রাজশাহীতে ultima wallet অ্যাপের মাধ্যমে প্রায় ৩০ জনের কাছে থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। আ্যপের মাধ্যমে প্রতারণা করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া ওই চক্রের মুল হোতার নাম মুনায়েম (৩০)। তিনি নগরীর মতিহার থানা এলাকার কোরিডোর মোড়ের মুনসুর আলীর ছেলে।
এ ঘটনায় প্রতারণার শিকার ডাসমাড়ি কোলিডোর মোড়ের মৃত: আতেব আলীর ছেলে সবুজ ও মৃত আজিমুদ্দির ছেলে লিটন প্রতারক চক্রের মুলহোতা মুনায়েমের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে মতিহার থানায়। তবে ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে প্রতারক মুনায়েমসহ চক্রটি।
জানা গেছে, মতিহার থানার দাসমাড়ি কোলিডোর মোড়ের মুনসুরের ছেলে মুনায়েমের ফাঁদে পড়ে ultima wallet অ্যাপের মাধ্যমে কোটি টাকা প্রতারণার শিকার হয়েছে এলাকার অন্তত ৩০ জন। এ তালিকায় রয়েছে নারী, পুরুষ, শিক্ষার্থী ও বেকার যুবকরাও। প্রতারক চক্রের মুল হোতার বিরুদ্ধে থানায় দুই ভুক্তভোগী অভিযোগ দিলেও অন্যরা লাভের টাকা পাওয়ার আশায় রয়েছে এখনও। প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে ওই এলাকার সবুজ ও লিটন ছাড়াও টাকা দিয়ে সর্বশান্ত হয়েছে ডাসমাড়ি এলাকার শিটন, মিলন, টিটু, সাদ্দাম, বাদশা, খুরশেদ, ফাইসালসহ অনেকেই। তাদের কাছে থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্রটি।
সূত্রমত্রে, বিভিন্ন মানুষের কাছে থেকে আনুমানিক এক লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে চার লক্ষ টাকা করে নিয়েছে প্রতারক চক্রটি। ওই এলাকার প্রায় ৩০ জন মানুষের কাছে মোট কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটির মুল হোতা মুনায়েম। প্রতারনার শিকার যুবকরা টাকা ফেরত চাইতে গেলে মুনায়েম দাবি করছে, সেও টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, আরএমপি মতিহার ডাসমাড়ি কোলিডোর মোড়ের সবুজ ও লিটনের এক এলাকায় বাড়ি হওয়ার সুবাদে মুনসুর আলীর ছেলে মো মুনায়েম (৩০) সাথে বন্ধু সুলভ পরিচয় হয়। গত ৭ মাস আগে প্রতারক মুনায়েম সবুজ ও লিটনসহ প্রায় ৩০ জন এলাকার বিভিন্ন পেষার মানুষ ও শিক্ষার্থীদের প্রলোভন দিয়ে প্রচার করে যে, ultima wallet আ্যপে তার মাধ্যমে টাকা দিলে প্রতিমাসে মোটা অঙ্কের লাভের টাকা পাওয়া যাবে। তার প্রলোভনে সরল মনে বিশ্বাস করে তার মাকে বলে গত ৬ মাস আগে কিস্তি থেকে ১ লাখ টাকা তুলে ও তার বোনের কাছে থেকে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে মোট ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা নগদ সবুজ তার বড় ভাই সুমনসহ এলাকার ৪ থেকে ৫ জন পরিচিত বন্ধুর উপস্থিতিতে মুনায়েমের বাড়িতে গিয়ে তার পিতা, মাতার সামনে তাকে নগদ টাকা প্রদান করে।
এভাবে লিটনও মুনায়েমকে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেই। এক মাস পরে লাভের টাকা হিসাবে ১০ হাজার টাকা নগদ প্রদান করে সবুজ কে মুনায়েম। তার পরে গত ৬ মাস অতিবাহিত হলেও আর কোন টাকা সবুজকে প্রদান করেনি মুনায়েম। গত ১ মাস যাবত তার কাছে পাওনা টাকা ও লাভসহ ২ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা চাইতে গেলে সবুজকে দিবো দিচ্ছি বলে টাল বাহানা করতে থাকে প্রতারক মুনায়েম। পরে সবুজ বুঝতে পারে তার সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। নিরুপায় হয়ে পরিবারের সাথে আলোচনা করে মতিহার থানায় মুনায়েমের বিরুদ্ধে লিখিতো অভিযোগ দিয়েছে সবুজ। তার কিছু দিন পরে একি বিষয় লিটন অভিযোগ দিয়েছে তার কাছে থেকে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক মুনায়েম। প্রতারণার শিকার সবুজ ও লিটনসহ প্রায় ২০ থেকে ৩০ জন মানুষ মুনায়েমের প্রলোভনে পড়ে সরল মনে বিশ্বাস করে মুনায়েমকে প্রায় কোটি টাকা দিয়ে বর্তমানে সর্বশান্ত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে তরা।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মতিহার এলাকার নারী ও পুরুষ মিলে প্রায় ৩০ জন মানুষের কাছে থেকে ultima wallet আ্যপের মাধ্যমে টাকা ইনভেস্ট করার কথা বলে মুনায়েম প্রায় কোটি টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছে। প্রথম ২ থেকে ১ মাস কাউকে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা করে দিয়েছে। এ কারনে মানুষ ভরসা পেয়েছে চক্রটির প্রতি। সাম্প্রতিক গত ৮ মাস আগেও প্রতারক মুনায়েম রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। কিন্তু হঠাৎ করে বিপুল পরিমানের সম্পদের মালিক হয়ে গেছেন। তার পিতা মুনসুর চা বিক্রেতা। কিন্তুু তার ছেলে মাঝে মাঝে কক্সবাজারের ফাইবস্টার হোটেলে বিলাশ বহুল চলা ফেরা, খাওয়া, থাকা ও ফুর্তিকরার কিছু ছবি তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে দেখা যায়। বর্তমানে ওই অ্যাপে আর প্রবেশ করতে পারছেন না গ্রাহকেরা। তার পর থেকে এলাকায় গাঁঢাকা দিয়ে থাকে মুনাইম। কেউ মুনায়েমের বাড়িতে গিয়ে টাকা ফেরত চাইতে গেলে তাদে উল্টা চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে জেলখানায় ঢুকিয়ে দেবার হুমকি দেই মুনায়েম ও তার বাবা মুনসুর।
এ বিষয় মুনায়েম তার মাধ্যমে অ্যাপে টাকা ইনভেষ্ট করার বিষয় স্বীকার করলেও টাকা নিয়ে প্রতারণার বিষয় অস্বীকার করছে। তার দাবি, আমাকে যে সব বড় ভাই এরা এ বিষয় প্রচার করতে বলেছে তাদেরকে ধরেন। আমিও প্রতারণার শিকার হয়েছি টাকা দিয়ে। শুধু সবুজ, লিটন না, আরো অনেকেই প্রতারণার শিকার হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমি কোথা থেকে টাকা দিবো। টাকা কম্পানি দেবে। প্রতারণার শিকার সবুজকে টাকা ফেরত দেয়ার জন্য এক মাস সময় নিলেও বর্তমানে সে বলছে, তার টাকা ফেরত দিলে সবার টাকা ফেরত দিতে হবে। এ ছাড়া এলাকার প্রায় ৩০ জন মানুষের কাছে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয় অস্বীকার করেন তিনি।
এ বিষয় আরএমপি মিডিয়া মুখপাত্র এডিসি রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এ বিষয়ে।