দীর্ঘ সাত বছর পর আরো ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুই হাজার ৬৮৮ জন শিক্ষক-কর্মচারীর চাকরি সরকারি হচ্ছে। আগামী রবিবার প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে এই প্রস্তাব উঠতে যাচ্ছে। এরপর প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি সরকারি করা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৪৮টি কলেজ ও দুটি স্কুলের মোট দুই হাজার ৬৮৮টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব সচিব কমিটির বৈঠকে উঠছে। মন্ত্রিপরিষদসচিব মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে এই বৈঠক হবে। সচিব কমিটির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এসব পদ সৃষ্টিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগ সম্মতি দিয়েছে। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন পাওয়ার পরই মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে এসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালে বিভিন্ন পর্যায়ে ৬৮০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (৩২৫ কলেজ ও ৩৫৫ স্কুল) সরকারি করা হয়। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। এর মধ্যে ৬৭৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীর চাকরি আত্তীকরণের লক্ষ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব (সরকারি মাধ্যমিক-১ অধিশাখা) আব্দুল মতিন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, এরই মধ্যে ১৫০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (১০০ স্কুল ও ৫০ কলেজ) প্রায় ছয় হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর চাকরি সরকারীকরণ হয়ে গেছে। বাকি ৫২৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীর চাকরি সরকারি করার বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ চলছে। মামলাজনিত জটিলতায় একটি কলেজ ও একটি স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীদের বিষয়টি স্থগিত রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৫২৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে গত ৫ ফেব্রুয়ারি আরো ১০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী আত্তীকরণের লক্ষ্যে তিন হাজার ৯১১টি পদ সৃষ্টির অনুমোদন দেয় সচিব কমিটি। আর আগামী রবিবার ৫০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুই হাজার ৬৮৮টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব সচিব কমিটির বৈঠকে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি হওয়ার পর শিক্ষক-কর্মচারীদের সরকারি করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একাধিকবার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার কথা ছিল। তাও হয়নি। এবার মার্চের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো ডাটাবেইস না থাকায় তথ্য সংগ্রহেও বিলম্ব হয়েছে। এ জন্য সরকারি হওয়া মোট ৬৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডাটাবেইস করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান মন্ত্রিপরিষদসচিব মাহবুব হোসেন আগে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব ছিলেন। তিনি সচিব থাকার সময় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। এ বিষয়ে তাঁর আগে থেকে জানা থাকায় কাজটি এবার দ্রুত হচ্ছে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি শুধু এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে সচিব কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শিগগিরই সব প্রতিষ্ঠানের কাজ শেষ হয়ে যাবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু ইউসুফ মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, এই কাজ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এককভাবে করে না। একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ জড়িত। তাই সবাইকে সমন্বয় করে কাজ করতে গিয়ে বিলম্ব হচ্ছে। তিনি বলেন, পদসৃষ্টির সব প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন বিভিন্ন পর্যায়ে তা অপেক্ষায় আছে।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, সরকারি হওয়া দেশের বেসরকারি স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি সরকারি হতে দেরি হলেও যেদিন থেকে প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের গেজেট হয়েছে সেদিন থেকেই তাঁরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাবেন।