২৯ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার, ১২:২৭:৩৫ পূর্বাহ্ন
ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে ৪৩ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-১০-২০২৩
ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে ৪৩ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত

ঘূর্ণিঝড় হামুনের কয়েক ঘণ্টার তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে এ দুই জেলার অন্তত ৪৩ হাজর ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকে এখন খোলা আকাশের নিচে। ভেঙে পড়েছে বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্কসহ সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা। সড়কে গাছ উপড়ে ও সেতু ভেঙে বন্ধ রয়েছে যানবাহন চলাচল। মারা গেছে পাঁচন। আহত হয়েছে দুই শতাধিক মানুষ। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে কক্সবাজারের চকরিয়ার ছড়াখাল দুকূল পানি উপছে সড়ক তলিয়ে গেছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে রবিশস্যের। হামুন কেটে যাওয়ায় সচল হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। নোয়াখালীর হাতিয়ায় শুরু হয়েছে নৌযান চলাচল। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:


কক্সবাজার, টেকনাফ, চকরিয়া ও পেকুয়া : জেলায় ৩৭ হাজার ৮০০ বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৫ হাজার ১০৫টি বাড়ি। দেওয়াল ও গাছচাপায় তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। নিহতরা হলেন- কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী এলাকার খুইল্ল্যা মিয়ার ছেলে আবদুল খালেক, মহেশখালী এলাকার হারাধন দে ও চকরিয়া বদরখালী এলাকার জাফর আহমদের ছেলে আসকর আলী। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার পরই ঘূর্ণিঝড় হামুন আঘাত হানে। এতে উপড়ে যায় গাছপালা ও ঘরবাড়ি। কক্সবাজার শহরের হলিডে মোড়, সদর হাসপাতাল সড়কেই উপড়ে পড়েছে ১৫টির বেশি গাছ। একই সঙ্গে বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে বৈদ্যুতিক তার। বন্ধ রয়েছে যানবাহন চলাচল। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টিনের চালা উপড়ে গেছে। কক্সবাজার শহরের পাশাপাশি উপজেলাগুলোতেও একই অবস্থা। চরম দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ।


কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, বুধবার বিকাল থেকে পরিস্থিতি কিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রাথমিকভাবে নয়টি উপজেলার জন্য ৫০ হাজার টাকা ও ১৪ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।


চকরিয়ায় বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বখতিয়ার উদ্দিন রুবেল বলেন, বাতাসের তাণ্ডবে উপকূলীয় ইউনিয়নের অনন্ত দুই শতাধিক ঘর ভেঙে গেছে। মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ কামাল বলেন, মহেশখালীর কুতুবজোম, হোয়ানক, ধলঘাটা, মাতারবাড়ি, কালারমারছড়া ইউনিয়ন লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মো. মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, প্রধান সড়ক ও উপসড়কে গাছ ভেঙে পড়ে অনেক অংশ এখনও বন্ধ। তা সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। পৌরসভায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল কাদের গণি বলেন, উপড়ে গেছে অসংখ্য বৈদ্যুতিক খুঁটি। তার ছিঁড়ে রাস্তাঘাট ও বসতিতে পড়ে রয়েছে। এখন বৈদ্যুতের সংযোগ দিলে প্রাণহানি ঘটতে পারে, তাই আপাতত বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। আব্দুল কাদের গণি আরও বলেন, ‘এখন তিনটি সাব স্টেশন চালু করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান সড়কে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা সম্ভব হবে। আর পুরো কক্সবাজারে বিদ্যুৎ চালু হতে অন্তত দুদিন সময় লাগবে।


চট্টগ্রাম, বাঁশখালী ও চন্দনাইশ : চট্টগ্রামের ২৫টি ইউনিয়নে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে ১ লাখ ১১ হাজার ৮১৮ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বাঁশখালী ও সাতকানিয়া উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে। এই দুই উপজেলায় দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৮৫ জন। এ ছাড়া প্রায় পাঁচ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক এবং ২৮৩টি ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। বৈদ্যুতিক খুঁটি ও গাছপালা উপড়ে সংযোগ লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। গাছপালা উপড়ে পড়ায় চট্টগ্রামের সঙ্গে বাঁশখালীর সড়ক যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। 

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস বলেন, উপজেলার খাগরিয়া ইউনিয়নে গাছচাপায় বকুমা খাতুন নামে এক নারী মারা গেছেন। ঝড়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ব্যাপক গাছপালা ভেঙেছে।


মঙ্গলবার রাত থেকে ভেঙে আনোয়ারা-বাঁশখালী সড়কের যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ থাকলেও বুধবার  সকাল থেকে উপজেলা প্রশাসন সার্ভিসের কর্মীদের প্রচেষ্টায় বিকাল থেকে প্রধান সড়কে কিছু যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গাছ পড়ে অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। মূল সড়কেও যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সরল ইউনিয়নে ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মমতাজ বেগম নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।


চন্দনাইশ পৌরসভা, দোহাজারী পৌরসভা, ধোপাছড়ি, সাতবাড়িয়া, হাসিমপুর, বৈলতলী, বরমা, জোয়ারা, কাঞ্চনাবাদ, বরকলসহ আটটি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় গাছপালা বসতবাড়ির ওপর উপড়ে পড়ে বসতবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। আঞ্চলিক সড়ক সহ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে গাছপালা উপড়ে পড়ে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।


চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, ‘উপকূলীয় ছয় উপজেলা সন্দ্বীপ, বাঁশখালী, আনোয়ারা, মীরসরাই, সীতাকুণ্ড এবং কর্ণফুলী উপজেলার ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক চিত্র পেয়েছি। এর বাইরে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, পটিয়ায়ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। 

চট্টগ্রাম পল্লী বিুদ্যৎ সমিতি-১, বাঁশখালী জোনাল অফিসার (ডিজিএম) রিশু কুমার ঘোষ জানান, পুরোপুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে আরও কয়েক দিন লাগতে পারে।


হাতিয়া (নোয়াখালী) : নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সঙ্গে সারা দেশের নৌযান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুরাইয়া আক্তার লাকী। বুধবার সকাল ৭টায় হাতিয়ার চতলার ঘাট থেকে নলচিরা ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যায় বারোআউলিয়া নামের একটি যাত্রীবাহী ট্রলার।


শেয়ার করুন