২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০২:৩৫:৪৭ অপরাহ্ন
পুলিশের নির্যাতনে মৃত্যু: তিন বছরেও ক্ষতিপূরণ পায়নি জনির পরিবার
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৯-২০২৩
পুলিশের নির্যাতনে মৃত্যু: তিন বছরেও ক্ষতিপূরণ পায়নি জনির পরিবার

রাজধানীর পল্লবী থানার হেফাজতে ইশতিয়াক হোসেন জনি নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার দায়ে ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পুলিশের তিন কর্মকর্তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁদের প্রত্যেককে দুই লাখ টাকা করে নিহত জনির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিন বছর পরও ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি জনির পরিবার।


এ মামলায় দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পাঁচ আসামির মধ্যে চারজনের করা আপিল হাইকোর্টে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিৎ চ্যাটার্জি বাপ্পী আজকের পত্রিকাকে বলেন, অবকাশের আগে দুই দফা শুনানি হয়েছে। আসামিরা জরিমানার অর্থ পরিশোধ করেননি। তাই হাইকোর্ট তাঁদের তা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁদের নিজ খরচে পেপারবুক তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অবকাশের পর বিষয়টি আবারও শুনানির জন্য আসবে। বিচারিক আদালতের রায় যাতে বহাল থাকে রাষ্ট্রপক্ষ সেই চেষ্টা করবে। 

নিহত জনির ভাই ও মামলার বাদী ইমতিয়াজ হোসেন রকি আজকের পত্রিকাকে বলেন, পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কয়েক বার অনুরোধ করলেও কেউ সহযোগিতা করেনি। তাঁর ভাইয়ের ছেলে সপ্তম ও মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। তাদের ভবিষ্যতের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন।


আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মিরপুর ১১ নম্বর সেক্টরে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে পল্লবী থানার পুলিশের সোর্স সুমন মেয়েদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করায় জনি ও তাঁর ভাই তাঁকে চলে যেতে বলেন। এতে সুমন পুলিশে ফোন দেন। পুলিশ এসে জনি, তাঁর ভাই রকিসহ আটজনকে ধরে পল্লবী থানায় নিয়ে যায়। থানায় হেফাজতে নির্যাতনের একপর্যায়ে জনির অবস্থার অবনতি হয়। হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে আদালতে মামলা করেন নিহত জনির ছোট ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকি। ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ওই মামলার রায়ে পল্লবী থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমান জাহিদ, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রাশেদুল ইসলাম ও কামরুজ্জামান মিন্টুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেন আদালত ৷ একই সঙ্গে প্রত্যেককে জনির পরিবারকে দুই লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়। রায়ে পুলিশের সোর্স সুমন ইসলাম ও মো. রাসেলকে ৭ বছর করে কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন আদালত। এটি ছিল নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে প্রথম সাজা।


ওই বছরই হাইকোর্টে পৃথকভাবে আপিল করেন চার আসামি, যা নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের বেঞ্চে রয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্ত এএসআই কামরুজ্জামান মিন্টু পলাতক থাকায় আপিল করতে পারেননি।


এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষকে সহযোগিতা করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)। ব্লাস্টের আইনজীবী বদিউজ্জামান তপাদার বলেন, পুলিশের দুই কর্মকর্তা আদালতের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধ করেছেন, যা বাংলাদেশ ব্যাংকে আছে। হাইকোর্টে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে না।


ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস এম রেজাউল করিম বলেন, ক্ষতিপূরণের অর্থ পর্যাপ্ত নয়। সরকারেরই উচিত যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া।


শেয়ার করুন