চট্টগ্রামে গত সেপ্টেম্বর বিভাগীয় সমাবেশে এক ঘণ্টা দেরিতে এসে উপস্থিত হন নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন। কারণ হিসেবে তিনি জানান, চট্টগ্রাম আদালতে মামলার হাজিরা দিতে যাওয়ায় সমাবেশে আসতে দেরি হয়েছে তাঁর।
নগর বিএনপির শীর্ষ এই নেতার বিরুদ্ধে ১০১টি মামলা চলমান। এর মধ্যে কোনোটি বোমা বিস্ফোরণ, কোনোটি গাড়ি ভাঙচুর এবং কোনোটি পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা অভিযোগে দায়ের করা। তিন মাস ধরে ‘হঠাৎ’ সক্রিয় হয়ে গেছে এসব মামলা।
শুধু শাহাদাত নন, তাঁর মতো চট্টগ্রাম বিএনপির প্রায় সব সক্রিয় নেতাকেই প্রতি সপ্তাহে মামলার হাজিরা দিতে হচ্ছে। এত মামলার মধ্যেও আন্দোলন-কর্মসূচি সামলাচ্ছেন তাঁরা।
বিএনপির নেতারা জানান, তিন মাস আগেও আদালতে মাসে একবার হাজিরা দিতে হতো। এখন মামলাগুলোর গতি বাড়ায় প্রতি সপ্তাহে আদালতে গিয়ে হাজিরা দিতে হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন থানায়ও প্রতিদিনই ‘গায়েবি’ মামলা হচ্ছে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। গ্রেপ্তার, রাতে বাসাবাড়িতে গিয়ে পুলিশের হয়রানি সবই বেড়েছে বলে অভিযোগ নেতাদের।
তবে পুলিশের দাবি, বিএনপির নেতাদের অভিযোগগুলো সঠিক নয়। পুলিশ কাউকে বিনা কারণে আটক বা গ্রেপ্তার করছে না। নগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আ স ম মাহতাব উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, পুলিশ কোনো মিথ্যা মামলা দিচ্ছে না। যাঁরা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁরা সবাই মামলার আসামি। কেউ পুলিশের ওপর হামলা করলে, সেটি কি অপরাধ নয়। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হবে না?
সারা দেশে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ১ লাখ ৩৮ হাজার ৪৮টি মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. সালাহউদ্দিন খান। এসব মামলার আসামির সংখ্যা ৪৯ লাখ ৪৫ হাজার ৬৭৯ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে ১৩ হাজার ৫২২টি মামলায় আসামির সংখ্যা ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩৫ জন। বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে নোয়াখালী জেলায়। এখানে মামলার সংখ্যা ২ হাজার ২২৫টি। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ৪৭ হাজার ৪৫৫ জন। এরপর চট্টগ্রাম জেলায় ১ হাজার ৯৪৩টি মামলায় আসামির সংখ্যা ৩৯ হাজার ৪৫৫ জন। এ ছাড়া ফেনী জেলায় ১ হাজার ৮৪১টি মামলার বিপরীতে ৪২ হাজার ৭৪১ জন, কক্সবাজার জেলায় ১ হাজার ২০২টি মামলার বিপরীতে আসামি ৪৪ হাজার ৪৯৫, রাঙামাটি জেলায় ১ হাজার ২০২টি মামলার বিপরীতে ৩৫ হাজার ৯১, লক্ষ্মীপুর জেলায় ৬৯০টি মামলার বিপরীতে ৩৩ হাজার ৮৭৩ এবং খাগড়াছড়ি জেলায় ৩২৮টি মামলার বিপরীতে আসামি করা হয় ২৯ হাজার ৫৩৮ জন নেতা-কর্মীকে।
এখন এসব মামলার বিচার শুরু হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চট্টগ্রাম বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সাজার আতঙ্কে আছেন অনেকে। একদিকে মামলার হাজিরা, অন্যদিকে আন্দোলন—দুটিই সামলাচ্ছেন তাঁরা।
চট্টগ্রাম নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে বর্তমানে চলমান আছে ১০১টি মামলা। সদস্যসচিব আবুল হাশেম বক্করের বিরুদ্ধে ৪৫টি, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের বিরুদ্ধে ৪৩টি ও উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকারের বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা চলমান।
চট্টগ্রাম বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, নাশকতা, ভাঙচুর, হামলা, বিস্ফোরকসহ বিভিন্ন আইনে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া পুরোনো মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করে চার্জশিট দিচ্ছে পুলিশ।
নগর বিএনপির সদস্যসচিব আবুল হাশেম বক্করের দাবি, রাতে বজ্রপাতকে বোমার বিস্ফোরণ হিসেবে চালিয়ে দিয়ে মামলা করার ঘটনাও আছে। ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর বায়েজিদে ওই ঘটনায় ডা. শাহাদাত হোসেন ও আবুল হাশেম বক্কর আসামি। এই মামলায় সম্প্রতি চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ।