কিশোরগঞ্জের ভৈরবের শিক্ষিত যুবক সজল গড়ে তুলেছেন কুকুরের খামার। সেই খামার থেকে মাসে তার আয় লাখ টাকা। ছোটবেলা থেকে শখের বসে পোষতেন কুকুর, আর সেই থেকেই বাণিজ্যিকভাবে ২০-২৫ প্রজাতির বিভিন্ন বিদেশি কুকুর লালন-পালন করে বেশ লাভবান তিনি।
ভৈরবের চন্ডিবের কামাল সরকার বাড়ির সন্তান ফোসাহাত রাব্বী সজল। তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে ঢাকার গুলশানে। পড়াশোনা করেছেন ক্যান্টনমেন্টের শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। পরে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে স্নাতকোত্তর করেছেন অস্ট্রেলিয়াতে। সেখান থেকে ফিরে গ্রামের বাড়ি ভৈরবের চন্ডিবের এলাকায় গড়ে তুলেছেন এই কুকুরের খামার। সেই খামারে বর্তমানে বছরে উৎপাদিত হয় ২০-২৫টি কুকুর। দেশব্যাপী ব্যাপক চাহিদা থাকায় ব্যতিক্রমী কুকুরের খামার করে তিনি বেশ লাভবান। তার মালিকাধীন আইকন বাংলা খামারে দেশি সরাইল, জার্মান শেপার্ড, ডোবারম্যান, কাউকেশান শেপার্ড, সাইবেরিয়ান হুস্কি, ফ্রেন্স মাস্তিফ, গ্রেড ডান, বাল মাস্তিফ, সেইন্ট বেনার্ড, ক্যান কর্স, ব্রিটিশ বুলডগ ইত্যাদি প্রজাতির কুকুর উৎপাদিত হচ্ছে। আর এসব তিনি খুবই সুলভমূল্যে বিক্রি করছেন।
অস্ট্রেলিয়া ফেরত খামারি ফোসাহাত রাব্বী সজল জানান, ছোট বয়স থেকে কুকুরপ্রীতি থাকলেও শখের সেই নেশা একদিন পেশায় রূপ নেবে এটা কখনো তিনি ভাবতেন না। তিনি জন্মের পর থেকেই তাদের পরিবারে কুকুরের লালন-পালন দেখেছেন। তাদের ঢাকার বাসায় দেশি-বিদেশি প্রজাতির ৩-৪টি কুকুর সব সময়ই থাকতো। ফলে শিশুকাল থেকেই কুকুরের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি কুকুর লালন-পালনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেন।
শখের বশে বিভিন্ন জাতের কুকুর পালন করতে থাকেন। ২০১৮ সালে তিনি তিনি অস্ট্রেলিয়া থেকে উচ্চতর ডিগ্রি শেষ করে দেশে ফিরে আসেন। তখন চাকরি কথা চিন্তা না করে গড়ে তুলেন কুকুরের খামার। তিনটি কুকুর দিয়ে ঢাকার গুলশানের বাসায় প্রথমে খামার গড়ে তুলেন। সেই খামারের উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে থাকলে তিনি খামারটি গ্রামের বাড়ি ভৈরবে স্থানান্তর করেন। ২০২০ সালে ৬৮টি কুকুর নিয়ে ভৈরবের খামার গড়ে তুলেন। তার খামারে বর্তমানে প্রতি বছর ২০ থেকে ২৫টি কুকুর উৎপাদিত হচ্ছে। সেসব কুকুর অফলাইন-অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। প্রতিটি কুকুর প্রজাতি ভেদে ২০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকায় বিক্রি হয়। এতে মাসে লাখ টাকা আয় হয় বলে তিনি জানান।
ভৈরব পৌরসভার স্থানীয় কাউন্সিলর মোমেন মিয়া জানান, তার গ্রাম ও ওয়ার্ডে এমন একটি ভিন্ন ধরনের খামার গড়ে তোলায় তিনি বেশ আনন্দিত। তার ব্যক্তিগত এবং পৌরসভার পক্ষ থেকে যেকোনো সহযোগিতা তিনি করবেন এ খামারের জন্য। এছাড়া এমন ব্যতিক্রমী খামার অন্য কেউ করতে উদ্যোগী হলে, তাদের সব রকমের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
স্থানীয় মুর্শিদ-মুজিব উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. ইকবাল হোসেন বলেন, আমরা ইতোপূর্বে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগির খামারের কথা শুনেছি, দেখেছি; কিন্তু এই প্রথম কুকুরের খামার দেখলাম। কুকুরের খামার কেউ করবেন, এমনটি কখনো ভাবিনি। এই গ্রামের ছেলে, যিনি কিনা উচ্চতর শিক্ষিত একজন যুবক এই কুকুরের খামার করায় আমরা অবাক হয়েছি। বর্তমানে এ খামারটি আমাদের এলাকার বিনোদন কেন্দ্রের মতোই।