২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৫:১৪:১৯ অপরাহ্ন
প্রক্সির টাকা না পেয়ে ভর্তিচ্ছুকে অপহরণ করলেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০৮-২০২৩
প্রক্সির টাকা না পেয়ে ভর্তিচ্ছুকে অপহরণ করলেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা

ভর্তি পরীক্ষায় চুক্তি অনুযায়ী প্রক্সির পুরো টাকা না দেওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি হতে আসা আহসান হাবীব নামে এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের কয়েক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। 


বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা ফজলুল হক হলে এ ঘটনা ঘটে। পরে সেই শিক্ষার্থীর মায়ের অভিযোগের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে শেরেবাংলা হল প্রাধ্যক্ষের সহযোগিতায় আপহরণকৃত ওই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর।


উদ্ধারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভর্তি পরীক্ষায় নিজের জালিয়াতির কথা স্বীকার করায় আহসান হাবীবকে নগরীর মতিহার থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।


এ ঘটনায় অভিযুক্ত অপহরণকারীরা হলেন— শেরেবাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী রাজু আহমদে, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী মহিবুল মমিন সনেট ও শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাকোয়ান সিদ্দিক ওরফে প্রাঙ্গণ। 


এদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময়ের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে এর আগেও ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।


প্রক্টর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আহসান হাবীবের বাসা রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায়। তিনি ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত 'সি' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি করে মেধাতালিকায় আসেন। মেধাক্রম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান আহসান হাবীব। বুধবার তার মা রেহেনা বেগমের সঙ্গে রাজশাহীতে আসার পর বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সংশ্লিষ্ট বিভাগে ভর্তি হন এই শিক্ষার্থী। ভর্তির পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিউটের শিক্ষার্থী শাকোয়ান সিদ্দিক ওরফে প্রাঙ্গণ তাকে শেরেবাংলা ফজলুল হক হলে নিয়ে গিয়ে চাঁদা দাবি করেন। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানতে পেরে হল প্রাধ্যক্ষের মাধ্যমে আহসান হাবীবকে প্রক্টর দপ্তরে হাজির করা হয়।


পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির কথা স্বীকার করে আহসান হাবীব। জিজ্ঞাসাবাদে জালিয়াতির জন্য প্রাঙ্গণের সঙ্গে চার লক্ষ টাকার চুক্তি হয় বলে জানান তিনি। এর মধ্যে তিনি রাজশাহীর একটি হোটেলে বসে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়েছেন। বাকি ৬০ হাজার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আজ (বৃহস্পতিবার) ভর্তির পরে আহসান হাবীবকে শেরেবাংলা হলে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে আবারও তার বাবার কাছে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন প্রাঙ্গণ। এ সময় শেরেবাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ এবং লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মহিবুল মমিন সনেট উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।


জানতে চাইলে আটক শিক্ষার্থীর বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, আজ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা হলে আমার ছেলেকে আটকে রেখে 'মুশফিক তন্ময়' এবং প্রাঙ্গণ নাম পরিচয় দিয়ে দুই ছেলে আমার নিকট তিন লাখ টাকা দাবি করে। তারা আমাকে নানাভাবে হুমকি প্রদান করে এক ঘণ্টার মধ্যে এ টাকাটা দিতে বলে। আমি টাকা দিতে পারব না বলে জানিয়ে দিই। এ সময় তাদের কথাগুলো রেকর্ড করতে গেলে বুঝতে পেরে তারা কল কেটে দেয়। পরে জানতে পারি তারা নাকি আমার ছেলেকে ভর্তি করিয়েছে। কিন্তু আমার ছেলে তার নিজ যোগ্যতায় মেধাক্রমে এসেছে। এর পরও যদি আমার ছেলে দোষী প্রমাণিত হয়, তা হলে তার পাশাপাশি 'মুশফিক তন্ময়' এবং 'প্রাঙ্গণ' নামের এ দুই শিক্ষার্থীসহ জড়িত সবাইকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।


চাঁদা দাবির ব্যাপারে জানতে শাখা ছাত্রলীগ নেতা মুশফিক তন্ময় এবং শাকোয়ান সিদ্দিক ওরফে প্রাঙ্গণের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। 


অন্যদিকে ঘটনাস্থলে থাকা শেরেবাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ বলেন, প্রাঙ্গণ ও সনেট ওই ছাত্রকে নিয়ে আমার হলে আসে। তারা জানায়, এই ছেলে প্রক্সি দিয়ে ভর্তি হয়েছে। এর নিকট চুক্তির টাকা পাব। সেটি তোলা লাগবে। তখন তারা ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে ফোন দিয়ে তিন লাখ টাকা দাবি করে। এ ব্যাপারে প্রক্সি কিংবা চাঁদার ব্যাপারে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।


এদিকে আহসান হাবীবকে আটকের তথ্যটি নিশ্চিত করে নগরীর মতিহার থানার ওসি রুহুল আমিন বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের নিকট এক শিক্ষার্থীকে হস্তান্তর করেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।


সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ওই শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি করে ভর্তি হয়েছে বলে স্বীকার করায় আমরা তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছি। তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে। জালিয়াতিতে জড়িত থাকায় তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মামলা হতে পারে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে তদন্তসাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


শেয়ার করুন