০২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৮:১৮:০৭ পূর্বাহ্ন
গভীর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহ দেখাচ্ছে বিদেশিরা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৮-২০২৩
গভীর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহ দেখাচ্ছে বিদেশিরা

উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) সংশোধন করায় গভীর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশি কোম্পানি আগ্রহ দেখাচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক কোম্পানি মৌখিকভাবে তাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে। মার্কিন একটি কোম্পানি লিখিতভাবে তাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে। শিগগিরই আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে। আগামী ৭-৮ বছরের মধ্যে সমুদ্র থেকে গ্যাস পাওয়া যাবে।


শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই ভবনে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। ‘বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার : বঙ্গবন্ধুর দর্শন’ শীর্ষক সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম।


জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর ৩ বছরের শাসনামলে বঙ্গবন্ধু জ্বালানি নিরাপত্তার খুঁটি স্থাপন করে গেছেন। ৭৫-এ মৃত্যুর কয়েকদিন আগেও বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে গ্যাস কূপগুলো জাতীয়করণ করেন এবং মালিকানা কিনে নেন। সেই সিদ্ধান্তের কারণে অর্থনীতিতে ৩ লাখ কোটি টাকা যোগ হয়েছে। এমন দূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণেই তিনি বাঙালি জাতির পিতা। তার মৃত্যুর পর সোনার বাংলার স্বপ্ন আর কেউ দেখাতে পারেনি। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎ খাতকে বেসরকারিকরণ করে এবং ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করে। এরপর বিএনপির ক্ষমতায় এসে এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গ্রিডে যুক্ত করতে পারেনি।


তিনি আরও বলেন, এখন সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে সাশ্রয়ী মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ করা। এজন্য জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। এখন ৪৫ দিনের জ্বালানি তেল মজুতের সক্ষমতা আছে, এটি বাড়িয়ে ৩ মাস করার জন্য ডিপো স্থাপন করা হয়েছে। নতুন গ্যাস কূপ খননে বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ চলছে। আগামী ২ বছরের মধ্যে নতুন কূপ খনন করা হবে, এজন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হবে। এলএনজি আমদানিতে কাতার, ওমানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করা হয়েছে।


ব্যবসায়ীদের জন্য পরিকল্পিত এলাকা (ইকোনমিক জোন) শিল্প স্থাপনের আহ্বান জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, গাজীপুর, আশুলিয়া ও নারায়ণগঞ্জে যত্রতত্র শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। আশুলিয়ায় একটা শিল্পের জন্য লাইনে গ্যাস টানা হলো। সেই লাইন ফুটো করে আরও ২০টা শিল্পে সংযোগ দেওয়া হলো। পরে সেই লাইন থেকে একটা গ্রামের ৫ হাজার সংযোগ দেওয়া হয়। তাহলে একটা লাইনে কতটুকু গ্যাস পাওয়া যাবে। পরিকল্পিত এলাকায় শিল্প স্থাপন করলে গ্যাস দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। এই মুহূর্তে ভোলায় বিনিয়োগ করলে ৩০ বছর নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দিতে পারব।


এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, এক সময় কম দামে জ্বালানি পাওয়া যেত। এখন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী জ্বালানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা কমে গেছে। তারপরও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জ্বালানি পাওয়া যাচ্ছে না। তাই নিজস্ব সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য বাপেক্সকে শক্তিশালী করতে হবে, সমুদ্রে গ্যাস উত্তোলনে মনোযোগ দেওয়া, কয়লাভিত্তিক আরও বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা দরকার।


মূল প্রবন্ধে ড. বদরুল ইমাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর দর্শন ছিল স্বনির্ভর বাংলাদেশ। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে গ্যাসক্ষেত্র না কিনলে গ্যাসের উৎপাদন থাকতই না। ’৭৩-৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু পুরো সমুদ্রকে অনুসন্ধানের আওতায় এনেছিলেন। তাকে হত্যার পর সেই কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। আজ পর্যন্ত এখনো কমপ্রিহেনসিভ অনুসন্ধান করা হয়নি।


তিনি আরও বলেন, পার্শ্ববর্তী ত্রিপুরায় ১৬০টি কূপ খনন করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে খনন করা হয়েছে ১০০টি কূপ। বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ অনুসন্ধান করাই হয়নি। দেশের যে ভূতাত্ত্বিক রূপ তাতে অনুসন্ধান করা গেলে আরও বড় বড় গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করা যাবে।


মূল প্রবন্ধের ওপর বক্তব্য রাখেন ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক আব্দুল আজিজ পাটোয়ারি, জ্বালানিবিষয়ক ম্যাগাজিন এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ারের সম্পাদক মোল্লা এম আমজাদ হোসেন, বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শোয়ের প্রমুখ।


শেয়ার করুন