২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ১০:১১:৩০ অপরাহ্ন
সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে নিত্যপণ্যের বাজার
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-১১-২০২৩
সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে নিত্যপণ্যের বাজার

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে সিন্ডিকেটের কারণে বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে কোনো ভাবেই দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা ছুঁই ছুঁই। এবার বাড়ছে চিনির দামও। প্রতি বস্তা চিনিতে ১০০ টাকার বেশি বেড়েছে। ডিম ও আলু সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে।


সরকার চিনির দাম নির্ধারণ করে দিলেও আমদানিকারক ও আড়তদাররা তোয়াক্কা করছে না। তারা ইচ্ছেমতো চিনির দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। চিনির বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জকেন্দ্রিক কয়েকটি সিন্ডিকেট জিম্মি করে রেখেছে। সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে চিনির বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছে তারা।


এদিকে বাজার থেকে অনেকটা উধাও হয়ে গেছে মোড়কজাত চিনি। চিনির বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা। বাজার নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে। পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১২৫ টাকার বেশি। একইভাবে আদার দামও বাড়ছে কোনো কারণ ছাড়াই। এদিকে চট্টগ্রামে সবজির বাজারে তেজীভাব অব্যাহত আছে। ৮০ টাকার কমে কোনো সবজিই মিলছে না। প্রতি কেজি আলু বিক্রি করা হচ্ছে ৫০ টাকার বেশি দামে। নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় নাভিশ্বাস অবস্থা মধ্য ও নিম্নআয়ের মানুষের।


সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ১২ থেকে ১৫ জনের পেঁয়াজের সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা মূলত পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন। তারা ভারত ও দেশের স্থলবন্দরের বিভিন্ন আমদারিকারকদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখেন। মোবাইল ফোনেই চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়। ২৮ অক্টোবর ভারত সরকার পেঁয়াজের দাম প্রতি টন ৮০০ ডলার নির্ধারণ করে দেয়। 


কিন্তু বাড়তি দামের সেই পেঁয়াজ আমদানির আগেই চট্টগ্রামে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন আমদানিকারকরা। তারা আড়তদারকে সঙ্গে নিয়ে কারসাজি করে দুদিনে কোটি কোটি টাকা মুনাফা তুলে নিয়েছেন। প্রতি কেজিতে ৫০ টাকার বেশি মুনাফা করা হচ্ছে। কয়েক দিন আগেও ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। সোমবার ওই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। কিছুটা নিম্নমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১১৫ টাকার বেশি দামে। ভারত সরকারের নির্ধারণ করা দামে আমদানিকারকরা এখনো পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেননি। কিন্তু বাজারে পেঁয়াজের দাম লাগামহীন হয়ে পড়েছে।


দাম বাড়ার তালিকায় যুক্ত হয়েছে চিনি। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের চিনি ব্যবসায়ীরা বলেন, চিনির ওপর শুল্ক কমানো হলেও তার কোনো প্রভাব নেই বাজারে। উল্টো আরও বাড়ছে চিনির দাম। শুল্ক কমানোর পর ব্যবসায়ীরা চিনির সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। গত তিন দিনে এ বাজারে খোলা চিনির দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা। পাইকারি বাজারে চিনির দাম এখন ১৩২ টাকা।


এ ছাড়া, মসলাজাতীয় পণ্যের দামও বাড়তির দিকে। মানভেদে প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৬০ টাকা, যা সপ্তাহখানেক আগে বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। গত বছরের এ সময় জিরার কেজি ছিল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত সপ্তাহে লবঙ্গের কেজি ছিল ১৪শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা। খাতুনগঞ্জের চিনি ব্যবসায়ী শাহেদুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, আমদানিকারকরা চিনির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। কী কারণে বাড়ানো হয়েছে তা বলতে পারেননি।


বাজারদর : বাজারে শীতের সবজি এলেও দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। কিছুদিন আগেও অধিকাংশ সবজির দাম কেজিতে ৮০ টাকার বেশি ছিল। বরবটি ও শিমের কেজি এখনো ১০০ টাকার বেশি। কিছুটা কমেছে বেগুনের দাম, প্রতি কেজি ৯০ থেকে ১২০ টাকা। পটোল ৮০, লতি ৭০, ধুন্দল ৯০, ঢেঁড়শ ১০০, তিতা করলা ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাছের বাজারেও মিলছে না স্বস্তি। বাজারে প্রতি কেজি রুই ৩০০, কাতলা ৩০০ থেকে ৩২০, শিং ৫৫০, টেংরা ৪৫০, কই ২৫০ ও চিংড়ি ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাবদা ৪০০, টেংরা ৪৫০, শিং ও সমুদ্রের কোরাল ৫০০ টাকা, কই ২৬০ ও পাঙাশ ২৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া মাংসের বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২১৫ থেকে ২২০, কক ৩৪০ ও পাকিস্তানি লেয়ার ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৮০ থেকে ৮০০ ও খাসি ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।


শেয়ার করুন