ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজার থেকে মাধখলা পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার অংশ বেহাল হয়ে পড়েছে। এই সড়কের অন্তত ১০টি পয়েন্টে তৈরি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ। অব্যাহত ভারী বর্ষণে এসব গর্ত সারাক্ষণই পানিতে পূর্ণ থাকে। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। যানবাহনের ধীরগতির কারণে লেগে থাকছে যানজট। এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে লাগছে তিন ঘণ্টা। এতে ভোগান্তি বাড়ছে যাত্রী ও চালকদের।
জানতে চাইলে গাজীপুর জেলা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কয়েক দিনের ধারাবাহিক বৃষ্টিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মহাসড়কে তৈরি হওয়া খানাখন্দ সংস্কারের বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। ভাঙাচোরা অংশগুলো দ্রুত সংস্কার করে ভোগান্তি দূর করা হবে।’
গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজার থেকে মাধখলা পর্যন্ত মহাসড়কের কোনো কোনো পয়েন্টে সড়কের কার্পেটিং উঠে গেছে। বেরিয়ে এসেছে ইট-সুরকি। ছোট-বড় গর্তের কারণে ধীরগতিতে চলতে হচ্ছে যানবাহনকে। এতে মহাসড়কের জৈনা বাজার এলাকার নাসির গ্লাস, জৈনা বাসস্ট্যান্ড, জৈনা বাজার শিশুতোষ বিদ্যাঘর, নয়নপুর বাসস্ট্যান্ড, এমসি বাজার বাসস্ট্যান্ড, রঙ্গিলা বাজার বাসস্ট্যান্ড, মাওনা পল্লী বিদ্যুৎ মোড় ও মাওনা উড়াল সড়কের দুপাশের অংশে গাড়ির জটলা লেগেই থাকছে। এমসি বাজার বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় একটি পরিবহন কোম্পানির বাসচালক রমজান আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শ্রীপুর অংশে ব্যাপক খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। খানাখন্দের কারণে বাস চালাতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। সব সময় সড়কে যানজট লেগেই থাকে। খানাখন্দে ভরা সড়ক দিয়ে চলাচলের সময় গাড়িতে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি হয়। এ নিয়ে যাত্রীরা খুব বিরক্ত হয়। নয়নপুর বাসস্ট্যান্ডে ট্রাকচালক নজরুল ইসলাম বলেন, ভাঙাচোরা সড়ক দিয়ে গাড়ি চালাতে খুবই কষ্ট হয়। অনেক সময় ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। এক ঘণ্টার রাস্তা যেতে অনেক সময় তিন ঘণ্টা লাগছে। জ্বালানি খরচ বেশি হচ্ছে। জৈনা বাজার বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় সারফুল ইসলাম নামের এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি বাসে ঢাকা থেকে সেখানে এসেছেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পুরো সড়কে খানাখন্দ। যে পরিমাণ ঝাঁকি খেয়েছি, পেটের নাড়িভুঁড়ি সব নড়ে গেছে। খুবই কষ্ট হয়েছে আসতে। গাড়ি আসছে ধীরগতিতে। সময় লেগেছে অনেক বেশি।’
কথা হলে মহাসড়কের পাশের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, খানাখন্দের কারণে এই সড়ক দিয়ে মালামাল পরিবহনে তাঁদের বিপাকে পড়তে হয়। সহজে যানবাহন পাওয়া যায় না। পেলেও অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হয়। যানবাহনের চালকদের দাবি, ভাঙাচোরা রাস্তায় যাতায়াতে তাঁদের জ্বালানি খরচ কয়েক গুন বেড়ে যায়। ফলে আগের থেকে এখন ভাড়া কিছুটা বেশি রাখেন তাঁরা। অনেক সময় গর্তে আটকা পড়ে নষ্ট হয় যানবাহন। তখন লোকসানে পড়তে হয় তাঁদের।
মাওনা চৌরাস্তা বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় তাকওয়া হাইওয়ে মিনি পরিবহনের চালক লাল মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, মহাসড়কের উভয় লেনের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যাপক খানাখন্দ। গাড়ি চালাতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। গাড়ির যন্ত্রপাতি বিকল হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বড় পরিবহনের চেয়ে ছোট যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে বেশি। মোটরসাইকেলের চালক নাজিম উদ্দিন বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে প্রতিদিন কর্মস্থলে যেতে হয়। রাতে বাড়ি ফেরার পথে খুবই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। খানাখন্দে ভরা গর্তের ভেতর পানি জমে থাকার কারণে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনাও।
মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কংকন কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শ্রীপুর অংশে খানাখন্দের কারণে যাত্রী ও চালকদের খুবই ভোগান্তি হচ্ছে। প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ব্যবস্থা নেবে।’