রেলের সম্পদ রক্ষা এবং দেখভালের প্রধান দায়িত্বে থাকা রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীকে (আরএনবি) ট্রেন থেকে প্রত্যাহার করার পর একের পর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে। গত প্রায় দুই মাস ধরে পূর্বাঞ্চলের আন্তঃনগর ট্রেনে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি যেমন বেড়েছে, তেমনি হামলার শিকার হচ্ছেন যাত্রীদের সেবায় নিয়োজিত থাকা ব্যক্তিরাও। আরএনবি না থাকায় প্রতিনিয়ত চালকদের জিম্মি করে মাদক পরিবহণ বেড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, আরএনবিকে ক্রমেই অলস বাহিনীতে পরিণত করতে খোদ রেলওয়ের একশ্রেণির কর্মকর্তাই নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছেন। টিকিটবিহীন যাত্রী পরিবহণ বাড়িয়ে একটি মহল রেলকে অকার্যকর করতে আবারও উঠেপড়ে লেগেছে।
শনিবার ভোরে উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ট্রেনটি সিলেট থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাচ্ছিল। লাকসাম আরএনবি চৌকির চিফ ইন্সপেক্টর মো. সালামত উল্লাহ বলেন, ‘সিলেট থেকে ছেড়ে আসা উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে তিন ব্যক্তি তিন যাত্রীর কাছ থেকে অস্ত্রের মুখে তাদের মোবাইল ফোন ও দামি জিনিসপত্র নিয়ে গেছে বলে জানতে পেরেছি। ট্রেনটি ফেনী স্টেশনে থামার পর ছিনতাইকারীরা নেমে যাওয়ার সময় অ্যাটেন্ডেন্ট বাধা দিলে তাকেও মারধর করা হয়।’ সূত্র জানায়, ২০০৬ সাল থেকে আন্তঃনগর ট্রেনে যাত্রী, গার্ড ও লোকোমাস্টারের (চালকের) নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করছেন আরএনবি সদস্যরা। চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচল করা প্রতিটি ট্রেনে একজন হালিবদারের নেতৃত্বে চারজন আরএনবি সদস্য থাকতেন। যাদের দায়িত্ব ছিল ট্রেনযাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পাশাপাশি নিষিদ্ধ পণ্য ও চোরাচালান ঠেকানো। ৩১ আগস্ট এক অফিস আদেশের মাধ্যমে সব আন্তঃনগর ট্রেন থেকে আরএনবি প্রত্যাহার করে নেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে গত প্রায় দেড় মাসের বেশি সময় ধরে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ। আরএনবি প্রত্যাহার করায় ট্রেনে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২৭ সেপ্টেম্বর ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহ আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ৭৪২নং ডাউন ট্রেনে কেপিলারি টিউব, ড্রায়ার ফিল্টার, ইভাপোরেটর কয়েল চুরি হয়ে যায়। ট্রেনটি চট্টগ্রাম স্টেশনে আসার সময় যাত্রাপথে এসব যন্ত্রাংশ চুরি হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। একইভাবে ২৬ সেপ্টেম্বর ৭২২নং ডাউন ট্রেনের বগি থেকে একই ধরনের যন্ত্রাংশ চুরি হয় বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব যন্ত্রাংশ ছাড়া এসি গাড়ি চালানো সম্ভব নয় বলে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আইন, ২০১৬ এর ১১নং ধারা অনুসারে আরএনবি সদস্যদের প্রধান দায়িত্ব হলো রেল চলাচলে যে কোনো বাধা দূর করা। রেল চলাচলে বাধা শুধু স্টেশনে নয়, পথে যে কোনো স্থানে যে কোনো সময় হতে পারে। তাই ট্রেনে সার্বক্ষণিক আরএনবি সদস্য থাকবে। অপর দিকে চুরি অথবা অবৈধভাবে অর্জন অথবা অবৈধভাবে দখল বা দখলে রাখার চেষ্টার অপরাধ সংঘটন ও সংঘটনে সহায়তাকারীগণের বিরুদ্ধে মামলা এবং অপরাধ তদন্ত করে শাস্তি নিশ্চিত করাও আরএনবির দায়িত্ব। অথচ আরএনবি সদস্য প্রত্যাহারের ফলে সাম্প্রতিক সময় চোরচক্র এবং মাদক চোরাকারবারিরা যেমন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে পাশাপাশি নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন যাত্রীরা। যাত্রীদের মতো গার্ড ও লোকোমাস্টাররাও আছেন আতঙ্কে।
রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘ভারতীয় সীমান্তবর্তী রেলওয়ে স্টেশনে মাদক পাচারকারীরা বেশি সক্রিয় থাকে। এ জন্য কুমিল্লা স্টেশন থেকে আখাউড়া পর্যন্ত প্রায় ১২টি স্টেশন অতিক্রমকালে ট্রেন চালকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। মাদক পাচারকারীরা প্রায় সময় চালকদের জিম্মি করে মাদক পাচারে বাধ্য করে। ওই সময় রেলওয়ে পুলিশের কাছ থেকেও প্রয়োজনীয় সাপোর্ট পাওয়া যায় না। এসব বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানোর পরও কোনো ধরনের সুরাহা হচ্ছে না।’