রাজধানীর জুরাইন রেলগেট এলাকায় উল্টো পথে আসা মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চাওয়াকে কেন্দ্র করে ট্রাফিক সার্জেন্টসহ তিন পুলিশ সদস্যকে মারধরের মামলায় আইনজীবী ইয়াসিন জাহান নিশানকে জামিন দিয়েছেন আদালত। তবে তার স্বামী ও ভাইসহ পাঁচ জনের ৩ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।
বুধবার (০৮ জুন) বিকেলে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন এই আদেশ দেন।
রিমান্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামি হলেন- মোটরসাইকেল চালক ও বার্তা বিচিত্রা পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া সোহাগ উল ইসলাম রনি, তার শ্যালক ইয়াসিন আরাফাত ভূঁইয়া, শরিফ, নাহিদ ও রাসেল।
এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শ্যামপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) খন্দকার জালাল উদ্দিন মাহমুদ ৬ আসামিকে আদালতে হাজির করেন। এরমধ্যে ৫ আসামির ৭ দিন করে রিমান্ড এবং ওই নারী আইনজীবীকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তিনি।
এদিকে, আইনজীবীকে গ্রেপ্তারের খবরে তার সহকর্মীরা আদালত প্রাঙ্গণে এসে ভিড় করেন। এ সময় তার জামিন চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন আইনজীবীরা। পুলিশের বিরুদ্ধেও তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন। হৈচৈর কারণে আদালতের বিচারকাজ বিলম্ব হয়। বিচারক বিকেল ৩টা ৫ মিনিটের দিকে এজলাস থেকে নেমে যান। এরপরও আইনজীবীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক ও বর্তমান নেতারাও আসেন শুনানিতে। তারা আইনজীবীদের শান্ত থাকতে বলেন। এরই মাঝে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
আসামিদের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী কাজী নজিব উল্যাহ হিরু, এহসানুল হক সমাজীসহ কয়েকজন রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। ওই নারী আইনজীবীরও জামিন আবেদন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এর বিরোধিতা করা হয়।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ৫ আসামির তিন দিনের রিমান্ড এবং একজনকে জামিনের আদেশ দেন।
এর আগে মঙ্গলবার (৭ জুন) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখারুল আলম সাংবাদিকদের জানান, সকাল পৌনে ১০টার দিকে জুরাইন রেলগেট এলাকায় উল্টোপথে আসছিল একটি মোটরসাইকেল। তাতে এক নারীসহ দুজন ছিলেন। কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট আলী হোসেন কাগজপত্র দেখতে চাইলে মোটরসাইকেল চালক দুর্ব্যবহার শুরু করেন। পোশাক ও অন ডিউটিতে থাকা ট্রাফিক সার্জেন্টকে পরিচয়পত্র দেখাতে বলেন। পরে দুজনকে পুলিশ বক্সের নেওয়া হলে সঙ্গে থাকা নারী উত্তেজিত হয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। তখন আশপাশে থাকা সুযোগ সন্ধানীরা নারী লাঞ্ছনার অভিযোগ তুলে সার্জেন্ট আলী হোসেনকে বেধড়ক মারধর ও পুলিশ বক্সে ভাঙচুর চালায়। আর অভিযুক্ত মোটরসাইকেল চালক তার বুকের ওপর পা তুলে চেপে বসেন। এ সময় ঘটনাস্থলে উৎসুক জনতার মধ্য থেকে একজন সার্জেন্ট আলী হোসেনের হাতে ছুরিকাঘাত করেন।
এ অবস্থায় সার্জেন্টকে উদ্ধারে আসা ট্রাফিক কনস্টেবল সিরাজুল ইসলাম ও শ্যামপুর থানার উপ-পরিদর্শক উৎপল চন্দ্রকেও বেধড়ক মারধর ও ধাওয়া করা হয়। খবর পেয়ে শ্যামপুর থানার পুলিশ অতিরিক্ত ফোর্স পাঠিয়ে তাদের উদ্ধার করে।
আহত তিন পুলিশ সদস্যের মধ্যে সার্জেন্ট আলী হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার হাতে ২১টি সেলাই দিতে হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতেই তিনজনের নাম উল্লেখসহ সাড়ে চারশ জনকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ।