২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ১২:৩৪:৪৮ অপরাহ্ন
তানোরে বিলের বাঁধের রাস্তা নির্মাণ নিয়ে ঠিকাদার প্রকৌশলীর রশি টানা-টানি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৯-২০২৩
তানোরে বিলের বাঁধের রাস্তা নির্মাণ নিয়ে ঠিকাদার প্রকৌশলীর রশি টানা-টানি

রাজশাহীর তানোরের সীমান্ত ঘেষা বিলের বাঁধের রাস্তা নির্মাণে একেবারেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে কার্পেটিং করার পায়তারা করছেন এমপি আয়েনের ভাই ঘাসিগ্রাম ইউপির চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম বাবলু ও ভূলু নামের ব্যক্তি বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেন। শুধু তাই না গত মাসে বৃষ্টি কাঁদা পানির মধ্যে নামমাত্র ইট বালু দিয়ে রেখেছিলেন। কাঁদার ভিতরেই যত সামান্য বালু ও খোয়া দিয়ে রোলার করে রাখা হয়েছে। কিন্ত প্রাইম বোড ও কার্পেটিং করার আগেই পুরো রাস্তা দেবে গেছে, অনেক জায়গা ভেঙ্গেও গেছে।

কার্পেটিংয়ের আগেই যদি এমন অবস্থা হয় তাহলে পিচ দেওয়ার সাথে সাথেই উঠে যাবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এতে করে ঠিকাদার প্রকৌশলীর ইদুর বিড়াল খেলায় সরকারে কোটি টাকা জলে পড়া ছাড়া কিছুই দেখছেন না স্থানীয় ঠিকাদারেরা। ফলে রাস্তাটি সরেজমিনে তদন্ত করলেই ভয়াবহ অনিয়ম ধরা পড়বে। কিন্তু এমপি আয়েনের ভাই কিনে করছেন এজন্য কেউ দেখতেও আসেনা। ব্যাপক অনিয়ম দূর্নীতি করে কাজ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিল কুমারী বিলের মোহনপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এমপি আয়েনের জলসা ঘর খ্যাত বাঁধে চলছে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫০০ মিটার রাস্তার কাজ। এর আগে গত বছরে ওই রাস্তার নিচ থেকে মাটি কেটে উঁচু করা হয়।

মাটি দিয়ে উঁচু করার সময় বাঁধের শতশত ছোটবড় গাছ কেটে মরুপ্রান্তর করে ফেলা হয়েছে বলেও একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেন। নিম্নমানের কাজের জন্য টিকসই নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। তবে এমপি ও কিনে কাজ করা ঘাষিগ্রাম ইউনিয়ন (ইউপির) চেয়ারম্যান বাবলুর ভয়ে কেউ প্রতিবাদ পর্যন্ত করতে পারছেন না। ফলে রাস্তার কাজ নিয়ে জেলা কর্মকর্তাদের সরেজমিনে তদন্ত করার জোর দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা । নচেৎ ধাপ্পাবাজির কাজ করে যাবেন চেয়ারম্যান বলেও স্থানীয় দের অহরহ অভিযোগ।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিলকুমারী বিলের ব্রীজ ও পূর্ব দিকের সংযোগ সড়ক বা তুলসী খেত মোড় থেকে দক্ষিণে ২৫০০ মিটার রাস্তার কাজ চলছে। মোড়ে নিম্নমানের খোয়া খাম্বা মারা আছে। কোন ধরনের বালু ছাড়াই মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। দুপারে এজিং করা হলেও কাঁদা মাটি দিয়েই ভরাট করছেন মিস্ত্রিরা। তারা জানান আমাদেরকে চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম বাবলু যে ভাবে কাজ করতে বলেছেন সেভাবে কাজ করা হচ্ছে। এজিংয়ে বালু খোয়া কেন দিচ্ছেন না জানতে চাইলে তারা জানান আমরা কিছুই বলতে পারব না। জানা গেছে, বিগত ২০২১-২২ অর্থ বছরে রাস্তার কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয় মোহনপুর এলজিইডি অফিস থেকে। দরপত্রে মাটির রাস্তার কার্পেটিংয়ের কাজ পান শহরের রায়হান নামের ঠিকাদার। তিনি বিএনপির প্রভাবশালী নেতা। কিন্তু লোকসানের জন্য তিনি কাজটি করেননি বলে নিশ্চিত করেন মোহনপুর এলজিইডি অফিস। সম্প্রতি রাস্তার কাজ কিনে করছেন এমপির বড় ভাই ঘাষিগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম বাবলু ও তাদের সহচর ভুলু। মোহনপুর উপজেলা প্রকৌশলী সাদরুল ইসলামের মোবাইলে ফোন দেয়া হলে বন্ধ পাওয়া যায়। উপসহকারী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ২০২১-২২ অর্থ বছরের কাজ। যে সময় দরপত্র আহবান করা হয়েছিল তারপরেই নির্মান সামগ্রীর দাম ব্যাপকহারে বেড়ে যায়।

