সরকারের পদত্যাগসহ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের একদফা দাবিতে বিএনপির চূড়ান্ত আন্দোলন চলতি মাসেই মাঠে গড়াচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে স্থায়ী কমিটির রুদ্ধদ্বার এক বৈঠকে কর্মসূচির একটি খসড়াও তৈরি করেছে। সেখানে সেপ্টেম্বরেই ঢাকাসহ বৃহত্তর ১৯ জেলায় রোডমার্চ অথবা সমাবেশ করার প্রস্তাব করা রয়েছে। যা দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়। তিনি তারিখসহ সবকিছু চূড়ান্ত করবেন। তবে যুগপৎ হবে কিনা তা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ নিয়ে সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোট নেতাদের মতামত নেওয়া হবে। এদিকে আগামীকাল শুক্রবার ঢাকা মহানগরের সমাবেশ রয়েছে বিএনপির। এ সমাবেশ যুগপৎভাবে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া আগামী শনিবার রংপুর ও রোববার রাজশাহী বিভাগে তারুণ্যের রোডমার্চ কর্মসূচি করবে বিএনপির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
এক সময়ের ১৯ প্রশাসনিক জেলাকে ভিত্তি ধরে এবার কর্মসূচি সাজানো হয়েছে। তা হচ্ছে ঢাকা, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেট, বগুড়া, দিনাজপুর, রাজশাহী, রংপুর, পাবনা, বরিশাল, যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া ও পটুয়াখালী বৃহত্তর জেলা। এসব এখন প্রশাসনিকভাবে ৬৪ জেলা-যা বিএনপির জন্য ৮২টি সাংগঠনিক জেলা।
তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতাকে ফোন করা হলেও নতুন কর্মসূচির বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নীতিনিধারক জানান, রোডমার্চ বা সমাবেশের প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন কর্মসূচি চূড়ান্ত করার ব্যাপারে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা দল ও জোট নেতাদের মতামত নেওয়া হবে। সবার মতামতের ভিত্তিতে আগামী সপ্তাহে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। বৃহত্তর জেলার কর্মসূচি সম্পর্কে তিনি বলেন, যেমন বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা। এ জেলার অন্তর্গত ছিল এখনকার ফরিদপুরসহ রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর। রোডমার্চ হলে এক জেলা থেকে শুরু করে সবশেষ জেলায় গিয়ে শেষ হবে। আর সমাবেশ হলে এসব জেলার নেতাকর্মীরা তাতে অংশ নেবেন। সেভাবেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
সূত্রমতে, গত ২৯ জুলাই রাজধানীর প্রবেশদ্বারে গণঅবস্থান কর্মসূচিতে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলাফল না আসায় দলের হাইকমান্ড ক্ষুব্ধ হয়। তারপর থেকে কী করা যায়-তা নিয়ে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সোমবার রাতে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায়ও নতুন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মঙ্গলবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সবার মতামতের ভিত্তিতে স্থায়ী কমিটির নেতারা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে লিখিতভাবে নতুন কর্মসূচি বিষয়ে দুটি প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। এসবের মধ্যে একটি হচ্ছে বৃহত্তর ১৯ জেলায় রোডমার্চ অর্থাৎ কয়েকটি জেলার মধ্যে রোডমার্চ। এই রোডমার্চ হবে এক জেলা থেকে আরেক জেলা পর্যন্ত। দ্বিতীয় প্রস্তাব হচ্ছে-কয়েকটি জেলা সমন্বয়ে একটি জেলায় সমাবেশ করা।
বৃহত্তর ১৯ জেলায় সমাবেশ অথবা রোডমার্চ থেকেই মূলত চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষষার আগেই আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে চান। সেভাবেই কর্মসূচির ছক কষছেন নীতিনির্ধারকরা। সেক্ষেত্রে অক্টোবরের শুরু থেকেই লাগাতার কর্মসূচিতে যেতে চায় দলটি। একই সঙ্গে তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন যৌথভাবে শনিবার ও রোববার দুটি ‘তারুণ্যের রোডমার্চ’ করার ঘোষণা দিয়েছে। তাদের দশ সাংগঠনিক বিভাগে রোডমার্চ করার কথা থাকলেও তা নাও হতে পারে। সূত্রমতে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আগামী দিনের কর্মসূচি শুধু বিএনপির ব্যানারে করার জন্য নেতারা একমত পোষণ করেন। তবে চলতি মাসের শেষের দিকে ঢাকায় ছাত্র, যুব, শ্রমিক ও পেশাজীবীদের পৃথক সমাবেশ করার বিষয়ে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটের পক্ষ থেকে বিএনপিকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আগামী স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
‘তারুণ্যের রোডমার্চ’ বিএনপির তিন সংগঠনের : সরকার পতনের একদফা দাবিতে আগামী শনি ও রোববার রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে রোডমার্চ কর্মসূচি করবে বিএনপির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল যৌথভাবে এ কর্মসূচি পালন করবে। বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। তিনি বলেন, ‘শনিবার রংপুর থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত এবং রোববার বগুড়া থেকে রাজশাহী পর্যন্ত রোডমার্চ কর্মসূচি হবে। আপাতত দুই দিনের কর্মসূচি। পর্যায়ক্রমে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
টুকু বলেন, প্রতিটি রোডমার্চের শুরুতে এবং শেষে দুটি জনসভা হবে এবং পথে আরও বেশ কিছু পথসভা হবে। বিগত দিনের মতো মোটরসাইকেলসহ যে যার মতো করে রোডমার্চ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবে। আশা করি, দেশের যুব-তরুণ সমাজ ঘর থেকে বেরিয়ে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাজপথের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এ সরকারের পতন ঘটাবে। তিনি আরও বলেন, আমরা এর আগে দেশ বাঁচাতে তারুণ্যের সমাবেশ করেছিলাম, যা সফল হয়েছে। দেশে চার কোটিরও অধিক তরুণ নতুন ভোটার হয়েছে, তারা গত ১৫ বছরে একবারের জন্যও ভোট দিতে পারেনি। দেশে গণতন্ত্র ও মানুষের বাক-স্বাধীনতা নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসীদের রামরাজত্ব কায়েম হয়েছে, হলগুলোতে খাবারের মান নিম্নপর্যায়ে চলে গেছে। দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতিতে দেশের মানুষ চলতে পারছে না। গণতন্ত্র ও বিচারহীনতার মধ্যে দেশ চলতে পারে না। ’৫২, ’৭১ ও ’৯০-তে যেভাবে তরুণরা একত্রিত হয়ে দাবি আদায় করেছিল, তেমনি আমরা তিন সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল ঐক্যভাবে তরুণ সমাজকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।