২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০১:৩৬:০৬ অপরাহ্ন
তেল-মাংস-বেকারি পণ্যের দাম বেড়েছে
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৬-২০২২
তেল-মাংস-বেকারি পণ্যের দাম বেড়েছে

জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপনের পর প্রথম ধাক্কাটি লাগে সয়াবিন তেলের দামে। লিটারে ৭ টাকা বেড়ে এ তেলের দাম এখন ২০৫ টাকা।



এর আগে ইউক্রেন যুদ্ধ ও বাজেট ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দুই দফায় দ্বিগুণ দাম বাড়ে বিস্কুট-পাউরুটি-কেক সহ সকল বেকারি পণ্যের দাম।


শনিবার (১১ জুন) রাজধানীর হাতিরপুল, নিউমার্কেট, পলাশীর কাঁচাবাজার ঘুরে এ তথ্য পাওয়া যায়।


মূল্যবৃদ্ধির পর সবচেয়ে ছোট সাইজের বিস্কুট-পাউরুটি-কেক (৮০ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। অথচ দুই সপ্তাহ আগে এসব খাদ্য-পণ্যের দাম ছিল ৭ টাকা। প্রথম দফায় ১০ ও পরের ধাপে বেড়ে বিস্কুট-পাউরুটি-কেকের দাম হয়েছে ১৫ টাকা। বেড়েছে বড় সাইজের বিস্কুট-পাউরুটি-কেকের দামও।


পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকার রমনা বেকারির মালিক দেলোয়ার হোসেন জানান, সব পণ্যের দাম বাড়ায় বেকারি মালিকরাও মূল্যবৃদ্ধিতে বাধ্য হয়েছেন। ভর্তুকি দিয়ে টিকতে না পেরে অনেক বেকারি বন্ধ হয়ে গেছে।


বেকারি মালিক সমিতির সভাপতি জালাল হোসেন বলেন, মে মাস থেকেই আটা, চিনি, গুঁড়া দুধসহ বেকারির সব কাঁচামালের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। সেজন্য আমাদের সব ধরণের পণ্যের মূল্য বাড়াতে বাধ্য হতে হয়েছে।


তেলের দাম ২০৫ টাকা হলেও এখনও আগের মূল্যে বিক্রি করছেন হাতিরপুল বাজারের খুচরা ও পাইকারি তেল বিক্রেতারা। এ তথ্য নিশ্চিত করেন বাজারের খুচরা ও পাইকারি তেল বিক্রেতা সজীব হোসেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমরা বাজারে এখনও বাড়তি দামে তেল বিক্রি করছি না। প্রতি লিটার তেল বিক্রি করছি ১৯৬ থেকে ১৯৮ টাকায়।


প্যাকেট আটার কেজি এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। খোলা আটার দাম ৫০ টাকা।


বাজারে লাল ডিম ডজন প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, হাঁসের ডিম ১৬০ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের ডজন ১৯০ টাকা।


গরুর মাংস কেজি প্রতি ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংস আগুন ধরেছে। কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকায়।


বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা। লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়।


তবে মৌসুমি সবজির সরবরাহ ভালো থাকায় দাম কমেছে। শসা প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। লম্বা বেগুন ও টমেটো ৮০, করলা ৬০, কুমড়া পিস ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস লাউ আকার-ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০, চিচিঙ্গা ৪০, পটল ৪০, ঢেঁড়স কচুর লতি ও বরবটি ৬০, পেঁপে ৫০, ধুন্দুল বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।


হাতিরপুল, নিউমার্কেট, পলাশীর কাঁচাবাজারে কাঁচামরিচ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। লেবুর হালি ১০ থেকে ২০ টাকা।  


আলু কেজি বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। সাধারণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।   ভালো মানের মসলাজাতীয় এ পণ্যের দাম ৪৫ টাকা কেজি। চায়না রসুন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, দেশিটি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। বার্মা আদার কেজি ৬০ থেকে ৭০টাকা। চায়নাটির মূল্য ৯০ থেকে ১০০ টাকা।


খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়, প্যাকেট-জাতের দাম ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। দেশি মসুরের ডালের কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। ভারতীয় মসুরের ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়।


বাজারে ২ থেকে ৩ টাকা কমেছে চালের দাম। মিনিকেট চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এ চালের মূল্য ছিল ৭০ থেকে ৭২ টাকা। ২৮ চালের কেজি ছিল ৫৫ টাকা। তিন টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকায়। ৮০ টাকা থেকে কমে নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। বাজারে পোলাওর চালের দাম ১০০ থেকে ১১০ টাকা।


সাধারণ ক্রেতারা পণ্যের দাম বাড়ায় অনেকটাই ক্ষুব্ধ। হাতিরপুল, নিউমার্কেট, পলাশী এলাকায় বসবাসরত বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পণ্যের মূল্য বাড়ায় তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরকার বাজেট বাড়িয়েছে, কিন্তু সে তুলনায় তাদের আয় বাড়েনি। বাড়তি আয়ের পথও সংকীর্ণ। তাই বাধ্য হয়ে বাড়তি দামেই পণ্য কিনতে হচ্ছে তাদের।


ক্রেতা সাধারণ অভিযোগ করেন, বাজেটের আগে সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীরা আগেই দাম বাড়িয়েছিল। বাজেট প্রস্তাবের পর তাদের পোয়া বারো অবস্থা। তেলের দাম সর্বোচ্চ মূল্য ছোঁয়ায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর তা মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা অবস্থা। এসব সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার। পণ্যের মূল্য সহনশীল না হলে ভবিষ্যতে অনেকেরই না খেয়ে থাকতে হবে।


কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন অন্য কথা। বাজেট ঘোষণার কারণে দাম বাড়িয়েছেন এমনটা নয় বলে দাবি তাদের। কোনো সিন্ডিকেট নেই বলেও দাবি করেছেন। তারা জানান, ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে গম, জব, ভুট্টা, সরিষা, মসুর ডাল আমদানির অবস্থা এখন অনেকটাই এবড়োখেবড়ো। যে কারণেই তাদের বাড়তি দাম নির্ধারণ করতে হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য স্বাভাবিক আছে। বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাধ্য হয়েই আমদানিকৃত পণ্য বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের।

শেয়ার করুন