২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৬:০৫:২০ অপরাহ্ন
শেয়ারবাজারের মতো কেনাবেচা হবে স্বর্ণ, তুলা ও জ্বালানি তেল
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৯-২০২৩
শেয়ারবাজারের মতো কেনাবেচা হবে স্বর্ণ, তুলা ও জ্বালানি তেল

পুঁজিবাজারের আদলে পণ্য লেনদেনের প্ল্যাটফর্ম কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু হতে যাচ্ছে দেশে। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এই প্ল্যাটফর্ম চালুর উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান। চলতি মাসেই এটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে কমোডিটি এক্সচেঞ্জে আনুষ্ঠানিক লেনদেন শুরু হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে স্বর্ণ, তুলা ও জ্বালানি তেলের লেনদেন হবে এতে।


কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুর জন্য খসড়া আইনে এরই মধ্যে অনুমোদন দিয়েছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বাংলাদেশকে এটি বাস্তবায়নে সহায়তা করবে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ (এমসিএক্স)। ভারতের ৬টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে বড় পণ্যবাজার এটি।


এ বিষয়ে সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম আজকের পত্রিকাকে জানান, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুর নীতিমালা চূড়ান্ত হয়েছে।বিএসইসি অনুমোদন দিয়েছে। আগামী বছরের মাঝামাঝি এটা চালু করার লক্ষ্য আছে।


আসিফ ইব্রাহিম বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি। সেপ্টেম্বর মাসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এর উদ্বোধন করবেন। অর্থাৎ আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু হবে লাইসেন্স প্রদানের মাধ্যমে। রেগুলেশনসের পরে হার্ডওয়্যার-সফটওয়্যারের প্রয়োজন হবে। সেগুলোর কাজও চলছে একই সঙ্গে। যেহেতু রুলস হয়ে গেছে, রেগুলেশনসের ভিত্তিতেই সিস্টেম ডিজাইন হবে।’


কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কী

কমোডিটি এক্সচেঞ্জ হলো পণ্য কেনাবেচার এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে কাগুজে বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে শুধু পণ্যের ডকুমেন্ট বেচাকেনা হয়, পণ্য থেকে যাবে গুদামে। সর্বশেষ যাঁর হাতে ক্রয়াদেশ থাকবে, তিনি গুদাম থেকে পণ্য তুলতে পারবেন।


এই ব্যবস্থার উদাহরণ দিতে গিয়ে সিএসইর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও বর্তমান শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘ব্যক্তিগত কাজে রাজধানীর মৌলভীবাজারে গিয়ে দেখলাম, সেখানে ময়দা বেচাকেনা হচ্ছে। তবে দোকানে ময়দার মজুত নেই, আছে অন্য কোনো স্থানে। এ সময় উপস্থিত একজন ক্রেতা ২০ ট্রাক ময়দা কিনতে চাইলেন। তখন আরেকজন তা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করলেন। এভাবে তাঁদের মধ্যে লেনদেনও হলো, কিন্তু কেউ ময়দা দেখলেন না। তার মানে, কথার ওপর ভিত্তি করেই লেনদেন হলো।’


লেনদেনের ধরন নিয়ে মহিউদ্দিন বলেন, ‘ধরা যাক, একজন স্বর্ণ কিনলেন। দুই মাস পরে ডেলিভারি নেবেন। স্বর্ণের দাম বাড়লে ডেলিভারি নেওয়ার আগেই বিক্রি করে বের হতে পারবেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ডেলিভারি পর্যায়ে যায় না।’ 


কমোডিটি এক্সচেঞ্জের পণ্য কী

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ অনুযায়ী; বনজ সম্পদ, মাছ, কৃষিপণ্য, খনিজ ও জ্বালানি, গবাদিপশুসহ উৎপাদিত যেকোনো পণ্যই কমোডিটি এক্সচেঞ্জের আওতায় ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে।


কমোডিটি এক্সচেঞ্জের পণ্যগুলো কৃষিপণ্য ও অকৃষিপণ্য—দুই ভাগ করা হয়েছে। কৃষিপণ্যের মধ্যে রয়েছে নিত্যপণ্য—যেমন চাল, ডাল, গম, পেঁয়াজ, আলু, ভোজ্যতেল, ফল, চা ইত্যাদি।


