হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের নীরব দর্শক ও অজনপ্রিয় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের হাতে ফিলিস্তিনের ক্ষমতা হস্তান্তরের চিন্তা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ৮৮ বছর বয়সী এই পৌঢ়ই এখন হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের শেষ ভরসা। তিনি এই সংঘাতকে শান্তির প্রান্তরে নিয়ে আসবেন—এমন আস্থা থেকেই শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তারা গত কয়েক সপ্তাহে পশ্চিম তীর সফর করেছেন।
ইসরায়েলের সঙ্গে ১৯৯৩ সালের অসলো শান্তিচুক্তির এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এই আব্বাস। ওই চুক্তি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের আশা জাগিয়েছিল। তবে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন বন্ধে ব্যর্থ হওয়ায় ফিলিস্তিনিদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা এখন তলানিতে। কেউ কেউ তাঁর বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন। অনেক ফিলিস্তিনি এখন তাঁর প্রশাসনকে দুর্নীতিগ্রস্ত, অগণতান্ত্রিক এবং ধরাছোঁয়ার বাইরে বলে মনে করে।
তবে ইসরায়েলের ওপর হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি একটি নবশক্তির ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ দেখতে চান, যেটি আব্বাস ২০০৫ সাল থেকে পরিচালনা করেছেন। গাজায় সংঘাত শেষ হয়ে গেলে ফিলিস্তিনকে একত্র করে দায়িত্ব দিতে চান তাঁরই হাতে।
বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান গত শুক্রবার আব্বাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তনের জন্য ফিলিস্তিন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সর্বশেষ মুখ্য মার্কিন কর্মকর্তা হয়ে উঠেছেন সুলিভান। এর আগে সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গত নভেম্বরের শেষ দিকে ফিলিস্তিনি এই নেতার সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তাঁরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, সুশীল সমাজের ক্ষমতায়ন এবং একটি মুক্ত সংবাদপত্রকে সমর্থনের জন্য সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
তিন ফিলিস্তিনি এবং একজন জ্যেষ্ঠ আঞ্চলিক কর্মকর্তা কথোপকথনের বিষয়ে ব্রিফ করে বলেছেন, রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠকে আব্বাস কর্তৃপক্ষের কিছু নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তরের বিষয়ে ওয়াশিংটন প্রস্তাব দিয়ে থাকতে পারে।
ফিলিস্তিনি ও আঞ্চলিক সূত্র জানিয়েছে, ওয়াশিংটনের প্রস্তাবের অধীনে আব্বাস একজন ডেপুটি নিয়োগ করতে পারেন, তাঁর প্রেসিডেন্টর কাছে বৃহত্তর নির্বাহী ক্ষমতা তুলে দিতে পারেন এবং সংগঠনের নেতৃত্বে নতুন মুখ আনতে পারেন।
এ বিষয়ে রয়টার্সের প্রশ্নের উত্তর দেয়নি হোয়াইট হাউস। স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে, নেতৃত্বের পছন্দ ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য একটি প্রশ্ন ছিল। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেনি।
রামাল্লায় রয়টার্সের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে আব্বাস বলেছিলেন, তিনি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে নতুন নেতাদের নিয়ে পুনর্গঠন এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুত। ২০০৬ সালে হামাস সর্বশেষ ভোটে জয়লাভ করার পর থেকে গাজা থেকে একপ্রকার নির্বাসিত পিএ একটি বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক চুক্তির কথা বলেছে, যা একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের দিকে পরিচালিত করবে।
যদিও এখনো ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তাঁর উগ্র ডানপন্থী জোট ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বাধীনতা অস্বীকার করেছে।