২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৫:০০:২৫ অপরাহ্ন
রাজশাহী পদ্মাপারের আতঙ্ক রাসেলস ভাইপার
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৯-২০২৩
রাজশাহী পদ্মাপারের আতঙ্ক রাসেলস ভাইপার

তড়িঘড়ি করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে এক রোগীকে নেওয়া হচ্ছিল কিডনি বিভাগে। ওই রোগীর নাম ফটিক আলী (৭০)। গত শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে জমিতে নিড়ানি দেওয়ার সময় তাঁকে দংশন করে রাসেল ভাইপার। এরই মধ্যে বিষক্রিয়ায় তাঁর কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেছে। তাই ডায়ালাইসিস করাতে ফটিককে নেওয়া হচ্ছে কিডনি ওয়ার্ডে। এ দৃশ্য গতকাল সোমবারের।


জানতে চাইলে ফটিকের শ্যালক সেতাউর রহমান বলেন, দংশনের পর সাপটি দেখতে পান তাঁর দুলাভাই। এরপর দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়। চিকিৎসকেরাও নিশ্চিত করেছেন, ফটিককে রাসেল ভাইপারই ছোবল দিয়েছে। গত তিন দিনে তাঁকে ৬০ ভায়াল অ্যান্টিভেনম দিতে হয়েছে।


চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, কুষ্টিয়া, যশোর, চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে এই সাপে (রাসেল ভাইপার) কাটা রোগী এখানে নিয়মিত আসছেন। সাপটি নিরীহ, তবে অত্যন্ত বিপজ্জনক। এটি রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের কাছে ‘চন্দ্রবোড়া’ বা ‘আইলবোড়া’ নামে পরিচিত। এ সাপে ছোবল দিলে তিন-চার দিন পর্যন্ত কোনো ব্যথা কিংবা জ্বালাপোড়া থাকে না। এরপর দংশনের স্থান ফোলা শুরু হয়। খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যায়। শেষে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে রোগীর মৃত্যু হয়। চলতি বছর সাপের ছোবলের শিকার ৫৫৮ জনকে হাসপাতালে আনা হয়। তাঁদের মধ্যে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।


রামেক হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, ৫৫৮ জনের মধ্যে বিষধর সাপের দংশনের শিকার হন ১০৮ জন। তাঁদের মধ্যে রাসেল ভাইপার ২৫ জনকে এবং ‘কমন ক্রেইটে’ দংশন করেছিল ২৩ জনকে। বিষধর নয়, এমন সাপ দংশন করে ৪৫০ জনকে।


চিকিৎসক ও সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্ষাকালে কমন ক্রেইটে আর গ্রীষ্মকালে রাসেল ভাইপার বেশি দংশন করে। এই অঞ্চলে সাপের ছোবল দেওয়া রোগীর সংখ্যা অন্যান্য এলাকার চেয়ে বেশি। সাপের দংশন বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছরের ১৯ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সর্প দংশন সচেতনতা দিবস পালন করা হয়।


রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহমেদ বলেন, পদ্মা নদীর পারের জেলাগুলোতে সাপের উপদ্রব বেশি। এ জন্য দেশের অন্যান্য সদর হাসপাতাল কিংবা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ে এখানে সাপের দংশনের রোগী বেশি আসে। সচেতনতার অভাবে সাপে কাটার ঘটনা যেমন কমছে না, তেমনি মানুষের মৃত্যুও কমানো যাচ্ছে না।


চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেই সাপ নিয়ে অসচেতনতার একটি উদাহরণ পাওয়া যায়। ২০১৩ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে একটি রাসেল ভাইপারের দেখা মেলে। আনোয়ার হোসেন নামের এক স্কুলছাত্র পথে সাপটি দেখতে পায়। সাপটি নড়াচড়া করছিল না। আনোয়ার কাছে গিয়ে সাপটিকে চেপে ধরে। দংশন করলে সাপটিসহ আনোয়ারকে রামেক হাসপাতালে আনা হয়। ওই ঘটনার ২২ দিন পর আনোয়ার মারা যায়।


রামেক হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, রাসেল ভাইপারে ছোবলের শিকার মানুষদের মধ্যে ৯০ শতাংশই মারা যায়। যেসব রোগীর ক্ষেত্রে দংশনের সময় সাপ অল্প বিষ ঢেলেছে কিংবা দ্রুততম সময়ের মধ্যে হাসপাতালে আনা হয়েছে, কেবল তাদের বাঁচানো গেছে। রোগীদের সুস্থ করতে কাউকে কাউকে ১০০ ভায়াল পর্যন্ত অ্যান্টিভেনম দিতে হয়েছে। এর দাম এক লাখ টাকার বেশি।


সাপে দংশন করা রোগীকে দুই ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে আনার পরামর্শ দেন মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, অসচেতন মানুষ আগে ওঝার কাছে যায়। কিন্তু ওঝাকে সাপে কাটলে সে নিজেই হাসপাতালে আসে। এ ছাড়া দংশনের শিকার রোগীদের বেশির ভাগ গ্রামের বাসিন্দা। তাই গ্রামীণ পর্যায়ে চিকিৎসা ব্যবস্থা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যথেষ্ট অ্যান্টিভেনম রাখতে হবে।


শেয়ার করুন