২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৬:২৫:৫৭ অপরাহ্ন
পরিবহণ শ্রমিকদের হাতে জিম্মি যাত্রীরা
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-১০-২০২৩
পরিবহণ শ্রমিকদের হাতে জিম্মি যাত্রীরা

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের বেশির ভাগ পথে যাত্রীরা পরিবহণ শ্রমিকদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। সড়কে নেই শৃঙ্খলা। জাতীয় এই মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ যানবাহন। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুট ছাড়াও বান্দরবান ও বাঁশখালী রুটেও চলছে নৈরাজ্য। অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন, অনিয়ন্ত্রিত রুট ও ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি চলাচলে ঘটছে দুর্ঘটনাও। বাড়ছে যাত্রী ভোগান্তি। সোমবার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-বান্দরবানসহ দক্ষিণের সব রুটে আকস্মিক দুই ঘণ্টা বাস চলাচল বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেন পরিবহণ শ্রমিকরা। ফলে দুর্ভোগে পড়েন শত শত যাত্রী।


পুলিশ ও পরিবহণ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশিক্ষণবিহীন চালক, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, বিনা প্রয়োজনে ওভারটেক, বেপরোয়া গতি, ভাঙাচোরা সড়ক, চালকদের প্রায়ই নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়া এবং ট্রাফিক আইন না মানাসহ বিভিন্ন কারণে এ সড়কে একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা। এ ছাড়াও মহাসড়কের কর্ণফুলী সেতু থেকে চন্দনাইশের দোহাজারী শঙ্খনদী ব্রিজ পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার সড়কে রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ ৫০টি বাঁক। গত এক বছরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে নিহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। আহত হয়েছেন কয়েকশ। সর্বশেষ রোববার চন্দনাইশে চট্টগ্রামমুখী ইউনিক পরিবহণের একটি বাস প্রথমে মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। পরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওই বাসটি পথচারীকে ধাক্কা দিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশাকে চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই রিকশার যাত্রী মৃদুল ও পথচারী আবদুল্লার মৃত্যু হয়।


এদিকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার বাসযাত্রীরা দীর্ঘদিন ধরেই জিম্মি হয়ে পড়েছেন পরিবহণ ব্যবসায়ীদের কাছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চলাচলকারী বাসগুলো বিশেষ করে প্রতি বৃহস্পতিবার ও সরকারি ছুটির দিনে যাত্রীদের কাছ থেকে ২-৩ গুণ ভাড়া আদায় করছে। ঈদের ছুটিতে তাদের এ নৈরাজ্য সীমা অতিক্রম করে। বাড়তি ভাড়া আদায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে সংঘবদ্ধ পরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের কাছে অনেক সময়ই যাত্রীদের নাজেহাল হতে হচ্ছে। এ নিয়ে প্রতিনিয়তই যাত্রীদের সঙ্গে পরিবহণ শ্রমিকদের বচসা লেগে আছে। অনেক সময় এ বসচা সংঘর্ষে গড়াচ্ছে। জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে পটিয়া ও সাতকানিয়াগামী যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। কর্ণফুলী সেতু থেকে পটিয়া উপজেলার নির্ধারিত বাস ভাড়া ৩৫ টাকা। কিন্তু বাসগুলো কৌশলে ‘রিজার্ভ’-এর নামে আদায় করছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা পর্যন্ত। শাহ আমানত সেতু থেকে পটিয়া পর্যন্ত রুটে কয়েকটি বিআরটিসি বাস চলাচল করলেও ভাড়া কমছে না। লোকাল যাত্রীদের ঠিকই তিনগুণ ভাড়া গুনতে হয়।


প্রতি বৃহস্পতিবার অফিস ছুটির পর শাহ আমানত সেতুর গোল চত্বরে যাত্রীদের রীতিমতো যুদ্ধ করে বাসে উঠতে হয়। এদিন যাত্রী বেশি থাকায় বাস সংকট তৈরি হয়। মূলত এ সংকটকে পুঁজি করেই গলাকাটা ভাড়া আদায় করছেন পরিবহণ শ্রমিকরা। নিয়মিত যাত্রীদের জন্য এই বাড়তি ভাড়া দেওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে।


চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের কয়েকজন যাত্রী জানান, এ রুটে যাত্রী হয়রানি চরমে পৌঁছেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, বাঁশখালী উপজেলার হাজার হাজার যাত্রী হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এসব উপজেলার লাখো মানুষ চট্টগ্রাম নগরীতে থাকেন। এদের বেশির ভাগই প্রতি বৃহস্পতিবার বাড়ি যান এবং শনি বা রোববার নগরীতে ফেরেন।


সাতকানিয়ার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ চট্টগ্রামের রুটগুলোয় যাত্রী হয়রানি চললেও এর কোনো পরিবর্তন নেই। বৃহস্পতিবার আসলে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। শাহ আমানত সেতু থেকে লোহাগাড়া পর্যন্ত নিয়মিত ভাড়া যেখানে ১০০ টাকা, বৃহস্পতিবার নেওয়া হয় ২০০ টাকার বেশি। প্রশাসন কঠোরভাবে মনিটরিং করলে পরিবহণ খাতে শৃঙ্খলা আসত।


শেয়ার করুন