কাজটি পান শহরের ঠিকাদার রায়হান। কিন্তু লোকসান হবে এজন্য সে কাজ করেননি। আমাদের ও এমপির অনুরোধে চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম বাবলু কাজটি করছেন। ২০২১-২২ অর্থ বছরের কাজ এখন কিভাবে ও কাঁদা পানির মধ্যে কার্পেটিংয়ের জন্য ডাবলু বিএম ও এজিং করা যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, রাস্তার কাজটি করা মানেই লোকসান। কিন্তু দরপত্র আহবান করা হয়েছে কাজ করতেই হবে। সবার অনুরোধে কাজটি হচ্ছে। ২৫০০ মিটার রাস্তার বিপরীতে বরাদ্দ ৯৪ লাখ টাকা। যদি কার্পেটিংয়ের আগে দেবে, বসে ও ভেঙ্গে যায় তাহলে কার্পেটিং করতে দেওয়া হবেনা। কিন্তু রাস্তার কাজের সময় অফিসের কোন লোকজন থাকেনা। সুত্র মতে, এক অর্থ বছরের কাজ আরেক অর্থ বছরে করার নিয়ম নেই। কারন জুন ফাইনালে সকল কাজের হিসেব দিতে হয়। যদি কোন কাজ না হয়ে থাকে তাহলে সে বরাদ্দ সরকারি কোষাগারে ফেরত দিতে হবে। এখানে সে নিয়ম অমান্য করেছেন মোহনপুর এলজিইডি। স্থানীয় ঠিকাদারেরা জানান, মোহনপুরে অনেক জনবহুল ভাঙ্গাচোরা পাকা ও মটির রাস্তা আছে অনেক। সেগুলো না করে এমপি আয়েন তার ব্যক্তিগত স্বার্থে বর্ষা মৌসুমে তার জলসা ঘরের বাঁধের রাস্তা করছেন।

এরাস্তায় তেমন একটা যানবাহন চলাচল করেনা। শুধু বোরো মৌসুমেে সামান্য পরিমান যান চলে। এর আগে তুলসী খেত থেকে মেলান্দ পর্যন্ত পাকা রাস্তা করা হয়েছে। কিন্তু রাস্তায় অসংখ্য ফাটল ও ভেঙ্গে একাকার।এছাড়াও তুলসী খেত মোড় থেকে গোয়ালপাড়া রাস্তার ধার ভেঙ্গে ঝুকিতে পড়ে আছে। কার্পেটিং রাস্তা করতে হলে আগে হেয়ারিং বন্ড বা এইচবিবি করে রাখতে হয় কয়েক বছর, তারপর হয় কার্পেটিং। এসব রাস্তা করা মানে সরকারের টাকা পানিতে ফেলা। গতবার মাটি দিয়ে উঁচু করা হল, সেই মাটির উপর করা হচ্ছে কার্পেটিং । এর চেয়ে বড় ধোকাবাজি আর কি হতে পারে। রাস্তায় কার্পেটিংয়ের আগেই বসে একাকার।তাহলে পিচ দিলে কি অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। এমপিরা সর্বময় ক্ষমতার মালিক, তার ব্যক্তিসার্থের রাস্তা এজন্য কর্তাবাবুদের কোন মাথা ব্যাথা নাই। কারন বাঁধের শতশত গাছ কাটা হয়েছে নির্বিচারে। অপ্রয়োজনীয় রাস্তায় কোটি টাকা জলে পড়া ছাড়া কিছুই না। ঘাষিগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম বাবলুর ব্যক্তিগত ০১৭১১-০১৩৮৮৪ মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেন নি। তবে তার পার্টনার ভূলু জানান, রাস্তার কাজটি পেয়েছিল শহরের ঠিকাদার রায়হান। সে সিডিউল অনুযায়ী কাজ করলে ৮ লাখ টাকা লোকসান হবে, এজন্য সে কাজ করেননি। এমপি ও এলজিইডির অনুরোধে চেয়ারম্যান ও আমি কাজটি করছি। প্রসঙ্গত, রাস্তাটি নিয়ে দৈনিক নতুন প্রভাত ও আমাদের রাজশাহী পত্রিকা সহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে খবর প্রকাশ হলেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের।

শেয়ার করুন