পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যার অন্যতম পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান দাবি করেছেন— আমি নির্দোষ, আপনারা আমার জীবন নিয়ে খেলেছেন। ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি হওয়ার পর এক মাস সাত দিন জেল খেটেছেন।
গত ১৫ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতে জুয়েলার্সের দোকান উদ্বোধন করেন আরাভ খান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ দেশের কয়েকজন তারকাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আলোচনায় আসেন দোকানের কর্ণধার আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম।
সেই সময় আরাভ বিষয়ে জানা যায়, ২০১৮ সালে রাজধানীর বনানীতে একটি ফ্ল্যাটে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তা মামুন ইমরান খানকে খুনের মামলার আসামি তিনি। পরে ২০ মার্চ তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করে বলে জানান পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
আরাভ আলোচনায় আসার পর তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করে। তখন গত ২১ মার্চ ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে সবার কাছে দোয়া চেয়েছিলেন তিনি। পরে আর ফেসবুকে সক্রিয় দেখা যায়নি তাকে। তার পর গত ২১ এপ্রিল সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান। এর পর ফেসবুকে তাকে নিয়মিত দেখা না গেলেও গত ২ মে বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টায় ফেসবুকে তিনি লেখেন— ‘রাখে আল্লাহ মারে কে? আলহামদুলিল্লাহ।’
গত ২ মের পর থেকে ফেসবুকে ফের সক্রিয় দেখা যাচ্ছে তাকে। তবে গত ২১ মার্চের পর মাঝের এক মাস সময় তার অনুপস্থিতির ব্যাপারে কথা বলেছেন। জানিয়েছেন, মাঝে এক মাস সাত দিন ইন্টারপোলের জেলে থেকেছেন আরাভ।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা ৫৫ মিনিটে ফেসবুকে এক লাইভে আরাভ বলেন, অনেকে বলেছেন— আমি দুবাই থেকে পালিয়েছি। আমি পালানোর লোক না। কারণ আমি চুরি করিনি, আমি কেন পালাব।
আরাভ বলেন, ৯ থেকে ১০ বার বাংলাদেশ সরকার আমাকে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। পুলিশ প্রশাসন নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। অনেকেই বলেছেন— আমি পালিয়ে গেছি। আমি পালিয়ে যাইনি। আমি জানি, আমি অপরাধী না, তা হলে কেন আমি পালাব? আমাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়নি, আমিই গেছি। আমি মনে হয় কোনো পাপ করেছিলাম, সে জন্য আল্লাহতায়ালা আমাকে শাস্তি দিয়েছেন। আমার আগের ভিডিও নিয়ে অনেকেই ফেক আইডি খুলে সেসব ভিডিও প্রকাশ করেছে।
আরাভ আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে যখন রেড অ্যালার্ট জারি করে ইন্টারপোল, তখন আমাকে ফোন করে ওনারা। আমাকে জানায়, আপনার নামে একটা ফাইল এসেছে। আপনি আসুন, আপনাকে গ্রেফতার করব। গ্রেফতার করার থেকে আপনি আসা সর্বোচ্চ উত্তম। আমি ভাবলাম, আমি পালিয়ে বেড়ালে আমাকে তারা গ্রেফতার করবে। আমি তো পালানোর মতো ছেলে না। কারণ আমি তো চোর না যে আমি চুরি করেছি, এখন পালিয়ে বেড়াব।
তিনি বলেন, আমাকে ইন্টারপোলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এক মাস সাত দিন রাখা হয়। আমার জীবন থেকে এই কয়েক দিন ইন্টারপোলের জেলে কেটে গেল। সেখানে অনেক বড় বড় আসামির সঙ্গে জেল খেটেছি।
সাংবাদিকদের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, আমাকে কোনো কারণ ছাড়াই অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ জন্যই আমাকে জেল খাটতে হয়েছে। সাংবাদিকদের মধ্যে অনেকেই অসৎ। এই অসৎ সাংবাদিকদের দেশে-বিদেশে কোথায় কী আছে, এসব আমি খুঁজে ফেসবুকের মাধ্যমে তুলে ধরব।
তবে সাংবাদিকদের কে কে তার কাছে টাকা চেয়েছেন, এ বিষয়টি তিনি এখনো খোলাসা করেননি। এ বিষয়ে কোনো তথ্যপ্রমাণ তিনি এখনো উপস্থাপন করতে পারেননি।
তিনি দাবি করেন, আমি নির্দোষ ছিলাম আপনারা আমার জীবন নিয়ে খেলেছেন। ঘুসখোর কিছু সাংবাদিক আমাকে অপরাধী বানিয়েছে। আমি মামলার ছয় নাম্বার আসামি, কোর্ট এখনো কোনো রায় দেয়নি। আপনারা আমাকে জেল খাটিয়েছেন। এর ফল আপনারা একটা একটা করে পাবেন। অনেকেই আমার সঙ্গে আছে, আমিও তাদের সঙ্গে আছি।