০১ মে ২০২৪, বুধবার, ০৪:১৭:৩১ অপরাহ্ন
তলে তলে আপস নিয়ে নানা প্রশ্ন
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-১০-২০২৩
তলে তলে আপস নিয়ে নানা প্রশ্ন

‘তলে তলে আপস হয়ে গেছে’—ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্য এখন সারা দেশে আলোচনার বিষয়। নির্বাচন ও আন্দোলন ঘিরে দেশে গুমোট পরিস্থিতিতে এই বক্তব্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশের পাশাপাশি আছে আপত্তির কথাও। কার সঙ্গে কিসের আপস করেছে আওয়ামী লীগ, তা খোলাসা করার দাবিও জানিয়েছে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বলয়। কাদেরের বক্তব্য নিয়ে বিরক্তি ও অস্বস্তি আছে ক্ষমতাসীন শিবিরেও।


তবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ১৬ দিনের সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফেরার ঠিক আগের দিন গত মঙ্গলবার ওবায়দুল কাদের ওই বক্তব্য দেন। তিনি নিজ দলের নেতা-কর্মীদের অভয় দিয়ে বলেন, আর চিন্তার কিছু নেই। ভোটের প্রস্তুতি নিন। সময়মতো ভোট হবে।


তবে কাদেরের এই বক্তব্যকে ‘রাজনৈতিক স্টান্টবাজি’ বলে মনে করছেন কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক মো. শামছুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার কাছে এটা মনে হয় রাজনৈতিক স্টান্টবাজি। এটা হচ্ছে দলের নেতা-কর্মী, পুলিশ-প্রশাসনকে চাঙা রাখার কৌশল। আর কিছুই না।’ 


তারপরও ‘তলে তলে আপস’ নিয়ে আপত্তির কথা জানিয়েছেন শামছুল আলম। তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে আপস নেতিবাচক শব্দ। তলে তলে আপস করা হয়েছে বলার মাধ্যমে জনগণকেই অপমান করা হয়েছে। এর মানেই হলো সরকার কোনো কিছুর বিনিময়ে আপস করেছে। জনগণের চাওয়া-পাওয়াকে জলাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে।’ 


মঙ্গলবার ঢাকার সাভারের আমিনবাজারে দলের শান্তি সমাবেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কোথায় নিষেধাজ্ঞা? কোথায় ভিসা নীতি? তলে তলে আপস হয়ে গেছে। দিল্লিকে আমেরিকার প্রয়োজন। আমরা আছি, দিল্লি আছে; দিল্লি আছে, আমরাও আছি। শেখ হাসিনা সব ভারসাম্য করে ফেলেছেন। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব। আর কোনো চিন্তা নাই। নির্বাচন হবে, খেলা হবে।’ 


ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী এবং সম্পাদকমণ্ডলীর অন্তত ১০ জন সদস্যের সঙ্গে আজকের পত্রিকার কথা হয়। তাঁদের অধিকাংশই এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘জানি না কী কারণে, কোন উদ্দেশ্যে তিনি (কাদের) এমন কথা বলেছেন।’


আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণায় দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এরই মধ্যে সভা-সমাবেশে আগের তুলনায় উপস্থিতি কমে গেছে। অন্যদিকে ভিসা নীতিকে আঁকড়ে ধরে নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করে সরকার পতনের হুমকি দিচ্ছে বিএনপি। এমন পরিস্থিতিতে নেতা-কর্মীদের মনোবল বাড়িয়ে নির্বাচনমুখী করার জন্যই ওবায়দুল কাদের এমন বক্তব্য দিয়েছেন।


ওই নেতা আরও বলেন, নির্বাচন যজ্ঞ পার করতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই প্রধান ভূমিকা রাখেন। মার্কিন ভিসা নীতি প্রয়োগ শুরুর পরে তাঁদের মধ্যেও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। তাঁদের মনোবল চাঙা রাখতেও এমন বক্তব্য দিয়ে থাকতে পারেন ওবায়দুল কাদের।


যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছেন, এমন বার্তার ভিত্তিতে কাদের ওই মন্তব্য করেছেন বলেও মনে করেছেন দলের একাধিক নেতা। 


শেয়ার করুন