২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০১:১১:৩৮ অপরাহ্ন
ডলারের বিকল্প নিয়ে সংশয়
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৮-২০২৩
ডলারের বিকল্প নিয়ে সংশয়

মার্কিন ডলার ৮০ বছর ধরে অন্যান্য মুদ্রার ওপর আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। কিন্তু বৈশ্বিক শাসন ও অর্থব্যবস্থায় পশ্চিমাদের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির সীমা টানতে চায় বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলো। ডলারের আধিপত্য থেকে বিশ্বব্যাপী পরিবর্তনের আহ্বান নতুন নয়। উদীয়মান অর্থনীতির জোট ব্রিকসের জন্যও ভাবনাটি নতুন নয়। তবে বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক পরিবর্তন এবং পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়া ও চীনের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছে।


দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ২২-২৪ আগস্ট ব্রিকস জোটের তিন দিনব্যাপী সম্মেলন হয়। এতে ব্রাজিল, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকার নেতাসহ প্রায় অর্ধশত দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানেরা অংশ নেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বক্তৃতায় বলেছেন, ডি-ডলারাইজেশন প্রক্রিয়া বাতিল করা সম্ভব নয় এবং এটি আরও ‘গতি পেয়েছে’।


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিশ্বের প্রধান রিজার্ভ মুদ্রা ডলার। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৮০ শতাংশের বেশি এ মুদ্রায় হয়। চলতি বছরের শেষের দিকে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ইনাসিও দ্য সিলভা প্রশ্ন করেছিলেন, সব দেশের বাণিজ্য ভিত্তি ডলার কেন। এর আগে রাশিয়ার এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছিলেন, ব্রিকস গ্রুপ নিজস্ব মুদ্রা তৈরিতে কাজ করছে।


২০২২ সালের শুরুর দিকে ইউক্রেনে আগ্রাসন করায় পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় পড়ে রাশিয়া। এতে আটকে যায় দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের প্রায় অর্ধেক। রাশিয়াকে ‘একঘরে’ করার জন্য আন্তর্জাতিক লেনদেনব্যবস্থা সুইফট (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টার ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন) থেকে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকগুলোকে বাদ দেওয়া হয়।


লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের সিনিয়র ভিজিটিং ফেলো শার্লি জে ইউ আল জাজিরাকে বলেন, রাশিয়া ও ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে ডলারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও রিজার্ভের জন্য বিকল্প মুদ্রা খোঁজার আকাঙ্ক্ষা বাড়ছে বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে। একইভাবে সুইফটের বিকল্পও ভাবছে এসব দেশ।


শার্লি জে ইউ আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুদের হার বাড়িয়েছে। এতে ডলারে নেওয়া ঋণের ওপর উচ্চ সুদ দিতে গিয়ে ভুক্তভোগী হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলো। ডলারের বিপরীতে বিনিময়মূল্য নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে এসব দেশকে।


এসব কারণ স্থানীয় মুদ্রা বা অন্যান্য মুদ্রায় ঋণ নেওয়ার আগ্রহ আরও অনুপ্রাণিত করছে।


তবে নতুন মুদ্রা চালুর উদ্যোগ বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় রয়েছে বিশ্লেষকদের। সম্ভাব্য বিকল্প মুদ্রার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রিটোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব স্কলারশিপের অধ্যাপক ড্যানি ব্র্যাডলো বলেন, সোনার মানদণ্ডে অনেকেই ফিরে যেতে চান বলে তিনি মনে করেন না এবং ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলো একটি অসম্ভাব্য বিকল্প। কারণ, সেগুলো আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।


রাশিয়া এবং ইউরেশিয়াকেন্দ্রিক কৌশলগত পরামর্শদাতা ম্যাক্রো-অ্যাডভাইজরির বিনিয়োগ বিশ্লেষক ক্রিস ওয়েফার ব্রিকসের নতুন মুদ্রার ধারণাটিকে ‘নন-স্টার্টার’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি আল জাজিরাকে বলেন, বিভিন্ন দেশের সরকারও জানে যে এমন মুদ্রা হবে না।


ড্যানি ব্র্যাডলোও এ বিষয়ে একমত। তিনি বলেন, ডলারের বিকল্প তৈরির ব্রিকসের ধারণাটি সম্পূর্ণ কল্পনাপ্রসূত ও অবাস্তব বলে মনে হচ্ছে। ড্যানি আরও বলেন, যদি তাদের (ব্রিকস) একটি একক মুদ্রা থাকে, তবে সেটিতে প্রভাব থাকবে জোটের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ চীনের। কেন ছোট অর্থনীতির দেশগুলো তাদের আর্থিক নীতির দিকগুলো চীনা অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত করতে চাইবে?


ডলারের বিকল্প খোঁজার ক্ষেত্রে ওয়েফারের মতে, স্থানীয় মুদ্রার ব্যাপক ব্যবহারের জন্য ব্রিকস জোর দিতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে জানি যে রাশিয়া ও চীনের মধ্যে ৮০ শতাংশ বাণিজ্য হয় রাশিয়ার মুদ্রা রুবল বা চীনা ইউয়ানের মাধ্যমে। ভারতের সঙ্গেও রুপিতে লেনদেন করছে রাশিয়া।’


এমনকি ব্রিকসের বাইরেও অন্যান্য দেশ স্থানীয় মুদ্রায় ব্যবসা শুরু করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভারত গত মাসে একটি চুক্তি করেছে, যাতে তারা ডলারের পরিবর্তে রুপিতে বাণিজ্য পরিশোধ করতে পারে।


তবে স্থানীয় মুদ্রার ব্যাপক ব্যবহারের একটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে, আর তা হচ্ছে মুদ্রার বিনিময়যোগ্যতা।


ওয়েফার বলেন, স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য করা দেশগুলোকে একে অপরের মুদ্রা আরও বেশি করে রিজার্ভ রাখতে হবে। অন্য দেশের মুদ্রাকে নিজেদের মুদ্রায় রূপান্তর করতে সক্ষম হতে হবে।


শেয়ার করুন