০৩ মে ২০২৪, শুক্রবার, ০৬:৫০:১৩ পূর্বাহ্ন
ইংল্যান্ড না স্পেন, কে নতুন চ্যাম্পিয়ন
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৮-২০২৩
ইংল্যান্ড না স্পেন, কে নতুন চ্যাম্পিয়ন

আঠারো শতকে ম্যারি ওলস্টোনক্র্যাফ্টের মতো নারী চিন্তাবিদকে পেয়েছিল ব্রিটিশরা। আর সেখানেই কিনা গত ৭০ দশক পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল মেয়েদের ফুটবল! শুধু যুক্তরাজ্যে নয়, ইউরোপ-লাতিনের অনেক দেশে সামাজিক রীতিনীতির দোহাই দিয়ে বিংশ শতাব্দীর লম্বা একটা সময় মেয়েদের কোনো টুর্নামেন্ট হয়নি। অথচ ছেলেদের ফুটবলের মতো নারী ফুটবলও শুরু একই সময়ে। কিন্তু ছেলেদের বিশ্বকাপের বয়স যেখানে ৯৩ বছর, মেয়েদের ৩২।


আজ সিডনিতে স্টেডিয়াম অস্ট্রেলিয়ায় ইংল্যান্ড নারী বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে নামার আগে সেই কালো দিনগুলোর কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। ‘কীভাবে ইংল্যান্ড নারী ফুটবলে ভালো দল হলো’ শীর্ষক নিবন্ধে সাংবাদিক কেটি ফেলকিংহাম লিখেছেন, নারী ফুটবল নিষিদ্ধ করা নিয়ে ১৯২১ সালে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে জানায়, নারীদের জন্য ফুটবল বেশ অনুপযুক্ত, একে উৎসাহিত করা অনুচিত।


লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, নেইমারদের মতো তারকা নারী ফুটবলে নেই বটে, তবে মার্তা, স্যাম কের, মেগান রাপিনোরা-বা কম কিসে! তবে এঁদের আর কেউ টিকে নেই টুর্নামেন্টে। নিজেদের শেষ বিশ্বকাপ খেলতে এসে কান্নাভেজা বিদায় নিয়েছেন ব্রাজিলের মার্তা ও যুক্তরাষ্ট্রের রাপিনো। অস্ট্রেলিয়ার কেরকে চতুর্থ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে।


নিজেদের মাটিতে ১৯৬৬ বিশ্বকাপ জেতে ইংল্যান্ড। এরপর নারী-পুরুষ মিলিয়ে এবারই প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনালে তারা। প্রথমবারই কি সোনালি ট্রফি হাতে ঘরে ফিরতে পারবেন মিলি ব্রাইট ও লরেন হ্যাম্পরা? ২০১৫ বিশ্বকাপে তাদের দৌড় থেমেছিল সেমিফাইনালে। সেই ব্যর্থতা মুছে গত বছর ওয়েম্বলিতে ইউরোপ জায়ান্ট জার্মানিকে হারিয়ে প্রথম ইউরো জয়, গত এপ্রিলে একই মাঠে ব্রাজিলকে হারিয়ে ফিনালিসিমা—দায়িত্ব নেওয়ার দুই বছরের মাথায় ইংল্যান্ডকে তিনটি প্রধান শিরোপা জেতানোর সামনে ডাচ কোচ সারিনা ওয়েগম্যান। এই সাফল্যের কারণটা তিনি গতকাল খোলাসা করলেন সংবাদ সম্মেলনে। জানালেন, তাঁর শিষ্যরা ‘আমি’ নয়, ‘আমরা’ হয়ে খেলে।


ইংল্যান্ড না স্পেন, কে নতুন চ্যাম্পিয়ন

একবিংশ শতাব্দীতে এসে ফুটবলে আরেকটি বিশ্বকাপের জন্য অধীর অপেক্ষায় যুক্তরাজ্যবাসী। গত পরশু থেকে পতাকা দিয়ে লন্ডন সাজতে শুরু করেছে। তবে সেই আনন্দ মাটি করে দিতে পারে স্পেন। সেই সতর্কবার্তাই দিলেন শিষ্যদের, ‘স্প্যানিশরা ভালো অবস্থানে।তারা এই টুর্নামেন্টে খুব ভালো খেলেছে। তারা সব সময় বল দখল রেখে খেলতে চায়। এ মুহূর্তে সেটিই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের, তবে আমরাও তাদের চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি।’


ইংল্যান্ড অধিনায়ক ব্রাইট তো বলেই দিয়েছেন, ফাইনালটা তাঁদের জন্য ‘জীবনের খেলা’। দেশবাসীকে শিরোপার আনন্দে ভাসাতে চান তিনি, ‘আমরা জানি, আমাদের দেশ কেমন তৃষ্ণার্ত শিরোপার জন্য এবং তারা আমাদের সমর্থন দিচ্ছে।’


এর আগে ইংল্যান্ড-স্পেনের মেয়েরা মুখোমুখি হয়েছে ১১ বার। ইংল্যান্ডের ৬ জয়ের বিপরীতে স্পেনের জয় ২, ড্র হয়েছে ৩ ম্যাচ। গত বছর স্পেনকে হারিয়ে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ চারে ওঠে ইংল্যান্ড। এবার বিশ্বকাপ জিতেই সেই ক্ষতে প্রলেপ দিতে চাইবে স্পেনের মেয়েরা। তবে স্মরণীয় ম্যাচের আগে স্প্যানিশ কোচ হোর্হে ভিলদাকে বেশ বিব্রতই দেখাল সংবাদ সম্মেলনে। তাঁর সঙ্গে বেশ কয়েকজন স্প্যানিশ খেলোয়াড়ের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, গত বছর সেসব খেলোয়াড় ভিলদার অধীনে খেলতে চাননি। তাঁর কারণে দল ছেড়েছিল ১৫ খেলোয়াড়। সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ৪২ বছর বয়সী কোচ প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘পরের প্রশ্ন।’


উল্টো শোনালেন দলের অনুশীলন কেমন হলো এবং ফাইনালের বিষয়ে। ভিলদা বলেন, ‘শুরু থেকে খেলোয়াড়েরা একত্র, তারা কঠোর পরিশ্রম করছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে সত্যিই সেরাটা দিতে হবে। আগামীকালের (আজ) ম্যাচটি ফাইনাল এবং আমরা সবকিছু দিয়ে লড়াইয়ে নামতে যাচ্ছি।’


স্পেনের অধিনায়ক জেনিফার হারমোসো জানিয়েছেন, ইংল্যান্ডকে ভয় পাচ্ছেন না তাঁরা। বিশ্বকাপ জিতে স্বপ্ন পূরণ করতে চান এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার, ‘আমি এমন কিছুর স্বপ্ন দেখেছি।


বিশ্বকাপ জেতার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নেই। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ।’


শেয়ার করুন