২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০২:১০:০৮ অপরাহ্ন
সিঙ্গার ও রেডিসনের ৫৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৭-২০২৩
সিঙ্গার ও রেডিসনের ৫৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকি

সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড ও পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন পৃথকভাবে ৫৬ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। আইন ও বিধিবহির্ভূতভাবে গৃহীত রেয়াত গ্রহণ করে সিঙ্গার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে ৩৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আর সেনা হোটেল ডেভেলপমেন্টস লিমিটেডের পাঁচ তারকাবিশিষ্ট হোটেল রেডিসন ফাঁকি দিয়েছে ২২ কোটি ২৮ লাখ ৯৪ হাজার টাকার ভ্যাট। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্য-উপাত্ত বলছে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সিঙ্গারের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুন মেয়াদের নিরীক্ষায় অপরিশোধিত ভ্যাট ও উৎসে ভ্যাট বাবদ ১৪ কোটি ২৬ লাখ ২৮ হাজার ৬৯২ টাকা ফাঁকি উদ্‌ঘাটিত হয়েছে। একই সময়ের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইন ও বিধিবহির্ভূতভাবে ২ লাখ ২১ হাজার ১০৮ দশমিক ৮০ টাকা রেয়াত গ্রহণের তথ্য উঠে এসেছে। এ ছাড়া ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে আইন ও বিধিবহির্ভূতভাবে গৃহীত রেয়াত ও অপরিশোধিত মূসক/উৎসে মূসক বাবদ ২০ কোটি ৩১ লাখ ৫২ হাজার ৩ টাকা ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, সিঙ্গার লিমিটেড ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর কর মেয়াদের তিন ইউনিটের সমন্বিত নিরীক্ষায় উদ্‌ঘাটিত বকেয়া বাবদ মোট ৩৪ কোটি ৬০ লাখ ১ হাজার ৮০৩ দশমিক ৮০ টাকা ফাঁকির তথ্য উঠে এসেছে। এই টাকা আদায়ের জন্য বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (ভ্যাট) পক্ষ থেকে এনবিআরকে আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। 

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটি রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার (এসি), টেলিভিশন, ওয়াশিং মেশিন, ওভেন, সুইং মেশিন, কম্পিউটার ও গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত গ্রিন্ডার, ইলেকট্রিক কেটলি, রাইস কুকার, ভ্যাকুম ক্লিনার, স্টিম আয়রনসহ অন্যান্য পণ্য নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে।

এ বিষয়ে সিঙ্গারের কোম্পানি সচিব কাজী আশিকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভ্যাট ফাঁকি এনবিআরের সঙ্গে যতগুলো কোম্পানি ব্যবসায় আছে, থাকবে—চলমান একটি প্রক্রিয়া। আমাদের পক্ষ থেকে যে টাকা পরিশোধ করা হয়েছে, তারা (এনবিআর) হয়তো ভুলে সেটা বিবেচনায় নেয়নি। আপিল থাকবে, ট্রাইব্যুনাল থাকবে; তারপর একটা সমঝোতা হবে। এনবিআরের লক্ষ্য রাজস্ব আদায়, আমাদের লক্ষ্য আইনের মধ্যে থেকে সর্বনিম্ন যতটা দেওয়া যায়। এটা একটা প্রক্রিয়া। এখানে ফাঁকির কিছু নেই।’

এনবিআরের অধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিটের করা তিনটি রিট পিটিশন ও পরবর্তী সময়ে তিনটি সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল এবং সর্বশেষ সিভিল রিভিউ পিটিশনের রায়ে হোটেল রেডিসনকে ২২ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমার আদেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, হোটেল রেডিসন ২০০৫-০৬, ২০০৬-০৭, ২০০৭-০৮ এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ভ্যাট ও ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাবদ ৬ কোটি ৯২ লাখ ২৭ হাজার ৮০৬ দশমিক ২০ টাকা ফাঁকি দিয়েছে। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১১ সালের মার্চ পর্যন্ত ১২ কোটি ৪২ লাখ ১৪ হাজার ৮১ দশমিক ৮২ টাকা এবং ২০০৮ সালের জুলাই থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত উক্ত সেবার ওপর অপরিশোধিত সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট বাবদ ২ কোটি ৯৪ লাখ ৫২ হাজার ৯৪৯ দশমিক ২৭ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়নি।

প্রতিবেদন সূত্রে আরও জানা গেছে, আদালতের আদেশ মোতাবেক নিরঙ্কুশ বকেয়া পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন ও বিধি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ (ফ্রিজ) করা হয়। পরে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তিন কিস্তিতে টাকা জমা দেওয়ার অনুরোধ করা হলে ব্যাংক হিসাব অপরিচালনাযোগ্য আদেশ প্রত্যাহার করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালের ১৩ জুলাই ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৫৮ হাজার ৮৭৫ টাকা জমা দেয়। এরপর তারা তিনটি ডিমান্ড নোটিশে দাবিকৃত অর্থের পরিমাণ সংশোধন করে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান থেকে হোটেল রেডিসনকে অব্যাহতি প্রদানের আবেদন করে।

শেয়ার করুন