অকৃষিপণ্যের মধ্যে রয়েছে জ্বালানি তেল, গ্যাস, স্বর্ণ, লোহা, কয়লা ইত্যাদি। বিশ্বব্যাপী কমোডিটি এক্সচেঞ্জে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া ১০টি পণ্য হলো অপরিশোধিত জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, স্বর্ণ, রুপা, কপার, গম, তুলা, ভুট্টা, চিনি ও কফি।


তবে দেশে তিনটি পণ্য লেনদেনের মাধ্যমে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করবে সিএসই। এক্সচেঞ্জটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম ফারুক বলেন, ‘আপাতত আমরা গোল্ড, কটন ও ক্রুড অয়েল দিয়ে শুরু করব। মার্জিনের সফটওয়্যার তৈরি হয়েছে। আরও কিছু রয়েছে, যেগুলো বিজনেস রেগুলেশনস ছাড়া সম্ভব নয়।’ 


কমোডিটি এক্সচেঞ্জে কেনাবেচার প্রক্রিয়া

কমোডিটি এক্সচেঞ্জে পণ্য কেনাবেচার প্রক্রিয়া শেয়ারবাজারের মতোই। ব্রোকারের মাধ্যমে বিক্রেতা পণ্য বিক্রির অর্ডার নেন। অন্যদিকে ক্রেতা তাঁর ব্রোকারের মাধ্যমে কেনার অর্ডার দেন। অনলাইন ব্যবস্থায় এই কেনাবেচার অর্ডার প্রদর্শিত হয় কমোডিটি এক্সচেঞ্জের ইলেকট্রনিক প্ল্যাটফর্মে। দর মিললেই লেনদেন হয়, আর তা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয় ক্লিয়ারিং অ্যান্ড সেটেলমেন্ট হাউসের মাধ্যমে। ক্রেতার অ্যাকাউন্ট থেকে বিক্রেতার অ্যাকাউন্টে অর্থ পাঠানো হয়, এরপর চুক্তি অনুযায়ী পণ্যের ডেলিভারি সম্পন্ন হয়।


দেশের কমোডিটি এক্সচেঞ্জে সবই ভবিষ্যৎ চুক্তিভিত্তিক লেনদেন হবে বলে জানিয়েছেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘সাধারণত ফিউচার কন্ট্রাক্ট লেনদেন হবে। কন্ট্রাক্ট ডিজাইন করা থাকবে। ক্রেতা ও বিক্রেতার ডিমান্ড মিট করলেই স্টক এক্সচেঞ্জে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লেনদেন নিষ্পন্ন হবে।’


শেয়ারবাজারের মতো কমোডিটি এক্সচেঞ্জেও নির্দিষ্ট ও অনুমোদিত ব্রোকারের মাধ্যমে পণ্য কেনাবেচা করতে হয়, থাকতে হবে অ্যাকাউন্ট। এ ছাড়া পণ্য কিনে তা না নিয়ে ক্রয় করা পণ্যের সার্টিফিকেট অন্য কারও কাছে বিক্রিও করা হয়।


এ বিষয়ে সিএসইর এমডি গোলাম ফারুক বলেন, ‘ভারত থেকে দেখে এলাম কীভাবে সেটেলমেন্ট হয়। ৯৮ শতাংশই সেটেলমেন্ট হয় না; অর্থাৎ পণ্য সরবরাহ নেয় না। প্রায় সবই নন-ডেলিভারি অ্যাসেট। প্রধানত ৯৯ শতাংশই সনদ ট্রেড হতে থাকে। তবে ক্রুড অয়েল ১০০ শতাংশ ক্যাশ সেটেলমেন্ট। কটনও ১০ শতাংশ সেটেলড হয়, বেশির ভাগই নন-ডেলিভারি ক্যাশ সেটেলমেন্ট। 


কী লাভ

অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এটা যদি ঠিকমতো চালাতে পারে, তাহলে ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে এখানে লস ও ড্যামেজ কতখানি হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। লাভজনক অপারেশন হতে হবে, যাতে করে সরকার বা স্টক এক্সচেঞ্জকে ভর্তুকি দিতে না হয়। তবে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক ও উদ্যোক্তাদের লাভবান হওয়ার সুযোগ এতে কম।


শেয়ার করুন