দেশে প্রথমবারের মতো বৈদ্যুতিক চার্জিং স্টেশনের (ইভি চার্জিং) যাত্রা শুরু হলো। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) সহায়তায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অডি বাংলাদেশ-প্রোগ্রেস মোটর ইমপোর্টস লিমিটেডের কার্যালয়ে এই স্টেশন চালু করা হয়েছে। ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই স্টেশন একটি বৈদ্যুতিক গাড়ি ৪০ থেকে ৪৫ মিনিটে পুরোপুরি চার্জ করা সম্ভব হবে।
প্রথম চার্জিং স্টেশনটি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উদ্বোধন করেন বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ¦ালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) চেয়ারম্যান মুনীরা সুলতানা, ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান, অডি বাংলাদেশ-প্রোগরেস মোটর ইমপোর্টস লিমিটেডের পরিচালক (অর্থ) মো. হাসিব উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ সচিব বলেন, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো এখন বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহার করে। আমাদেরও ক্রমান্বয়ে সেদিকে যেতে হবে। ফসিল ফুয়েল থাকবে না। তখন ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল সর্বত্র চালু হবে। বিদ্যুৎ সচিব জানান, ইতোমধ্যে ইলেকট্রিক্যাল ভেহিক্যাল চার্জিং গাইড লাইন অনুমোদন হয়েছে। আশা করছি সারাদেশে ইভি চাজিং স্টেশন চালু হয়ে যাবে।
২০৩৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশের সব জায়গায় ইলেকট্রিক গাড়ি চলবে জানিয়ে বিদ্যুৎ সচিব উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সারাদেশে ইভি চার্জিং স্টেশন প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।
অডি বাংলাদেশ-প্রোগরেস মোটর ইমপোর্টস লিমিটেডের পরিচালক (অর্থ) মো. হাসিব উদ্দিন অনুষ্ঠানে বলেন, ডিজেলে এক লিটারে গাড়ি চলে ১০ কিলোমিটার। সেখানে প্রতি কিলোমিটার খরচ পড়ে ১৩ টাকা। কিন্তু বৈদ্যুতিক চার্জে গাড়ি প্রতি কিলোমিটার আড়াই টাকার থেকে দুই টাকা ৯০ পয়সায় খরচ পড়বে। অর্থাৎ জ¦ালানি তেলের তুলনায় অনেক কম খরচে আগামী দিনে বাংলাদেশে গাড়ি চলবে। সারাদেশে আরও অন্তত এগারোটি চাজিং স্টেশন স্থাপন করবে তাদের কোম্পানি, এমন তথ্য তিনি জানান।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল (ইভি) চাজিং বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। সারাদেশে ইভি চাজিং স্টেশন স্থাপন হলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সবুজ জ¦ালানি পরিবহন ব্যবস্থা চালু হবে। কার্বনমুক্ত পরিবেশ হবে।
ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল (ইভি) কীভাবে কাজ করে
ইভি জ্বালানি হিসেবে বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করে থাকে। এই শক্তি জমা থাকে যানের ভেতর স্থাপিত লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিতে। ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে সঞ্চিত ব্যাটারির শক্তি কমে যায়। ফলে আবার ব্যবহারের জন্য ব্যাটারি চার্জ দিতে হয়। চার্জিং স্টেশনে এই গাড়ির ব্যাটারি চার্জ দিতে হয়। বৈদ্যুতিক যান ব্যবহারের সুবিধাগুলোর মধ্যে অন্যতম পরিবেশ দূষণ কম হয়। যাতায়াত খরচ, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম হয়। এই গাড়ি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর। শব্দ দূষণ হয় না। এ ছাড়া ব্যবসাবান্ধন গাড়ি। অর্থ সাশ্রয়ের এক হিসাবে দেখা গেছে, ইলেকট্রিক গাড়ি তেলভিত্তিক গাড়ি থেকে অনেক বেশি অর্থ সাশ্রয়ী। ডিজেলের গাড়ি ব্যবহারে যেখানে ২৩ শতাংশ খরচ সাশ্রয় হয় সেখানে ইলেকট্রিক গাড়ি ব্যবহারে ৭৫ শতাংশ খরচ সাশ্রয় হয়। প্রেসিডেন্স রিসার্চ অনুযায়ী দেখা গেছে, বিশ্বে ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যবহার বাড়ছে। বর্তমানে ইভি মার্কেটের বাজার মূল্য প্রায় ২৩ লাখ কোটি টাকা। ক্রমান্বয়ে ইভি গাড়ির ব্যবহার বাড়ছে। ২০৩২ সালের মধ্যে এই গাড়ির ব্যবহার হতে পারে প্রায় ১৮০০ বিলিয়ন।