ছিলেন না। কয়েকজন কর্মচারী বেচাকেনা করছেন। দোকানের এক কর্মচারী পেছনের একটি ভবনের ছাদ দেখিয়ে বললেন, কিছু মাল ওই ছাদের ওপরে তুলে রেখেছিলেন। কিছু ঢেকে রেখেছিলেন। কর্মচারী অনিল কুমার বললেন, ‘কী কোইরব স্যার, বছরকার ব্যবসা!

তবে নগরের গণকপাড়ার মোড় থেকে রাজশাহী প্রেসক্লাব পর্যন্ত রাস্তায় যে কাপড়ের দোকানগুলো মেলানো ছিল, অভিযানের পরে ব্যবসায়ীরা পাশে থাকলেও দোকান মেলেননি। পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে ফুটপাতের ওপরে তুলে রেখেছেন। প্রতিটি দোকানই চাকা লাগানো গাড়ি। প্রয়োজনমতো এদিক–সেদিক টেনে নেওয়া যায়। অভিযানের পরই আবার ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওসি সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, প্রশ্নই ওঠে না। আবার পাঠাচ্ছি।

শেয়ার করুন