২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৪:১০:৫৯ পূর্বাহ্ন
৪ কারণে কমেছে গরুর মাংসের দাম
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-১১-২০২৩
৪ কারণে কমেছে গরুর মাংসের দাম

হাঁকডাক দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে গরুর মাংস, আর সেই মাংস কিনতে দোকানে দোকানে ক্রেতাদের সারি। কদিন আগেও যে মাংস কেজি ৮০০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন তা ৬০০ টাকায় কিনছেন ক্রেতারা। গত রোববার সরেজমিনে রাজধানীর সিপাহীবাগ, রায়েরবাজার, মোহাম্মদপুর, মালিবাগ, রামপুরায় ৬০০ টাকা কেজি দামে মাংস বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে কারওয়ান বাজার ও হাতিরপুলে ৭০০ টাকা দামে মাংস বিক্রি হয়েছে। বাজারে হঠাৎ করে গরুর মাংসের দাম কমল কেন—এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মনে। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খামারি থেকে শুরু করে মাংস বিক্রেতা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে মোটাদাগে চারটি কারণের কথা জানা গেছে।


কারণগুলো সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বাড়তি দামের কারণে সীমিত আয়ের মানুষেরা গরুর মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় বিক্রিও কমে গেছে। তাই দাম কমিয়ে ক্রেতা আকর্ষণের উদ্যোগ নিয়েছেন মাংস বিক্রেতারা। আরেকটি কারণ হলো খামারিদের উদ্যোগ। খামারিদের অনেকেই এখন মধ্যস্বত্বভোগী ঠেকাতে গরুর পরিবর্তনে মাংস বিক্রি করছেন। হাটেও কমেছে গরুর দাম। এ ছাড়া দাম কমার পেছনে চোরাই পথে ভারতীয় গরু ও মাংস আসার কথাও বলা হচ্ছে। অন্যদিকে, ভোক্তারা জানিয়েছেন, মাংসে হাড় ও চর্বির পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছেন বিক্রেতা। এটাও দাম কম রাখার একটি কারণ। 


চোরাই পথে আসছে ভারতীয় গরু ও মাংস 

মাংস ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুসারে, ৫৫০-৬০০ টাকায় মাংস বিক্রির শুরুটা হয়েছিল কামরাঙ্গীরচর এলাকায়। সেখানে একজন খামারি কসাইয়ের কাছে গরু বিক্রির বদলে নিজেই কম দামে মাংস বিক্রি শুরু করেন। তাঁর দেখাদেখি পুরান ঢাকার বংশাল, মালিবাগ ও রায়েরবাজারে মাংস ৬০০ টাকায় বিক্রি শুরু হয়। তবে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখন চোরাই পথে ভারতীয় গরু দেশে ঢোকার কারণে মাংসের বাজারে প্রভাব পড়েছে। তবে দাম নির্ধারণ না করে দিলে মাংসের বাজার আবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন তিনি। 


বদলেছে মানুষের খাদ্যাভ্যাস

প্রাণিজ আমিষের চাহিদা মেটাতে দেশের মানুষের পছন্দের তালিকায় ওপরের দিকেই থাকে গরুর মাংস। বাড়তি চাহিদার কারণে ব্যবসায়ীরা মাঝেমধ্যে দাম নিয়ে নয়ছয় করত। ২০১৮ সালে মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও সিটি করপোরেশন মিলে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে ৩২০ টাকা। ২০২৩ সালে এসে সে দাম দাঁড়ায় ৮০০ টাকা। এভাবে বছর বছর দাম বাড়তে থাকায় অনেক মানুষের খাদ্যতালিকা থেকে গরুর মাংস উঠে যায়, বদল আসে খাদ্যাভ্যাসে। এতে চাহিদাও কমে যায়।


গরুর মাংস সীমিত আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় অনেকে খাদ্যাভ্যাস বদল করেছে বলে মনে করেন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মাংসের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। যার কারণে মানুষ গরুর মাংস খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। খাদ্যাভ্যাস বদলে মানুষ বিকল্প খাবারের দিকে ঝুঁকেছে। এখন দাম কমেছে এটা স্বস্তির খবর। আমরা আশা করব কম দামে যেন মাংসের দাম স্থিতিশীল থাকে।’ 


হাটে কমেছে গরুর দাম

সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরের আইমান অ্যাগ্রো ভেটের মালিক আলী আজম রহমান শিবলী বলেন, আগে গরুর মাংসের মণ ২৫ হাজার টাকা ধরে হাটে গরু বিক্রি হতো। এখন তা ২১ হাজার টাকা ধরে বিক্রি হয়। এটার কারণ হচ্ছে, কোরবানির অনেক গরু অবিক্রীত রয়ে গেছে। এই সময়ে পিকনিক, বিয়েসহ নানা রকম অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। কিন্তু অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এগুলো হচ্ছে না। সব মিলিয়ে বাজারে সরবরাহ অনেক বেশি, কিন্তু চাহিদা কম। বাজারে গরুর খাবারের দামও কিছুটা কমেছে। এসব কারণে গরুর দাম কমেছে। 


দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার দাবি

মাংসের বাজার স্থিতিশীল রাখতে দাম বেঁধে দেওয়ার দাবি উঠেছে আবারও। বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি ইমরান হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার মাংসের বাজারে অভিযান পরিচালনা না করায় ব্যবসায়ীরা খেয়ালখুশিমতো দাম নির্ধারণ করে। এখনো একেক এলাকায় একেক দামে মাংস বিক্রি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে গরুর মাংসের দাম প্রতি কেজি ৬০০ টাকা বেঁধে দেওয়ার জন্য বারবার বলা হলেও, এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এখন মাংসের দাম নির্ধারণ না করলে আবারও দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।


জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় খামারি ও মাংস ব্যবসায়ীদের কিছু নির্দেশনা দিয়েছি। সেগুলো বাস্তবায়ন হলে মাংসের দাম ৫০০-৫৫০ টাকায় চলে আসবে।’


শেয়ার করুন