২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৭:২৬:৩৫ অপরাহ্ন
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিভক্ত বামেরাও
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৮-২০২৩
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিভক্ত বামেরাও

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘নির্বাচনকালীন সরকারের’ ধরন নিয়ে রাজনীতিতে বড় বিভক্তি বিরাজ করছে। এই বিভক্তি দেখা যায় দেশের বামপন্থী দলগুলোর মধ্যেও। ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বাধীন জোটে থাকা বাম দলগুলো বলছে, দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। অন্যদিকে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বাম দলগুলো চায় নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার। বড় দুই দলের নেতৃত্বাধীন বলয়ের বাইরে থাকা বাম দলগুলো ‘নির্দলীয় তদারকি’ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করছে। শব্দগতভাবে এ বিষয়ে বামদের মধ্যে তিনটি ধারা দেখা গেলেও বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে দুটি ধারা। এক পক্ষ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়, অন্যরা এর বিরোধী। 

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করার পর থেকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলসহ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে থাকা বাম দলগুলো এই ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে।


এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের দলের পক্ষ থেকে ভিন্ন কোনো প্রস্তাব নেই। আমরা এখন পর্যন্ত দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচনের কথা বলছি।’


বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘আমাদের নতুন কোনো প্রস্তাব নেই। সংবিধানে যে বিধিব্যবস্থা আছে, সেই মোতাবেক নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা উচিত। ভারত, আমেরিকা, কানাডাসহ গণতন্ত্রের সূতিকাগার সবখানেই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়। আর বিএনপি যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা বলে, তারাই তো সেই ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে।’


তবে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন যেমন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হবে না, তেমনি বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকটেরও সমাধান হবে না বলে মনে করছে অন্যান্য বাম দল।


বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শরিক দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচনকালীন একটা নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হবে। যাঁরা এই সরকারের অংশ হবেন, তাঁদের একটা আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতা সবার মধ্যে থাকতে হবে।’ এই সরকারের সময়সীমা কত দিন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে রাষ্ট্র, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশনসহ সকল ক্ষেত্রে যে জঞ্জাল তৈরি করেছে,

তা সত্যিই পরিবর্তন করে সবার জন্য একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হলে ৩ মাসে পারা যাবে কি না সন্দেহ আছে।’


জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘আমরা নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চাই। তবে সেটা তত্ত্বাবধায়কের মতো ৩ মাসের সরকার নয়। সেখানে কারা থাকবেন, কত দিন তাঁরা দায়িত্ব পালন করবেন, এমন সামগ্রিক রূপরেখা সরকার পদত্যাগের দাবি আদায়ের পর চূড়ান্ত হবে।’ গণতন্ত্র মঞ্চের বাইরে থাকা চারটি বাম দলের সমন্বয়ে গড়া গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।


অন্যদিকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাসদসহ ছয়টি বাম দলের সমন্বয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোট এবং সাতটি বামপন্থী দলের জোট ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা ‘নির্দলীয় তদারকি’ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ বিষয়ে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তদারকি সরকারের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা আমরা সচেতনভাবেই ঘোষণা করিনি। আমরা মনে করি, এই দাবিতে সরকার একমত হলে আন্দোলনকারী শক্তির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সেই রূপরেখা প্রণয়ন করতে কোনো সমস্যা হবে না।’


প্রিন্সের মতে, এই সরকার হবে শুধু নির্বাচনকালীন (তিন মাসের)। তিনি বলেন, ‘এই সরকার শুধু রুটিন কাজ করবে। এর বাইরে নীতিনির্ধারণী বা রাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা পালন করবে না। এখানে যাঁরা থাকবেন, তাঁরা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রধান অর্থাৎ রাষ্ট্রপতির কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন।’


প্রিন্স আরও বলেন, ‘একটা সুষ্ঠু ভোটের জন্য সরকারবিরোধী সবাই একটা নির্দলীয় সরকারের কথা বলছে। এখানে চিন্তাগত বড় কোনো পার্থক্য নেই।’


নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে বামপন্থীদের মধ্যে বিভক্তিকে স্বাভাবিকভাবেই দেখছেন রাজনীতি-বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই বিভক্তির মধ্যে সম্ভবত বৈচিত্র্য ও বিষাদ—দুটিই আছে। বামপন্থীরা নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে নানাভাবে ভাবছেন। এর মধ্যে বৈচিত্র্যের সৌন্দর্য আছে। আর বিষাদ এ কারণে যে তাঁদের মতৈক্যে উপনীত হওয়ার নজির খুব কম।’ তাঁর মতে, গণতন্ত্র অনির্বাচিত ব্যক্তিদের হাতে কোনো নামেই ক্ষমতা দেওয়াকে বৈধতা দেয় না। গণতন্ত্র চাইলে গণতন্ত্রের সারকথার বাইরে যাওয়া ঠিক নয়।


শেয়ার করুন