কয়েক বছর আগেও জিন-পরি-ভূতের আস্তানা ভাবতো জমিদার বাড়িটিকে; যার ভেতরে ঢুকলে গা শিহরিত হতো। অজানা আতঙ্কে কাঁপতো শিশু-বাচ্চাসহ বয়স্কদের বুকে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ছোঁয়ায় স্বপ্নীল সৌন্দর্যে রঙিন সেই জমিদার বাড়ি এখন দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত।
গ্রামে ফেরা কর্মজীবী মানুষ কর্মস্থলে ফেরার আগে শনিবারও উপভোগ করছেন জমিদার বাড়ির নৈসর্গিক দৃশ্য। টিকিট কেটে বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে দর্শনার্থীর ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। জমিদার বাহাদুরের ভয়ে যে বাড়ির সামনে দিয়ে জুতা পায়ে আর ছাতা মাথায় নিয়ে যেতে পারত না এই এলাকার কোনো মানুষ। সেই বাড়িটি এখন প্রতিদিন হাজারও দর্শনার্থীর পদভারে মুখরিত। এর মধ্যে শিশু ও নারীদের সংখ্যাই বেশি।
পুরান ঢাকা থেকে আসা কবীর হোসেন ও আনোয়ার ভূইয়া জানান, প্যালেসে বেড়াতে এসে ঈদের আমেজ পুরোভাবে উপভোগ করা হলো। পরিবারের শিশুরাও খুবই আনন্দ পেয়েছে। তবে বিশাল এ অব্যবহৃত ভবনের একাংশে সরকারিভাবে খাবার ক্যান্টিন বা রেস্ট হাউস করা হলে আরও ভালো হতো।
তারা বলেন, এতে সরকারি রাজস্ব আয় যেমন বৃদ্ধি পেত, তেমনি দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভ্রমণপিপাসু মানুষ আরও বেশি উৎসাহিত হতো।
দেশে যতগুলো প্রাচীন কীর্তি নিদর্শন রয়েছে তার মধ্যে বালিয়াটি জমিদার বাড়ি অন্যতম। প্রায় ২শ বছরের জমিদার বাড়িটি কালের কীর্তিমান সাক্ষী হয়ে মাথা উঁচু করে আজও দাঁড়িয়ে আছে। সরকারের প্রত্নতত্ব বিভাগের ছোঁয়ায় জমিদার বাড়িটি যেন প্রাণ ফিরে পেয়ে, দেশি বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে। পর্যটকরা এখানে ঢুকতেই বিস্ময়ভরা চোখে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখেন বাড়িটির ভবন নির্মাণ কৌশল। অনেকটা বাধ্য হয়ে প্রশংসা করেন ওই আমলের অকল্পনীয় কারু কাজের নির্মাণ শিল্পীদের।
জানা গেছে, এখানকার জমিদাররা দশআনা ও ছয় আনা অংশে দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। ১৯৫৭ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার আগেই বালিয়াটি জমিদাররা এ বিশাল প্রাসাদ ছেড়ে ভারতে পাড়ি জমায়। ১৯৮৭ সালে সরকারের প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর বাড়িটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণা করে এর দায়িত্ব গ্রহণ করে। বর্তমানে দশআনা অংশের জমিদার বাড়িটি কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজ করছে।
বাড়ির সামনের কাতারে রয়েছে বৃহদাকার চারটি অট্টালিকা। প্রত্যেক অট্টালিকায় ঢোকার জন্যে রয়েছে সিংহদার খচিত ভিন্ন চারটি প্রবেশদ্বার। সম্প্রতি রং করা ওই প্রবেশদ্বারের সিংহ দেখে জীবন্ত মনে করে আগত শিশুরা আঁতকে উঠে। চারিদিকে প্রাচীর ঘেরা প্রায় ৬ একর বাড়িটির ভেতরের অংশে রয়েছে আরও তিনটি ভবন। প্রত্যেক ভবনের বিশাল ব্যয়ে নির্মিত শাল আর সেগুন কাঠের তৈরি সিঁড়িগুলো পর্যটকদের নজর কাড়ে। পেছনে রয়েছে ছয় ঘাটলা বিশিষ্ট দর্শনীয় বিশাল পুকুর।
বালিয়াটি ইউপি চেয়ারম্যান মীর সোহেল চৌধুরী বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহার লম্বা ছুটি কাটাতে চাকরিজীবী পরিবার শিশু বাচ্চাদের নিয়ে ভিড় করছেন। যেন ঈদের আমেজে ভাসছে সাটুরিয়ার বালিয়াটি। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের যাতায়াতের সুবিধা করতে বর্তমান এমপি ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গোলড়া থেকে বালিয়াটি প্যালেস পর্যন্ত ৭টি ব্রিজসহ ব্যয়বহুল রাস্তা নির্মাণ করে দিয়েছেন।
বালিয়াটি প্যালেসে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবু সঞ্জয় কুমার বডুয়া জানান, প্যালেস ভবনের দরজা, জানালা, জলছাদ ভেঙে যাওয়া পুরোনো গ্রিল, দেয়াল পলেস্তার ও রংয়ের কাজ করে দর্শনার্থীর আকৃষ্ট করতে আরও সুন্দর করা হয়েছে। ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন। এতে সরকারের অনেক রাজস্ব আয় হচ্ছে।