নাগরিক পাকিস্তানের, বহুদিন ধরে বসবাস দুবাইয়ে, ভ্রমণ ভিসায় বেড়াতে এসে চাকরি করছেন বাংলাদেশে। এই ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আমিন নদভী। বন্ধুত্বের মূল্য দিতে তাঁকে অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামে (আইআইইউসি) চাকরির সুযোগ করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য (এমপি) আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী।
ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে এসে চাকরি করার সুযোগ নেই। কোনো বিদেশিকে এখানে চাকরি দিতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) থেকে ওয়ার্ক পারমিট নিতে হয়। পরে কাজের ধরন অনুযায়ী ভিসাও নিতে হয়। কিন্তু এসব নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পাকিস্তানি বন্ধুকে আইআইইউসির ক্যাম্পাস কো-অর্ডিনেটর পদে চাকরি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এমপি নদভী। প্রতি মাসে তাঁর পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে খরচ করা হচ্ছে ৫ লাখ টাকা। যদিও ওই ব্যক্তির ভিসায় ‘চাকরি বারণ’ কথাটা লেখা আছে স্পষ্টাক্ষরে।
যোগাযোগ করে মোহাম্মদ আমিনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘১৯৬৭ সাল থেকে আমরা পারিবারিকভাবে দুবাইতে বসবাস করছি। কিন্তু আমার জন্ম এ দেশেই। দুবাইতে আমাদের অনেক প্রপার্টি আছে। স্বাধীন বাংলাদেশ হওয়ার আগে সবাই তো স্বাভাবিকভাবে পাকিস্তানি পাসপোর্টধারী ছিল। আমার ক্ষেত্রেও তাই।’
ভিসায় চাকরি করার অনুমতি না থাকার পরও কীভাবে চাকরি করছেন—এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার শ্বশুরবাড়ি কক্সবাজারে। তা ছাড়া শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা গড়ে তোলার বিষয়ে ক্লাস নিই। সরকারিভাবে আমার এখানে থাকার অনুমতি আছে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ আমিন নিজেকে আইআইইউসির ক্যাম্পাসের কো-অর্ডিনেটর হিসেবে পরিচয় দেন। কয়েকটি নথিপত্রে দেখা যায়, মোহাম্মদ আমিন নদভীর পাকিস্তানি পাসপোর্ট নম্বর-এবি ৯৪৯০৬১৩। পাকিস্তানি আইডি কার্ডে তাঁর বর্তমান ঠিকানা লেখা আছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আজমান প্রদেশে। আর স্থায়ী ঠিকানা পাকিস্তানের করাচির লান্দি নামক স্থানে। এই আইডি কার্ডের মেয়াদ ২০১৮ সালের ১৫ মার্চ থেকে ২০২৮ সালের ১৫ মার্চ পর্যন্ত।
ওই পাকিস্তানি পাসপোর্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট তিনি করাচি থেকে পাসপোর্ট পান। যার মেয়াদ রয়েছে ২০২৮ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত।
এদিকে তিনি বাংলাদেশে আসার পর সর্বশেষ তাঁর ভিসা নবায়ন করার জন্য সুপারিশ করেন চট্টগ্রাম-১৫ আসনের এমপি আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। চলতি বছরের ৪ মার্চ এমপি নদভী নিজস্ব প্যাডে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগে করা এই সুপারিশে মোহাম্মদ আমিনকে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহপাঠী বলে উল্লেখ করেন। এতে তাঁকে দুই বছরের টিএফ ভিসা প্রদানের জন্য ‘জোর সুপারিশ’ করেন নদভী। এরপর একই বছরের ১০ জুলাই মোহাম্মদ আমিন নিজে ভিসা ফরম পূরণের মাধ্যমে আবেদন করেন। এরপর ঢাকা থেকে গত ২৫ জুন থেকে ২০২৪ সালের ৫ মে পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়ে ১০ মাস ১০ দিনের ভিসা দেওয়া হয় তাঁকে।