২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৪:৫৮:৪০ অপরাহ্ন
সাত কোটি টাকা হারিয়ে বুঝলেন প্রতারকের ফাঁদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০৯-২০২৩
সাত কোটি টাকা হারিয়ে বুঝলেন প্রতারকের ফাঁদ

লাখ নয়, কয়েক দফায় সাত কোটি টাকা দেওয়ার পর তিনি বুঝলেন, দরবেশরূপী প্রতারকের ফাঁদে পড়েছেন। ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেখে ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানে ওই ব্যক্তির শরণাপন্ন হয়েছিলেন। ঠকে যাওয়া ওই নারী অবসরপ্রাপ্ত একজন সরকারি কর্মকর্তা। কথিত ওই দরবেশ ও তাঁর এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।


সিআইডি জানায়, প্রতারণার শিকার ওই নারী রাজধানীর মোহাম্মদপুরে থাকেন। তাঁর স্বামী চিকিৎসক। তিন ছেলেমেয়েও সুপ্রতিষ্ঠিত। সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর তাঁর বেশির ভাগ সময় কাটে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। একদিন ফেসবুকে একটি বিজ্ঞাপন দেখেন। ওই বিজ্ঞাপনে সৌম্য চেহারার দরবেশরূপী এক ব্যক্তি নিজেকে সৌদি আরবের একটি মসজিদের ইমাম পরিচয় দেন এবং মানুষের সমস্যা সমাধানে কাজ করেন বলে জানান। বিজ্ঞাপনে সাক্ষাৎকারে দুজন মেয়ে সমাধান পাওয়ার দাবি করেন।


এতে তিনি আকৃষ্ট হন। তাঁর গৃহকর্মী নিজ গ্রামের কয়েকজনের ‘দরবেশে’র মাধ্যমে উপকার পাওয়ার কথা জানালে তিনি উৎসাহিত হন এবং বিজ্ঞাপনে দেওয়া নম্বরে ফোন করেন। অপর প্রান্তের দরবেশরূপী ব্যক্তির সুন্দর কথায় গলে গিয়ে কিছু সমস্যার কথা জানান। এতে ওই ব্যক্তি তাঁকে ‘মা’ সম্বোধন করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন এবং এ জন্য কিছু খরচ হবে বলে জানান। তবে খরচের বিষয়টি তিনি গোপন রাখতে বলেন এবং তা না হলে তাঁর সমস্যা আরও বাড়বে এবং স্বামী-সন্তানদের ক্ষতি হবে বলে ভয় দেখান।


সিআইডি আরও জানায়, অবসরপ্রাপ্ত ওই নারী কর্মকর্তা প্রতারক ব্যক্তির ভক্ত হয়ে যান এবং তাঁর কথামতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা পাঠান। পরে বিভিন্ন অজুহাতে ও সমস্যা সমাধানের কথা বলে তাঁর কাছ থেকে দফায় দফায় টাকা নিতে থাকেন। বড় অঙ্কের টাকা ওই নারীর বাড়িতে গিয়ে নিয়ে আসতেন দরবেশরূপী প্রতারকের সহযোগী মো. তানজিল আহমেদ তানজিদ হাসান। কখনো কখনো ৩০-৪০ লাখ টাকাও দিয়েছেন ওই নারী।


এভাবে সব মিলে সাত কোটি টাকা দেওয়ার পর তিনি বুঝতে পারেন প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন। এ ঘটনায় ওই নারী মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন এবং সিআইডির প্রধান দপ্তরে একটি অভিযোগ দেন। এরপর সিআইডি তদন্তে নামে। গত শনিবার উত্তরা থেকে তানজিলকে এবং ভোলা থেকে দরবেশরূপী প্রতারক মো. হাসেমকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।


সিআইডি সূত্র বলেছে, তানজিল বলেছেন, হাসেম এই চক্রের হোতা। হাসেম প্রথমে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ছোট অঙ্কের টাকা নিয়েছেন। বড় অঙ্কের টাকা আনতে ওই নারীর কাছে তাঁকে পাঠাতেন। তিনি ২০০৫ সাল থেকে এই কাজ করছেন। হাসেম দরবেশ পরিচয়ে ফ্রান্সপ্রবাসী মো. ইমাম হোসেনকে ১২ কোটি টাকার লটারি জিতিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। ইতালিপ্রবাসী একজনের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা হাতান।


সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে এই প্রতারক চক্রের ২০-২৫ জন, মালয়েশিয়ায় ১০-১২ জন ‘ক্লায়েন্ট’ আছেন। তাঁদের পাঁচ-ছয়জন চার-পাঁচ বছর ধরে নিয়মিত এই দরবেশরূপী প্রতারককে টাকা দিচ্ছেন। 


শেয়ার করুন