দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে আওয়ামী লীগ। মাঠের বিরোধী বিএনপি অংশ নেবে, এমনটা ধরেই নির্বাচনী রোডম্যাপ তৈরি করছে ক্ষমতাসীনরা। চলছে ইশতেহার প্রণয়নের কাজ। তৃণমূলে চলছে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন। মিটিয়ে ফেলা হচ্ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। বিভিন্ন জরিপে চলছে দলীয় প্রার্থী বাছাই। নীতিনির্ধারক ফোরামের সদস্যরা এমন তথ্যই জানিয়েছেন।
দলীয় নেতারা বলছেন, আসছে ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাই এখনই নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। ২২ জুন বসছে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক। এ বৈঠকে নির্বাচনী গাইডলাইন দেবেন দলীয় সভানেত্রী। সেই গাইডলাইন নিয়েই তৃণমূলে যাবেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘২২ জুন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক আছে। সেখানে দলীয় সভানেত্রী নির্বাচনী গাইডলাইন দেবেন। তিনি যে গাইডলাইন দেবেন আমরা তা বাস্তবায়ন করব।’
জানা গেছে, নির্বাচনী প্রস্তুতি হিসেবে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের বিষয়গুলো প্রাধান্য দিয়ে ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। কী কী থাকবে ইশতেহারে সেগুলো সংযোজন-বিয়োজনের কাজ চলছে। আওয়ামী লীগের কয়েকজন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং দলীয় নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যক্তি বিষয়টি দেখভাল করছেন। শেখ হাসিনা জেলা-উপজেলার নেতাদের গণভবনে ডেকে কথা বলছেন। তাঁদের মতামত নিচ্ছেন। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে তাগিদ দিচ্ছেন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে। কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনের প্রতিও মনোযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের। সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ভোটের মাঠে কাজে লাগাতে নানা দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে যে পরিমাণ উন্নয়ন করেছে, সে কারণে আগামী নির্বাচনে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনী প্রস্তুতি অনেক আগেই শুরু করেছি। সময় ঘনিয়ে আসায় অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে জোর দিচ্ছি। ঢাকায় ডেকে জেলা-উপজেলা নেতাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। আসনভিত্তিক কেন্দ্র কমিটি গঠনের কাজ চলছে। পাশাপাশি সদস্য সংগ্রহ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। জেলা-উপজেলায় বর্ধিত সভা করা হচ্ছে। উন্নয়ন মেলা, পথসভা করা হচ্ছে। সব মিলে নির্বাচনী আমেজে কাজ চলছে।’
জানা গেছে, দলীয় সভানেত্রীর নিজস্ব লোক এবং কয়েকটি সংস্থা নিয়মিত জরিপ করছেন। এ জরিপে বর্তমান সংসদে থাকা এমপিদের কারও কারও জনপ্রিয়তার পারদ ওঠানামা করছে। কারও কারও ক্রমান্বয়ে কমতির দিকেই। ক্লিন ইমেজ ও অধিকতর গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে বাছাই করে রাখা হচ্ছে। চ্যালেঞ্জিং এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে যোগ্য প্রার্থীই দেবে ক্ষমতাসীনরা। দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, এ মুহূর্তে সবচেয়ে প্রচার-প্রচারণা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। উন্নয়ন কর্মকান্ডগুলো জনগণের সামনে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারলে তা নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সরকারের উন্নয়ন প্রচারের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেমন ব্যবহার করা হবে, তেমনি সহযোগী সংগঠনের নেতারাও ক্ষেত্রবিশেষ নিজ সংগঠনের ব্যানারে উন্নয়ন প্রচার করবেন। কৃষি ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের সাড়ে চৌদ্দ বছরের সাফল্য তুলে ধরে কৃষক লীগ হাটসভা করছে। কৃষক লীগ সভাপতি সমীর চন্দ জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২ কোটি বুকলেট ছাপিয়ে তারা হাটসভা করছেন। এতে কৃষি ক্ষেত্রে সরকারের উন্নয়ন এবং বিএনপি-জামায়াতের আমলে কী ছিল সেগুলো তুলে ধরা হয়েছে। একইভাবে যুবকদের জন্য সরকার কী করেছে, সেগুলো প্রচার করবে যুবলীগ। শিক্ষার্থীদের জন্য বর্তমান সরকারের গৃহীত কর্মকান্ড তুলে ধরবে ছাত্রলীগ। সামাজিক বেষ্টনীর আওতায় দেশের ৫ কোটি মানুষের সুফলগুলো স্বেচ্ছাসেবক লীগ তুলে ধরবে। খাতভিত্তিক উন্নয়নের চিত্র পোস্টার, বিলবোর্ড, ডিজিটাল ডিসপ্লে করে সারা দেশে পৌঁছানো হবে। পাশাপাশি থাকবে বিএনপি-জামায়াতের আমলের সঙ্গে তুলনামূলক চিত্রও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, রেডিও-টিভিতেও বিজ্ঞাপন আকারে দেখানো হবে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত চৌদ্দ বছরে সরকারের উন্নয়ন-অর্জনগুলো আমরা বুকলেট আকারে প্রকাশ করছি। ছোট ছোট ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করছি। পোস্টার করে গ্রামগঞ্জে পাঠানো হবে।’ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, একটি নির্বাচন শেষ হলে আরেকটি নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে আওয়ামী লীগ। সেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এখন কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।