দেশের পর্যটন খাতে দেখা দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা। পর্যটনের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার সেরা আইল্যান্ড দৃশ্যমান হতে যাচ্ছে বাংলাদেশেই। কক্সবাজারের টেকনাফ ও মহেশখালী ইউনিয়নে নির্মিত হচ্ছে তিনটি ট্যুরিজম পার্ক। সেখানে বিদেশি পর্যটকদের জন্যও থাকবে সব সুযোগ-সুবিধা। থাকবে ব্যাংকক-পাতায়ার মতো নাইটলাইফ। এ ছাড়া কক্সবাজারেই সাগর ছুঁয়ে নির্মাণ হচ্ছে দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে সংবলিত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। আগামী মাসেই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ। সব মিলে আগামী দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে শুধু কক্সবাজারেই লাখ লাখ দেশি-বিদেশি পর্যটক ছুটবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ধর্মীয় পর্যটনকে গুরুত্ব দিয়ে সারা দেশে নির্মিত হচ্ছে মডেল মসজিদ, যা পর্যটনে ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর রাজধানী থেকে দক্ষিণাঞ্চলের দূরত্ব কমে যাওয়ায় সহজ হয়েছে সুন্দরবন ভ্রমণ। ফলে গত দুই বছরেই বাগেরহাটের মোংলা ও দাকোপে সুন্দরবন ঘেষে অন্তত ২৬টি রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। পর্যটন কেন্দ্রগুলো পুরোদমে চালু হলে ও পর্যটকবান্ধব সেবা দিতে পারলে এই খাত থেকেই জিডিপির বড় অংশ আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া কর্মসংস্থান হবে লাখ লাখ মানুষের। তবে পর্যটনের খাতের উন্নয়ন হলেও এর প্রচার ও পর্যটকের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে এই খাতের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, লেক-পাহাড়ের মিশেলে পার্বত্য তিন জেলার অপরূপ প্রাকৃতিক নৈসর্গ, চা বাগান, অসংখ্য ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থাপনাসহ পর্যটনের অপার সুযোগ থাকায় দেশের জিডিপির বড় অংশ আসতে পারে পর্যটন খাত থেকে। অথচ, বাংলাদেশ এই খাতে পিছিয়ে আছে। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের (ডব্লিউটিটিসি) তথ্যানুযায়ী, করোনার কারণে পর্যটন খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও ২০২১ সালে বিদেশি পর্যটক থেকে ভারত ৮ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ডলার, থাইল্যান্ড ৩ হাজার ৯০০ মিলিয়ন ডলার, মালদ্বীপ ২ হাজার ১৬০ মিলিয়ন ডলার, শ্রীলঙ্কা ৩০৫.২ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। সেখানে বাংলাদেশ আয় করেছিল মাত্র ১৬৭.২ মিলিয়ন ডলার, যা মিয়ানমারের আয় (২১২.৫ মিলিয়ন ডলার) থেকেও কম। এদিকে গত বছর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত হওয়া শ্রীলঙ্কা এক বছরের মাথায় ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে পর্যটন ও রেমিট্যান্সকে ভর করে। চলতি বছরে ট্যুরিজম খাত থেকে শ্রীলঙ্কার ৩০ শতাংশ রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। রেমিট্যান্স বেড়েছে ৭৬ শতাংশ। দুই খাত দেশের কোষাগারে দিয়েছে ৩.২ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় গত জুনে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশ কমেছে। শ্রীলঙ্কার পর্যটন প্রমোশন ব্যুরো ১২ মাসের জন্য শুধু ভারতে দেশটির প্রচারে ১.৫ বিলিয়ন শ্রীলঙ্কান রুপি বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। আর পর্যটনে বিনিয়োগ করলে তা ফেরত আসে ৪-৫ গুণ হয়ে। এখানে ২০১০ সালে জাতীয় পর্যটন নীতিমালা গ্রহণ করা হলেও ১৩ বছরে অগ্রগতি সামান্যই।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড বলছে, কক্সবাজারের সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক (জালিয়ার দ্বীপ) এবং সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্কের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ২০২৫ সালের মধ্যে এগুলো চালু হয়ে যাবে। তখন ৪০ হাজার পর্যটক একসঙ্গে থাকার সুবিধা পাবে। প্রথম পর্যায়েই কর্মসংস্থান হবে প্রায় ১০ হাজার মানুষের। পরে কর্মসংস্থান আরও বাড়বে।
টেকনাফে সমুদ্রের পাড়ঘেঁষে নির্মাণাধীন সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে মেরিন অ্যাকুয়ারিয়াম ও সি-ক্রুজ, বিদেশি পর্যটকদের জন্য বিশেষ সংরক্ষিত এলাকা, সেন্টমার্টিনে ভ্রমণের বিশেষ ব্যবস্থা, ভাসমান জেটি, শিশু পার্ক, ইকো-কটেজ, ওশেনেরিয়াম, আন্ডার ওয়াটার রেস্টুরেন্ট, ভাসমান রেস্টুরেন্টসহ নানা রকমের বিনোদনের সুবিধা থাকবে। সাবরাং থেকে নাফ নদের জালিয়ার দ্বীপে নাফ ট্যুরিজম পার্কে যাওয়া যাবে কেবল কারে। এ ছাড়া কক্সবাজার শহর থেকে বাঁশখালী নদী দিয়ে ৫৫ কিলোমিটার গেলে মহেশখালী উপজেলায় হচ্ছে সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যটকরা সরাসরি বিমানে কক্সবাজার নামতে পারবে।